প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
দেশের মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার বার্তা দিয়ে গত বছরের বাজেটে শুধুমাত্র তাঁদের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প আনার কথা ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু সূত্রের খবর, বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়েও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি তাতে। ফলে প্রকল্পটি বন্ধ করার পথেই কার্যত হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
গত বছরের এপ্রিলে চালু হয় এই মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট। মেয়াদ দু’বছর। একলপ্তে লগ্নি করা যায় ২ লক্ষ পর্যন্ত টাকা। বছরে সুদের হার ৭.৫%। সব থেকে বড় কথা, এতে কিছু কর ছাড়ও পাওয়ার সুযোগ আছে। তবু প্রকল্পে সাড়া এত কম যে, তা বন্ধ না-করে উপায় থাকছে না বলে খবর। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছে, আগামী বছরের মার্চে দু’বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করার পরে সেভিংস সার্টিফিকেট আর চালু থাকবে না। মোটামুটি সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মহিলাদের সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলে এক সময় যে প্রকল্পের ঢালাও প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি, তার এই দশা হল কেন? মাত্র দু’বছর টেনেই কেন তুলে দিতে হচ্ছে সেটি? কেন তাতে সাড়া দিলেন না দেশের মহিলারা?
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, মহিলা সেভিংস সার্টিফিকেট-সহ একাধিক স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকেই যে পরিমাণ লগ্নি সরকারের ঘরে আসবে ভাবা হয়েছিল, তা আসেনি। যে কারণে চলতি বছরের বাজেটে এই খাতে তহবিল তোলার লক্ষ্যমাত্রা সরকার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তিকালীন বাজেটে ধরা হয়েছিল, স্বল্প সঞ্চয় খাতে মোট ৪.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা হাতে আসবে কেন্দ্রের। গত মাসে পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তা কমিয়ে ৪.২০ লক্ষ কোটি করা হয়। গত (২০২৩-’২৪) অর্থবর্ষে এই খাতে সরকারের ঘরে পুঁজি ঢুকেছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম।
লগ্নি উপদেষ্টা নীলাঞ্জন দে বলেন, ‘‘বর্তমানে মহিলারা অনেক বেশি করে মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। কারণ তাতে ঝুঁকি থাকলেও, রিটার্নের হার অনেকটা বেশি। তাই সামগ্রিক ভাবে এই ধরনের ঋণপত্র নির্ভর লগ্নি-মাধ্যম নিয়ে উৎসাহ কমার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, মহিলাদের অনেকে এখন আর ঝুঁকিবিমুখ নন। তাই ওই ২ লক্ষ টাকা মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারে ঢেলে আরও বেশি রিটার্নের চেষ্টা করছেন তাঁরা। এমনকি ওই সব আয়ে নিশ্চয়তা না থাকার ঝুঁকি রয়েছে জেনেও। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, খোদ মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের একাংশকেই এখন শেয়ার-ফান্ডে লগ্নি করার বার্তা দিতে শোনা যায়। তার উপর হালে ব্যাঙ্কের আমানতে সুদ কিছুটা বেড়েছে। কিছু স্বল্প সঞ্চয়েও মেয়াদ শেষে একসঙ্গে বেশি টাকা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে মহিলা সেভিংসের হার বহু মহিলার কাছেই তেমন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
কেন্দ্রের তথ্য বলছে, প্রকল্প চালুর পরে প্রথম ১১ মাসে (২০২৩-এর এপ্রিল থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ২৫ লক্ষ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। লগ্নি ২০,০০০ কোটি টাকা। মহিলা সেভিংস সার্টিফিকেটে লগ্নির নিরিখে প্রথমে মহারাষ্ট্র। দ্বিতীয়, তৃতীয় যথাক্রমে তামিলনাড়ু ও কর্নাটক।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মল সেভিংস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণসম্পাদক নির্মল দাস বলেন, ‘‘প্রকল্পে লগ্নি করতে মহিলাদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখতে পাইনি। বরং রেকারিং-এ করলে দীর্ঘ মেয়াদে একলপ্তে বেশি টাকা মেলে।’’ সূত্রের খবর, এই ধরনের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প জনপ্রিয় করতে এজেন্টদের বড় ভূমিকা থাকে। কিন্তু বেশ কিছু কারণে এজেন্টরাও প্রকল্পের কথা গ্রাহককে বলছেন না। ফলে দেশ জুড়ে লগ্নি পড়ে রয়েছে তলানিতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy