বাংলা-সহ ৩ রাজ্যের দেখানো পথে পেট্রল-ডিজেলের করের উপর করের বোঝা কমিয়ে দাম কমানোর পথে হাঁটতে চাইছে না কেন্দ্র।
মধ্যবিত্তের পকেটে টান ধরিয়ে ক্রমশই বাড়ছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। যদিও দেশের পেট্রোপণ্যের উপর শুল্ক-ছাড়ে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলা-সহ ৩টি রাজ্য। তবে তাতে আমজনতা আদৌ কতটা স্বস্তি পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায় মূলত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির দিকে দায় ঠেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে শুল্ক ছাড়ের দাবিতে এখনই পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। উল্টে, কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, কেন্দ্র-রাজ্য মিলিত হয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে আবগারি শুল্ক কমানোর দাবিকে অগ্রাহ্যই করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র যা-ই বলুক, দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক এবং যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট)কেই দায়ী করছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, আবগারি শুল্ক ও যুক্তমূল্য কর কেন্দ্র কিছুটা কমালে পেট্রোপণ্যের দাম কমতে পারে।
সোমবারও দেখা গিয়েছে, দেশের ৪টি মেট্রো শহরে পেট্রল-ডিজেলের দাম লিটার প্রতি প্রায় ১০০ টাকা। কলকাতায় ১ লিটার পেট্রল কিনতে খরচ করতে হবে ৯১.৭৮টাকা এবং ডিজেলের দাম লিটারপিছু ৮৪.৫৬ টাকা। যদিও পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে ১ টাকা করে সেস কমানোর ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, বর্তমানের পেট্রোপণ্যের মূল্য অনুযায়ী, কেন্দ্র প্রতি লিটার পেট্রলে ৩২.৯০ টাকা ও ডিজেলপিছু ৩১.৮০ টাকা কর এবং সেস নিচ্ছে। কিন্তু, রাজ্য সরকার প্রতি লিটার পেট্রলে ১৮.৪৬ টাকা ও ডিজেলে লিটারপিছু ১২.৫৭ টাকা কর বাবদ পাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল-ডিজেল থেকে বিপুল পরিমাণ কর বাবদ আয় করলেও, দেশের মানুষের জন্য কোনও ছাড় দিচ্ছে না। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আয়ের অল্প পরিমাণ থেকেও রাজ্যের মানুষকে সুরাহা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
দেশের অন্য ৩টি রাজ্যও পেট্রোপণ্যে কর কমিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ করে রাজস্থান। ২৯ জানুয়ারি থেকে জ্বালানীর উপর থেকে যুক্তমূল্য কর কমিয়েছে রাজস্থান সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ওই রাজ্যে সব মিলিয়ে পেট্রোপণ্যের উপর ৩৮ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশ যুক্তমূল্য কর দিতে হবে। অতিমারির সময় পেট্রল-ডিজেলের উপর ৫ টাকা অতিরিক্ত কর বসিয়েছিল অসম সরকার। তবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভোটমুখী অসমে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পেট্রোপণ্যের দাম কমানোর দিকে ঝুঁকেছে মেঘালয়ও। ওই রাজ্যে প্রতি লিটার পেট্রলে ৭.৪০ টাকা এবং ডিজেলে ৭.১০ টাকা করে দাম কমানো হয়েছে। মেঘালয়ে পেট্রোপণ্যের উপর ২ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। পেট্রলে ৩১.৬২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ যুক্তমূল্য কর কমানো হয়েছে। অন্য দিকে, ডিজেলে ২২.৯৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে যুক্তমূল্য কর কমেছে ১২ শতাংশ।
রাজ্যগুলির তরফে এই দাম কমানোর প্রচেষ্টা শুরু হলেও এখনও শুল্ক ছাড়ে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে কেন্দ্রের তরফে সব মিলিয়ে পেট্রল ১৩ টাকা এবং ডিজেলে ১৬ টাকা করে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেল কিনতে ভারতের ১৯.৯ ডলার খরচ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওই আমদানি করা তেলের দাম-সহ যে সমস্ত সংস্থা তা উৎপাদন করে, তাদের ঘাড়েই পেট্রোপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের দায় দাপিয়েছে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ ক্ষেত্রে আঙুল তুলেছেন আজারবাইজান, বাহরাইন, ব্রুনেই, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ওমান, রাশিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং সুদানের মতো ওপেক-প্লাস দেশগুলির দিকে। ধর্মেন্দ্র জানিয়েছেন, ওই দেশগুলিতে জানুয়ারি থেকে তেল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে ‘সমঝোতা’ করেছিল। তবে বাস্তবে তা হয়নি। ওই সময় থেকে তেলের দাম ৩ ডলার প্রতি ব্যারেলে বেড়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ওই পরিস্থিতির পাশাপাশি আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির ফলেও দাম বাড়ছে পেট্রোপণ্যের। পেট্রলের ক্ষেত্রে তা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৯.৯৮ টাকা থেকে ৩২.৯০ টাকা। ডিজেলের জন্য ৭৪ শতাংশ, অর্থাৎ ১৮.৮৩ টাকা থেকে ৩২.৯০ টাকা শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। অন্য দিকে, পেট্রলের উপর ১৫.২৬ টাকা থেকে যুক্তমূল্য কর বেড়ে হয়েছে ২০.৬১ টাকা। ডিজেলের ক্ষেত্রে ৯.৪৮ টাকা থেকে বেড়ে তা হয়েছে ১১.৮০ টাকা। তবে দেশের অন্তত ১৮টি রাজ্যে পেট্রোপণ্যের উপর থেকে যুক্তমূল্য কর কমানো হলেও একই পদক্ষেপ করতে নারাজ কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy