দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে নিয়ন্ত্রক ডিসিজিআই-এর প্রধান ভি জি সোমানি। রবিবার। পিটিআই
চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার কাজ শেষ। দু’দফায় দেশ জুড়ে হয়ে গিয়েছে করোনার টিকার মহড়া বা ড্রাই রান। এই আবহে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কবে থেকে শুরু হবে গণ টিকাকরণের কাজ? আর দেশি না বিদেশি— কোন টিকায় শেষ পর্যন্ত ভরসা রাখবে নরেন্দ্র মোদী সরকার? সরকার এ বিষয়ে
কিছু না বললেও দিল্লির এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া আজ জানিয়েছেন, শুরুতে ব্রিটেনের কোভিশিল্ডকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।
সরকারি ভাবে গণ টিকাকরণ কবে থেকে শুরু হবে, সে বিষয়ে নিরুত্তর কেন্দ্র। তবে জানুয়ারি মাস থেকেই টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। কেন্দ্রীয় সরকার গণ টিকাকরণ শুরুর দিনক্ষণ না জানালেও, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, মকর সংক্রান্তি শেষ হতেই তাঁর রাজ্য-সহ গোটা দেশে শুরু হবে টিকাকরণ অভিযান। ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি। সাধারণত বিজেপি নেতারা মকর সংক্রান্তি না যাওয়া পর্যন্ত শুভ কাজে হাত দেন না। দেখার বিষয় হল, তিথি, নক্ষত্র মেনে চলা বিজেপি নেতাদের সরকার টিকার প্রশ্নেও সংক্রান্তির দিন ক্ষণ মেনে চলেন কি না। ব্রিটেন বা আমেরিকায় ছাড়পত্র মেলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতে ছাড়পত্র পেলেও কত দিনে টিকা দেওয়া শুরু হয়, সেটাই দেখার।
প্রশ্ন উঠেছে, আজ দু’টি টিকাকে ছাড়পত্র দিলেও দেশি না বিদেশি— কোনটিকে অগ্রাধিকার দেবে কেন্দ্র। সরকারের বরাত কে পাবে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রবল রেষারেষি চলেছে সিরাম ও ভারত বায়োটেক সংস্থার মধ্যে। ভারত বায়োটেককে তড়িঘড়ি ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশেষজ্ঞ কমিটির উপরে। কিন্তু ভারত বায়োটেকের অন্যতম সদর্থক দিক হল, এটি স্বদেশি প্রতিষেধক। সম্পূর্ণ দেশীয় ভাবে এই প্রতিষেধকটি তৈরি হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী যে হেতু আত্মনির্ভর ভারতের ডাক দিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন, দুই সংস্থার দৌড়ে পাল্লাভারি দেশীয় টিকা ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের। কারণ, দেশীয় প্রযুক্তির ওই টিকা তৈরিতে ভারত বায়োটেক সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ও পরে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে কোভিশিল্ড টিকা বাজারে ছাড়তে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। কয়েক সপ্তাহ আগে ওই সংস্থায় যান প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ফলে সেই সংস্থাকেও একেবারে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে।
সিরামের কাছে ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে সাত কোটি কোভিশিল্ড টিকা মজুত রয়েছে। এ মাসের মধ্যেই সংখ্যাটা ১০ কোটিতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন এই সংস্থার সিইও আদার পুনাওয়ালা। যার মধ্যে অন্তত অর্ধেক ভারতে ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আদার। অন্য দিকে, ভারত বায়োটেকের ভাঁড়ারে রয়েছে এক কোটি টিকা। কেন্দ্রের একটি সূত্রের মতে, গোড়ার দিকে টিকা সরবরাহ করতে দু’টি সংস্থাকেই বেছে নেওয়া হবে। পরে অন্যান্য প্রতিষেধক যেমন স্পুটনিক ভি, ফাইজ়ার কিংবা জ়াইকোভ ডি বাজারে এলে তা সংগ্রহ করার প্রশ্নে নীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবে সরকার। এমসের ডিরেক্টের রণদীপ গুলেরিয়া আজ জানিয়েছেন, যে হেতু কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় দফার ট্রায়াল এখনও চলছে, সে কারণে ব্রিটেনের কোভিশিল্ড টিকাকে শুরুতে ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছে। ব্রিটেনের করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ভারতে যদি প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কোভ্যাক্সিনকে ব্যবহার করা হতে পারে।
ভারতে প্রথম পর্বে প্রায় ৩০ কোটি দেশবাসীকে গণ টিকাকরণ অভিযানের আওতায় নিয়ে আসতে চলেছে সরকার। প্রথম ধাপে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মীর টিকাকরণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে টিকা দেওয়া হবে প্রায় দু’কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারকে। এঁরা হলেন পুরকর্মী, সেনা-আধা সেনা ও পুলিশ। তৃতীয় ধাপে ৬০ বছরের বেশি বয়সি ২৬ কোটি দেশবাসীর টিকাকরণ হবে। চতুর্থ ধাপে ৫০-৬০ বছর বয়সি যাঁরা হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুসের সমস্যায় দীর্ঘ দিন ভুগছেন, তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। এই সংখ্যাটা প্রায় এক কোটি। এই ৩০ কোটির মধ্যে প্রথম দু’টি ধাপের তিন কোটি ব্যক্তির তালিকা অধিকাংশ রাজ্যের থেকে কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েছে। বাকি যে ২৭ কোটি থাকবেন, ওই বয়স্ক ব্যক্তিদের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হবে। অগস্টের মধ্যে প্রথম ধাপের টিকাকরণ সেরে ফেলতে চায় সরকার। তার পর ধাপে ধাপে বাকি জনতাকে টিকাকরণের আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে। যাঁরা টিকা নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের কো-উইন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
দেশে টিকা দেওয়ার পরিকাঠামো কেমন রয়েছে, মহড়ার মধ্যে দিয়ে ইতিমধ্যেই তা খতিয়ে দেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই দু’টি টিকার জন্য প্রয়োজন ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের দাবি, করোনা প্রতিষেধক রাখার জন্য যে কোল্ড চেন প্রয়োজন, সেই পরিকাঠামো ভারতের কাছে রয়েছে। বর্তমান পরিকাঠামোয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও টিকাকরণের কাজ করা সম্ভব। সব রাজ্যে যাতে দ্রুততার সঙ্গে প্রতিষেধক পৌঁছনো যায়, সে জন্য দিল্লি ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে সংরক্ষণ ভান্ডার তৈরির কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রায়
৭০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী, যাঁরা সরাসরি টিকা দেবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy