—প্রতীকী ছবি
এমন বাজেট নাকি একশো বছরে কেউ দেখেননি কখনও! কোণঠাসা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ বার হাত খুলে খরচ করবে কেন্দ্র। রাজকোষ ঘাটতি মাথাচাড়া দেওয়ার দুশ্চিন্তাকে আপাতত শিকেয় তুলে রেখে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেট কেমন হতে চলেছে, ২০২০ সালের বিদায় বেলায় সে সম্পর্কে এমন এক গুচ্ছ ইঙ্গিত বার বার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নতুন বছরে পা রাখার সময়ে অর্থ মন্ত্রক সূত্রেও স্পষ্ট ইঙ্গিত, অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে বাজেটে দেদার খরচ বাড়াতে তৈরি মোদী সরকার। তাতে আপাতত ঘাটতি কিছুটা বাড়লেও, পরোয়া নেই। বরং পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য যত বেশি সম্ভব খরচই সরকারের পাখির চোখ।
বাজেটের এক মাস আগে মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, নতুন অর্থবর্ষে সরকারের লক্ষ্য চলতি আর্থিক বছরের তুলনায় অন্তত ১৫% বাড়তি খরচ। কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে মূলত পরিকাঠামোয় বিপুল অর্থ ঢালা হবে। অতিমারির কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতেও বরাদ্দ হবে বাড়তি অর্থ।
সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালার প্রশ্ন ছিল, কোভিডের টিকা কেনা ও তা বিলির জন্য কেন্দ্রের কাছে ৮০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে তো? মন্ত্রক সূত্রের খবর, বাজেটে ওই খাতে এককালীন ৮০ হাজার কোটিই বরাদ্দ হতে পারে।
গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো ১০টি শিল্পক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে ইতিমধ্যেই উৎসাহ ভাতা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। জুনের শেষে তা চূড়ান্ত হতে পারে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই খাতে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে রাখা হতে পারে। সড়ক, সেতুর মতো পরিকাঠামো নির্মাণে মূলধনী খরচ বাবদ সম্ভাব্য বরাদ্দের অঙ্ক প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা।
অথচ আজই মন্ত্রকের পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, নভেম্বরের শেষে রাজকোষ ঘাটতি ১০.৭৫ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা পুরো ২০২০-২১ সালের লক্ষ্যমাত্রার ১৩৫%। কোভিড-লকডাউনের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে দীর্ঘ দিন তালা পড়ে থাকার দরুন কর বাবদ সরকারের আয় কমে যাওয়াই যার মূল কারণ। একই কারণে জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেনার বোঝাও এপ্রিল-জুনের তুলনায় ৫.৬% বেড়ে প্রায় ১০৭ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
কিন্তু এর পরেও মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবর্ষেও বাজেটে যে ৩০.৪২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল, শেষমেশ তার থেকে অনেক বেশি খরচ করা হবে। অর্থাৎ, ঘাটতিও হবে লক্ষ্যমাত্রার (৩.৫%) থেকে অনেক বেশি।
লকডাউনের পরে অর্থ মন্ত্রক সরকারি খরচে রাশ টেনেছিল। তার আওতায় ছিল ৮০টি মন্ত্রক-দফতর। সেই বিধিনিষেষও এ বার শিথিল করা হচ্ছে। সাধারণত প্রতি অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) খরচে রাশ টানা হয়। মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, এ বার তা হচ্ছে না। বরং লক্ষ্য, অর্থনীতিতে বাড়তি টাকা ঢালা।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসু-সহ বিশ্বের প্রথম সারির বহু অর্থনীতিবিদ এই খরচ বাড়ানোর দাওয়াই দিলেও, আগে তা কানে তোলেনি কেন্দ্র। তাহলে এখন কেন এই পরিবর্তন?
মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, লকডাউনের ধাক্কায় এপ্রিল-জুনে জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছিল প্রায় ২৪%। জুলাই-সেপ্টেম্বরে হাল কিছুটা শোধরালেও ৭.৫% সঙ্কোচন হয়েছে। বাজেটের প্রস্তুতি-পর্বে শিল্পপতি, অর্থনীতিবিদ-সহ সকলেই নির্মলাকে এক সুরে বলেছেন, ঘাটতির কথা ভুলে খরচ বাড়ানো ছাড়া গতি নেই। বিশেষত যেখানে মোদী সরকার প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক দাওয়াই ঘোষণা করলেও, তাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ খুব সামান্য বলে অভিযোগ। প্রতিষেধক আসার মুখে খরচ বাড়ানো হবে বলে আগে জানিয়েছিলেন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনও। তবে ঘাটতির পরিমাণ দেখে শেয়ার বাজার যাতে মুষড়ে না-পড়ে, সে জন্যই অর্থমন্ত্রী আগেভাগে ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন বলে ধারণা অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy