ফাইল চিত্র।
পেগাসাস-কাণ্ডে তদন্ত ও তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত তিন সপ্তাহ ধরে সংসদ অচল করে রেখেছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে অনগ্রসর শ্রেণি চিহ্নিত করার ক্ষমতা রাজ্যের হাতে তুলে দিতে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে বিরোধী শিবিরকে পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের ধারণা, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও বিরোধী দলের পক্ষেই এর বিরোধিতা করা সম্ভব হবে না। এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাজ্যগুলিকে নিজেদের মতো ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা দিতে সংবিধানের ১২৭তম সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশ করা হবে। তা সমর্থনের জন্য সব দলের কাছে আর্জি জানাচ্ছি। কংগ্রেস, তৃণমূল বা শিবসেনার ক্ষমতা থাকলে এর বিরোধিতা করে দেখাক!’’
সোমবার থেকে সংসদে বাদল অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ শুরু। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সেই সময়ে এই বিল পাশ করিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা হচ্ছে। এক, মরাঠাদের সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, তা দূর করা। দুই, ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজ্যের হাতেই তাদের চিহ্নিত করার ক্ষমতা দিয়ে উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে অনগ্রসর শ্রেণিকে বার্তা দেওয়া।
উত্তরপ্রদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ ওবিসি। সেই ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে সম্প্রতি ডাক্তারি পড়ায় ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশ থেকে আধ ডজন ওবিসি নেতাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছে। বিজেপির অঙ্ক হল, এই সংবিধান সংশোধনী বিলে ওবিসিদের ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। বিরোধীদের পক্ষেও রাজনৈতিক ভাবে এই বিল আটকানো মুশকিল। তবে তারা এখনই নিজেদের হাতের তাস দেখাতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, সরকার আগে বিল পেশ করুক। সূত্রের খবর, সোমবার সকালে বিরোধী দলনেতাদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিন সপ্তাহ সংসদে অচলাবস্থা চললেও হট্টগোলের মধ্যেই মোদী সরকার একের পর এক বিল পাশ করিয়ে চলেছে। তৃণমূল একে ‘পাপড়ি চাট বিক্রির’ সঙ্গে তুলনা করেছে। কিন্তু সংবিধান সংশোধনী বিল হট্টগেলের মধ্যে পাশ করানো সম্ভব নয়। লোকসভা ও রাজ্যসভা—সংসদের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে হয়। ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়া উপস্থিত সাংসদদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনও জরুরি।
কেন এই সংবিধান সংশোধনী বিলের প্রয়োজন হল?
মে মাসে মহারাষ্ট্রে মরাঠাদের অনগ্রসর শ্রেণির তকমা দিয়ে সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৬ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয়। কারণ, এর ফলে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য আসন সংরক্ষণ ৫০ শতাংশর সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। একই সঙ্গে, সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের মধ্যে তিন বিচারপতিই রায় দেন, সংবিধানের ১০২তম সংশোধন করে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য জাতীয় কমিশন তৈরির পরে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও রাজ্যে অনগ্রসর শ্রেণি চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু অন্য দুই বিচারপতির মত ছিল, কমিশন তৈরি হলেও রাজ্যের ক্ষমতা চলে যায় না।
মোদী সরকার এ বার সংবিধানের ১২৭তম সংশোধনী বিল নিয়ে এসে স্পষ্ট করতে চাইছে, রাজ্য সরকারও কোনও শ্রেণিকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করতে পারবে। সেখানে জাতীয় কমিশনের অনুমতি নেওয়ার দরকার হবে না। রাষ্ট্রপতির হাতে যেমন ক্ষমতা ছিল থাকবে। তেমনই রাজ্যের হাত থেকেও ক্ষমতা চলে যাবে না। রাজ্যের ওবিসি তালিকা মুছে গেলে প্রায় ৬৭১টি ওবিসি সম্প্রদায় চাকরি, পড়াশোনায় সংরক্ষণের সুবিধা হারাত। বিজেপির ওবিসি নেতারাই শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, হাতে ক্ষমতা থাকলে, যে কোনও রাজ্য সরকার নতুন কোনও সম্প্রদায়কে ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা পাইয়ে দিতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy