প্রতীকী ছবি।
হাসপাতালের ঘর ভাড়ায় জিএসটি চাপানোয় চিকিৎসার খরচ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আইসিইউ ছাড়া হাসপাতালের যে সব ঘরের ভাড়া ৫ হাজার টাকার বেশি, সেখানে ৫ শতাংশ জিএসটি চাপতে চলেছে। অর্থাৎ, ৫ হাজার টাকা হাসপাতালের ঘর ভাড়া হলে রোগীকে ৫,২৫০ টাকা মেটাতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্পোরেট জগত মনে করছে, এর ফলে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসার খরচ বাড়বে।
উল্টো দিকে মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রকের দাবি, হাসপাতালে দৈনিক ৫ হাজার টাকার বেশি দামের ঘরে সাধারণত ধনীরাই চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। সেখানে ৫ শতাংশ জিএসটি চাপলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার খরচ বাড়ার কথা নয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির শহরের হাসপাতালে এমন ঘরই খুব কম রয়েছে, যার ভাড়া ৫ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার খরচের ‘প্যাকেজ’-এর মধ্যেই হাসপাতালের ঘর ভাড়া ধরা থাকে। ঘর ভাড়ায় জিএসটি চাপানো হলেও, কাঁচামালে মেটানো জিএসটি-তে ছাড় বা ‘ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট’ মিলবে না। ফলে চিকিৎসার খরচে করের বোঝা বেড়ে যাবে। তা সাধারণ মানুষকেই মেটাতে হবে। রোগীর স্বাস্থ্য বিমা করানো থাকলে বিমা সংস্থাগুলির সিন্দুক থেকে আরও বেশি অর্থ খরচ হবে। কিন্তু হাসপাতালগুলি যদি চিকিৎসার খরচের প্যাকেজ থেকে ঘর ভাড়া বাদ দিয়ে দেয়, তা হলে কী ভাবে স্বাস্থ্য বিমার টাকা মিলবে, তা-ও স্পষ্ট নয়।
গত সপ্তাহে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে হাসপাতালের ৫ হাজার টাকার বেশি দামের ঘরে ৫ শতাংশ জিএসটি চাপানোর সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মহলের আশা ছিল, স্বাস্থ্য বিমা ও জীবন বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে কমানো হবে। স্টেট ব্যাঙ্কের এসবিআই রিসার্চ-এর রিপোর্টেও কিছু দিন আগে সুপারিশ করা হয়, যখন দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষই বিমার আওতাভুক্ত, জিডিপি-র মাত্র ৪.২ শতাংশ বিমার প্রিমিয়ামে খরচ হয়, তখন বিমার প্রিমিয়ামে ১৮ শতাংশ জিএসটি আদায় করা কোনও কাজের কথা নয়। এ ক্ষেত্রে জিএসটি কমিয়ে ৫ শতাংশ বা শূন্য করা হোক। কিন্তু জিএসটি পরিষদে আলোচনার আগেই এই সুপারিশ খারিজ হয়ে যায়। তার বদলে হাসপাতালের দামি ঘর ভাড়ায় জিএসটি চাপানো হয়।
বণিকসভা ফিকি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রককে চিঠি লিখে আপত্তি তুলেছে। বণিকসভা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্পোরেট জগতের তরফ থেকে অর্থ মন্ত্রকের কাছে এ বিষয়ে দরবারও করা হবে। কংগ্রেস কটাক্ষ করেছে, এ জন্য আবার ফিকি-র কর্তাদের বাড়িতে ইডি হানা দেবে না তো! কংগ্রেসের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় হিরের উপরে জিএসটি মাত্র ১.৫ শতাংশ। কিন্তু হাসপাতালের ঘর ভাড়া থেকে আটা, পনির, দইয়ে ৫ শতাংশ জিএসটি!
অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব সচিব তরুণ বজাজ আগেই বলেছেন, যিনি ৫ হাজার টাকা হাসপাতালের ঘর ভাড়া দিতে পারেন, তিনি বাড়তি ২৫০ টাকাও দিতে পারবেন। সেই রাজস্ব আয় গরিবদের জন্যই সরকার খরচ করবে। তাঁর প্রশ্ন, আইসিইউ বাদ দিলে হাসপাতালে ৫ হাজার টাকার বেশি দামের ঘরের সংখ্যা খুবই সামান্য। কিন্তু শিল্প মহলের বক্তব্য, হোটেলের ঘর ভাড়া ও হাসপাতালের ঘর ভাড়া এক নয়। মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসার খরচ বাড়বে। এখনও ৬২ শতাংশ রোগীকে নিজের পকেট থেকেই হাসপাতালের খরচ মেটাতে হয়। ফিকি-কর্তা গৌতম খন্না আগেই বলেছেন, হাসপাতালগুলি যখন এ ক্ষেত্রে কর ছাড় পাবে না, তখন রোগীদের উপরেই করের বোঝা চাপিয়ে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy