—প্রতীকী ছবি।
দেশের স্কুলপড়ুয়াদের আইডি নম্বর তৈরির প্রক্রিয়া চালু করতে নড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, অভিভাবকদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি জোগাড়ের কাজ শুরু করতে। অটোমেটেড পার্মানেন্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রি বা অপার নম্বর তৈরির নীতিগত ঘোষণা হয়েছিল আগেই। এ বার বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অপার নম্বর যুক্ত থাকবে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পরিষেবা ডিজিলকারের সঙ্গে। পড়ুয়াদের যাবতীয় শিক্ষাগত রেকর্ড— পরীক্ষার নম্বর, ভর্তির নথি, বৃত্তির নথি, সরকারি সাহায্যের নথি— অপার নম্বর দিয়ে সার্চ করলেই দেখা যাবে। এর ফলে দেশের ৩০ কোটি স্কুলপড়ুয়ার ব্যক্তিগত শিক্ষা-রেকর্ড যেমন কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পরিষেবায় নথিভুক্ত থাকবে, তেমনই এর মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক শিক্ষার বিকাশ এবং স্কুলছুটের হারও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
তবে শিক্ষা জগতে এই অপার-প্রকল্প নিয়ে অনেক প্রশ্নও আছে। আধার কার্ড এবং তথ্যসুরক্ষা নিয়ে যে সব প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠেছে, সেই একই প্রশ্ন অপার-এর ক্ষেত্রেও থাকছে। এই বিশাল তথ্যভান্ডারের সুরক্ষা কতখানি নিশ্চিত করা যাবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকেই। বিশেষত এখানে যেহেতু শিশুদের তথ্য জড়িত, তাই ভয়ও বেশি। শিশুরা রাষ্ট্রীয় নজরদারির আওতায় পড়বে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। তার পাশাপাশি, শিক্ষাগত যোগ্যতা মাপার এই ডিজিটাল পদ্ধতি এমন এক প্রমিতকরণ বা স্ট্যান্ডার্ডাইজ়েশনের জন্ম দেবে, যা বাঞ্ছিত নয় বলে অনেকের মত।
এখনও অবধি খাতায়-কলমে অপার নম্বরের বিষয়টি ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, কালে-দিনে বিষয়টা বাধ্যতামূলকই দাঁড়িয়ে যাবে। আমদাবাদের শিক্ষাবিদ কিশোর দারাক যেমন বলছেন, অপার এবং আধার যোগ করার যে প্রস্তাব রয়েছে, তা আপত্তিকর। বেসরকারি সংস্থাগুলি এই তথ্যের অপব্যবহার করতেই পারে। দারাকের কথায়, ‘‘তথ্য সুরক্ষিত থাকবেই, এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তা ছাড়া আধারের সঙ্গে অপার সংযুক্ত করলে সেটা আখেরে বাধ্যতামূলকই হয়ে দাঁড়াবে। আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং শিক্ষার অধিকার আইন কিন্তু সে ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হবে।’’ অপার যাদের আছে আর যাদের নেই, তাদের মধ্যেও বৈষম্য দেখা দেবে বলে আশঙ্কা দারাকের। তবে ন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজি ফোরাম-এর চেয়ারম্যান অনিল সহস্রবুদ্ধের দাবি, অপার ঐচ্ছিকই থাকবে। আধার নম্বর চাওয়া হচ্ছে শুধু তথ্য যাচাইয়ের জন্য, যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়।
শিক্ষক মহলের সকলেও অবশ্য খুশি নন। মহারাষ্ট্রের স্কুল প্রিন্সিপাল সমিতির মুখপাত্র মহেন্দ্র গণপুলে যেমন বলছেন, অভিভাবকদের সম্মতি সংগ্রহের কাজ শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপলে মুশকিল। এমনিতেই স্কুলে লোকাভাব। তার মধ্যে এই জাতীয় বাড়তি কাজের বোঝা চাপানো উচিত নয়। গণপুলের মন্তব্য, ‘‘সরকারকে কেউ কিছু পরামর্শ দিলেই সরকার সেটা করবে বলে লাফিয়ে পড়ে। যদি করতেই হয়, সরকার তার নিজস্ব কর্মিবর্গ দিয়ে কাজ করাক। আমরা এমনিতেই কাজের ভারে নুয়ে আছি।’’ প্রসঙ্গত মহারাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই শিক্ষা কমিশনারকে চিঠি দিয়ে স্কুলে স্কুলে অপার-এর জন্য অভিভাবকদের সম্মতি সংগ্রহের কাজ শুরু করতে বলেছে। ১১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের পাঠানো চিঠির কথাও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রকের চিঠিতে পরিষ্কার লেখা আছে, আধার নম্বরের ভিত্তিতেই অপার নম্বর তৈরি হবে। তার জন্য অভিভাবকদের সম্মতি প্রয়োজন। তার জন্য ১৬ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে স্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করতেও বলা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের স্কুল প্রিন্সিপাল সমিতির আর এক মুখপাত্র পাণ্ডুরঙ্গ কেনগর বলেন, ‘‘সবেমাত্র স্কুলগুলো ইউডিআইএসই (ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন)-তে পড়ুয়াদের আধার নম্বর যোগ করার কাজ শেষ করল। এখনই আবার নতুন কার্ডের কাজ শুরু করতে বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে চাওয়া হচ্ছে, ইউডিআইএসই-তে পড়ুয়াদের উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ, ওজনের তথ্যও দিতে। আমরা পড়াব কখন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy