—ফাইল চিত্র।
করোনার দুর্বিপাকের মধ্যেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নোটিস গেল কত্থকের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী বিরজু মহারাজের কাছে। তিনি একা নন— চিত্রশিল্পী যতীন দাস, সন্তুরবাদক ভজন সোপোরি, মোহিনীঅট্টম শিল্পী ভারতী শিবাজী-সহ মোট ২৭ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্য বাসা দেখে নিতে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এমিনেন্ট আর্টিস্ট কোটা’য় এই শিল্পীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি পেয়েছিলেন মাসিক ‘লাইসেন্স ফি’-এর বিনিময়ে, যা বাজারের মূল্য থেকে অনেকটাই কম। কুড়ি-তিরিশ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে এখানে থেকে তাঁরা কাজ করে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এঁদের থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর তাঁদের ‘এক্সটেনশন’ দেওয়া হবে না। এর বিহিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন বিরজু মহারাজ। তিনি আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করা সিদ্ধান্ত নেবেন। ৪২ বছরের আস্তানা গোটাতে হবে না।
নোটিস পাওয়া শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা ৮৩ বছরের বিরজু মহারাজই। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি রয়েছেন শাহজাহান রোডে। এশিয়াড ভিলেজে যতীন দাস থাকেন ১৯৮৮ সাল থেকে। গোটা ঘটনায় দুঃখিত বিরজুর বক্তব্য, “গোটা দেশে তথা দিল্লিতে যখন অতিমারির প্রবল প্রকোপ চলছে, সেই সময় আমার মতো বয়স্ক মানুষ কী ভাবে বাড়ি খুঁজতে বেরোবে? উচ্ছেদের চিঠি যাঁরা পাঠিয়েছেন তাঁদের আর একটু সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল।’’ যতীন দাস ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছেন, “আমার দ্বিতীয় কোনও বাসস্থান নেই। এখন রাতারাতি যাব কোথায়? এখানেই তো আমার সব কাজ ছড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্রের যে কোনও সামাজিক প্রকল্প বা ত্রাণকার্যে আমরা নিঃশর্তে পাশে থাকি। বিনা পারিশ্রমিকে সরকারের শিল্প-সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে কাজ করি। আজ আমাদের এ ভাবে বিপদে ফেলে দেওয়া হল!’’
আরও পড়ুন: ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করতে বলল রাষ্ট্রপুঞ্জও
তবে এই বাড়িগুলি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে সরকারের যে নিয়ম, তাতে মেয়াদ শেষে এঁদের উঠতে বলাটা বেআইনি নয় বলেই দাবি করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে। কিন্তু শিল্পীদের বক্তব্য, প্রশ্নটি আইনের নয়, সম্মানের। প্রথমত, সরকারের তরফে মেয়াদ বাড়ানোই হয়ে এসেছে বরাবর। তাতেই শিল্পীরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাইসেন্স ফি-ও বেড়েছে। সেটাও দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, এত বছর ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের নাম উজ্জ্বল করার পর এবং সাংস্কৃতিক সব কাজে কেন্দ্রের পাশে থাকার পর উচ্ছেদের নোটিস গভীর অপমানজনক বলে তাঁদের মত। সর্বোপরি এই অতিমারির মধ্যে হঠাৎ এই ভাবে বিপদে ফেলাটাও মর্মান্তিক বলে মনে করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘সুস্থ’ হয়েও হঠাৎ মৃত্যু, ১৪ দিনেও নিরাপদ নয়
বিরজু মহারাজের মতে, যাঁরা পঞ্চাশ-ষাট বছর ধরে শিল্পচর্চা করে দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করুক সরকার। সেই তালিকাভুক্ত শিল্পীদের যত্ন নেওয়া ও দেখভাল করাটা কেন্দ্রের দায়িত্ব হোক।
কুচিপুড়ি নৃত্যশিল্পী বনশ্রী রাও (গুরু জয়রাম রাওয়ের স্ত্রী, যাঁর নামে রয়েছে বাড়ি) জানাচ্ছেন, এমন ভাবে সরকার চিঠি দিয়েছে যাতে মনে হচ্ছে, তাঁরা বেআইনি ভাবে বাড়ি দখল করে রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “প্রত্যেক বারই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে পুরনো বকেয়া হিসেবে (লাইসেন্স ফি-বৃদ্ধির কারণে) গত চার বছরের ৯ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। দফায় দফায় তা দিয়ে দিয়েছি। তা সত্ত্বেও আজ আমাদের সঙ্গে জবরদখলকারীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy