কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই
ছ’বছরের পরিশ্রম, ১৬০০ কোটি টাকা খরচ, হেনস্থা ও বহু মৃত্যুর নিটফল— কার্যত বাতিল হতে বসেছে অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকা। গত কাল রাজ্যসভায় সেই ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, গোটা দেশের সঙ্গেই অসমে নতুন করে এনআরসি হবে। যার সূত্র ধরে অসমের অথর্মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও জানান, রাজ্যে হওয়া এনআরসি পুরোপুরি বাতিল করে সারা দেশের সঙ্গে অসমেও নতুন করে এনআরসি হোক।
সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে অসমে হওয়া এনআরসির-র চূড়ান্ত তালিকায় বাদ যান ১৯ লক্ষ মানুষ। যাদের মধ্যে অন্তত ১৩-১৪ লক্ষই হিন্দু। তালিকা প্রকাশ হতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক দল বিজেপি। ওই এনআরসি সঠিক নয় সেই যুক্তিতে সরব হন হিমন্তরা। এনআরসি-তে বেশির ভাগ হিন্দুদের নাম বাদ পড়ায় ভোট ব্যাঙ্কে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানায় অসম বিজেপিও। চাপ বাড়াচ্ছিল সঙ্ঘ পরিবারও। এই পরিস্থিতিতে গত কালই অসমে নতুন করে এনআরসি হবে বলে বিতর্ক তৈরি করেন অমিত। সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছে, এনআরসি মামলার মূল আবেদনকারী অসম পাবলিক ওয়ার্কসও। তাদের দাবি ছিল সব তথ্য ফের যাচাই করা হোক। এই মামলার পরের শুনানি ২৬ নভেম্বর। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা বলেন, ‘‘১৬০০ কোটি টাকা খরচের সম্পূর্ণ অডিটও হোক।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, অসমে এনআরসি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। অসম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে এনআরসি তৈরির ভিত্তিবর্ষ বলে ধরা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের সব রাজ্যে যখন এনআরসি-র কাজ শুরু হবে তখন অতীতের একটি নির্দিষ্ট দিনকে ধরে তার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হবে। কোন বছরের কোন তারিখের ভিত্তিতে ওই কাজ শুরু হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিবর্ষ হচ্ছে না। তাই মন্ত্রকের যুক্তি, এক দেশে দু’টি ভিত্তিবর্ষ হতে পারে না। তাই গোটা দেশে যে ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে, সেটির হিসাবে অসমেও নতুন তালিকা তৈরি করা হবে।
প্রতিবাদ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে মিছিল গুয়াহাটিতে। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
বিরোধীদের মতে, এনআরসি-তে হিন্দুরা বাদ যাচ্ছেন বলে যে প্রচার শুরু হয়েছে তা আটকাতেই ১৬০০ কোটি টাকা জলাঞ্জলি দিতে চান মোদী-শাহেরা। কিন্তু প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে করা তালিকা এ ভাবে বাতিল করা কি শীর্ষ আদালতের অবমাননা নয়। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার পরে কী হবে তা নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি তারা। আইনের সেই ফাঁক দেখিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হওয়া এনআরসি কার্যত বাতিল করতে চাইছেন অমিতরা।
কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদারের মতে, ‘‘নোট বাতিল, জিএসটির পরে এনআরসি বাতিল বিজেপির তুঘলকি শাসনের আরও এক নজির। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হল, কোটি কোটি মানুষ হয়রান হলেন, বহু আত্মঘাতী হলেন। সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এনআরসি বাতিল অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা।’’ বহ্মপুত্র উপত্যকা নাগরিক সমাজের উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরীর মতে, রাজনৈতিক দলের একাংশ চেয়েছিল বেশি করে মুসলিমের নাম বাদ পড়ুক। উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়াতেই হয়তো এনআরসি বাতিল করার কথা বলা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy