পাটনা রেল স্টেশনে পরীক্ষা দিতে বাংলার পরীক্ষার্থীরা। —নিজস্ব চিত্র।
নিজেদের রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দীর্ঘ দিন বন্ধ। তাই বাংলার ছেলেমেয়েরা ‘বিহার সেকেন্ডারি টিচার এবিলিটি টেস্ট’ দিতে পাড়ি দিচ্ছেন পাশের রাজ্যে। পরীক্ষার আগের রাতে, সোমবার পটনা স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকা যুবক-যুবতীদের কাছে রাজ্যে চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ শোনা গেল।
২০১৬ সালে এসএসসি-র মাধ্যমে রাজ্যে শেষ বার স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগও দীর্ঘদিন বন্ধ। এ দিকে প্রতি বছর রাজ্যে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে স্নাতকোত্তর হচ্ছেন। বিএড উত্তীর্ণের সংখ্যাও কম নয়। তাই এক সময়ে বিহার থেকে বাংলায় নানা পেশার টানে ছেলেমেয়েরা যেমন আসত, এখন তার উল্টো স্রোত।
সূত্রের দাবি, বিহারের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বাংলা থেকে বেশ কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। ১৮ মে থেকে শুরু হওয়া নবম-দশম শ্রেণির টেট শেষ হচ্ছে আজ বুধবার। ১১ জুন থেকে শুরু হবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির টেট। তাতেও বাংলার অনেকে আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার ছিল বিহারের স্কুলে বাংলা ভাষার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। সোমবার সন্ধ্যায় পটনা জংশন স্টেশনে নেমে দেখে মনে হল যেন বাংলার কোনও রেলস্টেশন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে মালদহ, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, হাওড়া— কোন জেলা থেকে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে আসেনি! স্টেশনের ফুটব্রিজ, প্ল্যাটফর্ম উপচে ভিড় শৌচাগারের সামনে পর্যন্ত। কেউ বা কম টাকায় রাত্রিযাপনের ঠাঁইয়ের খোঁজ করছেন।
চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্টেশনের বাইরে হোটেল ও লজগুলিতে রাত্রিযাপনের জন্য মাথা পিছু শয্যা ভাড়া চাইছে ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকা বাঁচাতে কেউ কেউ স্টেশনেই সহ-পরীক্ষার্থীর সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রাত্রিযাপন করছেন। কেউ আবার দীর্ঘ ট্রেন যাত্রার ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য লজে গিয়েই উঠছেন।
পুরুলিয়ার আড়শা থেকে পরীক্ষা দিতে আসা সন্তোষ কুমার বলেন, ‘‘লজে অনেক ভাড়া। তাই বাইরে হোটেলে রুটি খেয়ে স্টেশনেই রাট কাটাব বলে ঠিক করেছি। এটাই কপাল। আমাদের রাজ্যে পরীক্ষা হলে জেলাতেই কোনও কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যেতাম। এতগুলো টাকা খরচ করে বিএড করেছি। তাই বাড়িতে বসে না থেকে পরীক্ষা দিতে বিহারেই এলাম।’’
সাঁতরাগাছি থেকে দাদার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসা এক তরুণী জানান, স্টেশনে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। ট্রেনের টিকিট রিজ়ার্ভেশন করে যাতায়াত, লজে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে মোটা টাকা বেরিয়ে গিয়েছে। নিজের রাজ্যে নিয়মিত পরীক্ষা হলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
মালদহের তরুণী মনীষা সরকার বলেন, ‘‘শিক্ষকতার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করেছি। রাজ্যে পরীক্ষা বন্ধ। অথচ বয়স বাড়ছে। তাই ভোগান্তি সত্ত্বেও ভিন্ রাজ্যে পরীক্ষা দিতে আসতে হল।’’
হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর এই দুর্ভোগ সমাজমাধ্যমেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। এক নেটিজেনের মন্তব্য, ‘‘বাংলার মেধা বিহারের মাটিতে গড়াগড়ি খায়! আর বাংলার মা-বোনেরা তো লক্ষ্মীর ভান্ডার পায়।’’ পাল্টা মন্তব্যও আসতে থাকে, ‘‘বিরোধীদের মামলাতেই তো আটকে রয়েছে হাজার হাজার চাকরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy