তাইল্যান্ডে রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজে পাশাপাশি বসতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মঞ্চ ‘বিমস্টেক’-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তাইল্যান্ডে গিয়েছেন মোদী। ইউনূসও গিয়েছেন সেখানে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে ‘বিমস্টেক’-এর সচিবালয়। তাতে দেখা যাচ্ছে মোদীর পাশেই বসার ব্যবস্থা হয়েছে ইউনূসের।
ঘটনাচক্রে, দুই পড়শি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে বর্তমানে কিছুটা টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় নেন ভারতে। তার পর থেকেই চাপানউতর শুরু হয় দুই দেশের। যদিও ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েই জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে মসৃণ রাখতেই আগ্রহী দুই পক্ষ। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের পরামর্শে না-খুশ ঢাকা। পাশাপাশি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর দাবিতেও বিভিন্ন সময়ে সরব হয়েছে তারা।
সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন ইউনূস। সেখানে নিজেদের দেশে চিনা বিনিয়োগ আনতে ইউনূস ভারতের প্রসঙ্গও তুলে আনেন। বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের ‘অভিভাবক’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি। চিনকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার আর্জি জানান তিনি। সেই সূত্রেই বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। ওই সময়ে ইউনূস বলেন, “সমুদ্রের (বঙ্গোপসাগর) একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “ভারতের পূর্ব দিকের সাত রাজ্যকে বলা হয় সাত বোন। এগুলি স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। এদের সমুদ্রে পৌঁছোনোর কোনও পথ নেই।”
আরও পড়ুন:
ইউনূসের ওই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে ভারতে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইতিমধ্যে এই নিয়ে বিঁধেছেন ইউনূসকে। এই বিতর্কের আবহেই বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘতম উপকূলরেখা রয়েছে ভারতেরই। বিদেশমন্ত্রী আরও জানান, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স’ (আসিয়ান) গোষ্ঠীর দেশগুলির মধ্যে সমন্বয়ও রক্ষা করে ভারত। বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বিদেশমন্ত্রী জানান, এই যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল হিসাবে উঠে এসেছে উত্তরপূর্ব ভারত।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে তাইল্যান্ডে রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজে দেখা যায়, মোদীর পাশেই ইউনূসের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অন্য পাশে বসেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তাইল্যান্ডে ‘বিমস্টেক’-এর পার্শ্ববৈঠকে মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান ইউনূস। বাংলাদেশের বিদেশসচিব মহম্মদ জসীম উদ্দিন বুধবারও জানিয়েছেন, তাঁরা পার্শ্ববৈঠকের বিষয়ে আশাবাদী। ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, শুক্রবার মোদীর সঙ্গে ইউনূসের আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে।