আজও উত্তপ্ত দিল্লি। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
মঙ্গলবার সকালেও নতুন করে তেতে উঠল রাজধানী দিল্লি। গতকালের থেকে বেড়ে এ দিন মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১০। মৌজপুরে এ দিন এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয় বলে জানা গিয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় জিটিবি হাসপাতালে আরও ৩০ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের দেখতে দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তাঁর ডেপুটি মণীশ সিসৌদিয়া।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে গত তিন দিন ধরেই ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে রাজধানীতে। এ দিন সকালে ফের মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীতে ফের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরস্পরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও। দুপুরে গুলিও চলে সেখানে। এ দিন মৌজপুরে একটি ই-রিকশায় ভাঙচুরও চালানো হয়। রিকশার যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্রও লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)। উদ্ধার হয় কার্তুজের খোল। এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করে তারা।
তবে বেলা যত বাড়তে থাকে, নতুন করে ততই বাড়তে থাকে অশান্তি। দুপুর ২টো নাগাদ ভজনপুরার কাছে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।লাঠি হাতে একে অপরের উপর চড়াও হন দু’পক্ষের লোকজন। চাঁদবাগের কাছেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। গতকালের মতোই ফের পরস্পরকে লক্ষ্য করে তারা পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত তিন দিন ধরে হিংসা চললেও, এ দিনও এলাকায় তেমন পুলিশ চোখে পড়েনি। তার জন্য সংঘর্ষ আরও চরম আখার ধারণ করে।
মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি কারওয়াল নগরে। ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গিয়েছে। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও। তবে পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় এখনও পর্যন্ত সেখানে গিয়ে পৌঁছয়নি দমকলবাহিনী। উত্তর-পূর্ব দিল্লির দমকল বিভাগের ডিরেক্টরের তরফে জানানো হয়েছে, গতকাল থেকে এ দিন ভোর ৩টে পর্যন্ত দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে তাঁদের কাছে ৪৫ বার ফোন এসেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে তাঁদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করছেন তাঁরা।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশও। তাদের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা অব্যাহত বলে ফোনে লাগাতার অভিযোগ পাচ্ছি আমরা।’’ সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় গতকালই রাজধানীর একাধিক মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ দিনও জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই সমস্ত স্টেশনে বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচলও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
Delhi: Police & Rapid Action Force (RAF) personnel hold flag march in Brahampuri area, after stone-pelting incident between two groups in the area, today morning. #NortheastDelhi pic.twitter.com/NkjrSrmBPD
— ANI (@ANI) February 25, 2020
ফ্ল্যাগমার্চ র্যাফের।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনায় পৌঁছলেন ট্রাম্প
সোমবারের হিংসার ঘটনায় এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্য তথ্য কমিশনার ওয়াজাহত হাবিবুল্লা। আগামী কাল তাঁর সেই আবেদনের শুনানি করবে শীর্ষ আদালত। অন্য দিকে, গোটা ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা (সিট) আনা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আরও কয়েকটি আবেদনের শুনানি রয়েছে আগামিকাল।সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তুলে নেওয়া সংক্রান্ত শাহিন বাগের তরফে যে দু’টি আবেদন জমা পড়েছে, আগামিকাল তারও শুনানি করবে শীর্ষ আদালত।
রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। তা নিয়ে গতকালই লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলের সঙ্গে একদফা কথা হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের। বাহিনী পাঠানো হবে বলে বৈজল তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন বলে সেই সময় জানান কেজরীবাল। কিন্তু এ দিন নতুন করে হিংসা ছড়ানোয় ফের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। টুইটারে কেজরীবাল লিখেছেন, ‘‘দিল্লির কিছু জায়গায় যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে চিন্তিত আমি। শহরের সর্বত্র যাতে শান্তি বজায় থাকে, একজোট হয়ে আমাদেরই তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সকলকে আমার অনুরোধ, হিংসা ত্যাগ করুন। যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানকার বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসছি আমি। পদাধিকারী আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হবে।’’
দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতেই দিল্লি পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মুহূর্তে রাজধানীতে রয়েছেন। তাই যত শীঘ্র সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ দিন দুপুরেও অরবিন্দ কেজরীবাল, অনিল বৈজল এবং অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শাহ।
আরও পড়ুন: গর্জালেও বর্ষালেন না, ‘সম্প্রীতির’ প্রশংসায় ট্রাম্প
সিএএ-র বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল জাফরাবাদ, সীলামপুর-সহ একাধিক জায়গায়। কিন্তু রবিবার সেখানে সিএএ-র সমর্থনে পাল্টা মিছিল করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিন দিনের মধ্যে বিক্ষোভ না সরালে তাঁরা কাউকে মানবেন না, রাস্তায় নেমে আসবেন বলে হুমকি দেন তিনি। তার পরই জাফরাবাদ-সহ আশাপাশের এলাকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। সিএএ বিরোধীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিএএ সমর্থকরা। গতকাল মৌজপুর, গোকুলপুরী-সহ একাধিক এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে এক পুলিশকর্মী-সহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হেড কনস্টেবল রতনলাল, শাহিদ, মহম্মদ ফুরকান, রাহুল সোলাঙ্কি এবং নাজিম। বাকি দু’জনকে শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়াও ইটের আঘাতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy