প্রতীকী ছবি।
আশা ছিল, অতিমারির ধাক্কায় নাজেহাল মধ্যবিত্তকে আয়করে কিছুটা অন্তত ছাড় দেবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু বাজেটে সেই পথে হাঁটলেন না তিনি। অপরিবর্তিত রইল করের হার। কর ছাড়ের সুবিধার চৌহদ্দি বাড়ল না বাড়তি সঞ্চয়েও। উল্টে কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়ন সেস চাপল পেট্রল, ডিজেল, সোনা, রুপোয়। যদিও তাতে দাম বাড়বে না বলেই দাবি করল সরকার। প্রাপ্তি বলতে, ৭৫ বছর এবং তার বেশি বয়সের পেনশন ও সুদ নির্ভর নাগরিকদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি আর আমজনতার রোজগারে কোভিড সেস না-চাপানো।
সঙ্গে তৈরি হল বাড়তি আশঙ্কা, এ বার কি তবে ধীরে ধীরে করের আওতায় আসতে শুরু করবে এত দিন কর ছাড়ের আওতায় থাকা বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প? কারণ বাজেটে প্রস্তাব, শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত জীবন বিমা প্রকল্প ইউলিপের মেয়াদ পূর্ণ হলে তবেই তার পুরো টাকায় কর ছাড় পাওয়া যাবে, যদি বিমাকারীর বার্ষিক প্রিমিয়ামের অঙ্ক ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি না-হয়। বিমাকারী মারা গেলে শুধু এই শর্ত বলবৎ হবে না। সব ধরনের প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিএফ) কর্মীদের দেয় টাকা বছরে ২.৫ লক্ষ পার হলেও কর রেহাই মিলবে না তার উপরে সুদের আয়ে। অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘‘বেশি আয় যাঁদের, তাঁদের অনেকে কর ছাড়ের সুবাদে বিপুল টাকা পিএফে ঢুকিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন। তা রুখতেই এই পদক্ষেপ।’’ তাঁর মতে, এই করের আওতায় পড়বেন পিএফ সদস্যদের মাত্র ১%, যাঁরা মূলত উচ্চবিত্ত।
সরকারের যে এ বার টানাটানির সংসার, তা জানা কথা। তবু সাধারণ মানুষের আশা ছিল, কিছুটা আয়করে ছাড় পাওয়ার। কারণ দু’টি। প্রথমত, কোভিডের ধাক্কায় সকলে নাজেহাল। অনেকের আয় কমেছে। এই পরিস্থিতিতে দু’পয়সা কর কম গুনতে হলে কিছুটা হাঁফ ছাড়ার
সুযোগ পাবেন তাঁরা। দ্বিতীয়ত, হাতে আসা ওই বাড়তি টাকা বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবা কিনতে খরচ করলে, বাজারে চাহিদা চাঙ্গা হবে। ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। এই যুক্তিতেই মধ্যবিত্তের হাতে টাকা দেওয়ার জন্য নাগাড়ে সওয়াল করেছেন বহু বিশেষজ্ঞ, এমনকি শিল্পমহলের একাংশও। নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রঘুরাম রাজনের মতো তাবড় অর্থনীতিবিদদের আবার যুক্তি ছিল, এই কঠিন সময়ে দরিদ্রদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি নগদ টাকা দিক সরকার। যাতে তাঁরা করোনাকালে টিকে থাকতে পারেন। আবার তাঁদের খরচের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারে চাহিদা। বাজেটে অবশ্য দেখা গেল, নগদ দেওয়া তো দূর, আয়কর ছাঁটতেও আগ্রহ দেখালেন না অর্থমন্ত্রী। ফলে চুপসে গেল প্রত্যাশার ফানুসও।
৭৫ বছর এবং তার বেশি বয়সের প্রবীণ নাগরিকদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ঝক্কি থেকে মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন সকলেই। বলছেন, ব্যাঙ্ক,
ডাকঘরই হিসেবে করে কর কেটে নিলে বয়স্কদের সুবিধা। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, এই সুবিধা অন্তত ৬৫ বছর বয়স থেকেই দেওয়া হল না কেন?
অনাবাসী ভারতীয়দের দ্বৈতকরের চাপ থেকে মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন নির্মলা। ভবিষ্যতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। পাশাপাশি করে অডিটের সীমা ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ কোটি।
উপদেষ্টা সংস্থা অ্যাকুইল-র এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর এবং কর বিভাগের প্রধান রাজর্ষি দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষ বা প্রবীণদের করে ছাড় দেওয়া হয়নি ঠিকই। তবে কোভিড সেস বসানো হবে বলে জল্পনা যে সত্যি হয়নি, সেটাই বাঁচোয়া। যদিও ৭৫ বছর বা তাঁর বেশি বয়সের মানুষদের রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও, কর কিন্তু দিতে হবে (করযোগ্য হলে)।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy