Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

ভোটের বাজেটে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের জন্য কল্পতরু মোদী সরকার

পীযূষ গয়ালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় গত পাঁচ বছরে আগের তুলনায় রাস্তা তৈরি বেড়েছে তিন গুণ। যুক্ত হয়েছেন ১৭.৮৪ লক্ষ গ্রাম যুক্ত হয়েছে এই পাকা রাস্তার সঙ্গে।

বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠকে পীযূষ গয়াল। ছবি: পিটিআই

বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠকে পীযূষ গয়াল। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৮
Share: Save:

ভোটের মুখে বাজেট। তাই গরিব-মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্কে নজর মোদী সরকারের। আর সে দিকে তাকিয়েই ২০১৯-২০ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটেও জনমোহিনী ঘোষণার ফুলঝুরি। পীযূষ গয়ালের ঝাঁপি থেকে বার হল আয়করে বিপুল ছাড়, প্রান্তিক কৃষককে বার্ষিক আর্থিক সাহায্য, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য পেনশনের মতো ঘোষণা। আর সেটা যতটা বুক বাজিয়ে ঘোষণা হল, পরিকাঠামো, শিল্পক্ষেত্রে, দুর্নীতি দমনে গতি থমকে গেল অনেকটাই। নেই কর্মসংস্থানে দিশা দেখানোর মতো প্রস্তাব। সে সব ক্ষেত্রে বরং আগে কী করা হয়েছে, তার ফিরিস্তি দিলেন পীযূষ গয়াল। নয়া কোনও ঘোষণা কার্যত নেই বাজেটে।

জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও একটি সংবাদপত্রে ফাঁস হওয়া নিয়েও চাপের মুখে মোদী সরকার। কিন্তু অন্তর্বর্তী বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই সরকার পাঁচ বছরে কী করেছে, তার একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন গয়াল। ২০১৮-১৯ সালে রাজস্ব ঘাটতি ৩.৪ শতাংশে নেমে আসা, ২৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ বাড়ি তৈরি, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস তার মধ্যে অন্যতম। সব মিলিয়ে মোদী সরকার দেশের অর্থনৈতিক মনোবল বাড়িয়েছে, দাবি গয়ালের।

নজরে কৃষক-নিম্নবিত্ত

কৃষিঋণ মকুবের ঘোষণা করে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস। ভোটমুখি বাজেটে মোদী সরকারও যে কৃষিক্ষেত্রে নজর দেবে, তার আগাম পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। পীযূষ গয়ালও ঘোষণা করলেন নয়া প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পে প্রতি বছর কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেবে সরকার। শর্ত, জমি থাকতে হবে ২ হেক্টরের কম। এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।

গণবণ্টন ব্যবস্থার ফারাক তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী তুলনা টেনেছেন ২০১৩ সালের। ওই সময় এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ হয়েছিল দ্বিগুণ, ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা। মহাত্মা গাঁধী জাতীয় কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পে এ বারের বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আরও পড়ুন: ৫ লাখ পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড়, তার উপরে আগের মতোই হিসাব

শ্রমিকদের পেনশন

নাম ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মনধন প্রকল্প’। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য মাসে ৩০০০ হাজার টাকা পেনশনের ঘোষণা করেছেন পীযূষ গয়াল। যদিও সেটাও কৃষকদের জমা করা টাকাই কার্যত ঘুরিয়ে ফেরত দেওয়া হবে। প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে জমা দিতে হবে শ্রমিকদের। ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন দেওয়া হবে মাসে ৩০০০ টাকা করে। কিন্তু প্রতি মাসে এভাবে ১০০ টাকা করে জমা দেওয়া এবং ৬০ বছর পর্যন্ত সেটা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কি না শ্রমিকরা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পরিকাঠামো

পীযূষ গয়ালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় গত পাঁচ বছরে আগের তুলনায় রাস্তা তৈরি বেড়েছে তিন গুণ। যুক্ত হয়েছেন ১৭.৮৪ লক্ষ গ্রাম যুক্ত হয়েছে এই পাকা রাস্তার সঙ্গে। আর ২০১৯-২০ সালের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। আগের বাজেটে এই বরাদ্দ ছিল ১৫,৫০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ বাড়ি তৈরি হলেও এ বারের বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়নি। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়নে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ ২১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, বরাদ্দ হয়েছে ৫৮১৬৬ কোটি টাকা ।

আরও পড়ুন: ভোট বাজেট: কৃষক আর শ্রমিকের মন পেতে একগুচ্ছ ঘোষণা

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য

‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছেন দেশের মানুষ। বাজেট বক্তৃতায় দাবি গয়ালের। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ রোগী বিমার সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। তাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।

দেশে ২১টি এইমস হাসপাতাল রয়েছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ মোদী সরকার আসার আগে পর্যন্ত ছিল ১৪টি। এ ছাড়া ২২তম এইমস হাসপাতাল হবে হরিয়ানায়।

দুর্নীতি দমন

বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা স্বচ্ছতা এনেছি সরকারে। দুর্নীতিমুক্ত সরকার দিয়েছি। কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বহু সংস্থা করের আওতায় এসেছে। ১৯৮৮ সালের বেনামি সম্পত্তি হস্তান্তর আইন কড়াকড়ি করায় নির্মাণ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এসেছে।’’

জিএসটি

জিএসটি চালুর ফলে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা মার খেয়েছে বলে প্রথম থেকেই সরব বিরোধীরা। গয়ালের দাবি, এর ফলে কর ব্যবস্থায় বিপ্লব এসেছে। বেড়েছে রাজস্ব। জিএসটি-র ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘোষণা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর কর কমিয়ে শূন্য থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রস্তাব জিএসটি কাউন্সিলে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন গয়াল। এছাড়া সিনেমার টিকিটের উপর সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ জিএসটি চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিনোদন ক্ষেত্রে সিনেমা-ধারাবাহিকে উৎসাহ বাড়াতে নির্মাতাদের জন্য সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম চালুর প্রস্তাবও গয়াল তাঁর বাজেটে রেখেছেন।

প্রতিরক্ষা

জাতীয়তাবাদের প্রচারে গোড়া থেকেই সক্রিয় মোদী সরকার। বাজেটেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। ২০১৯-২০ সালের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত ব্যয় বরাদ্দ তিন লক্ষ কোটি রেখেছেন গয়াল, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে দাবি গয়ালের। প্রয়োজনে আরও অতিরিক্ত বরাদ্দের আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো ‘এক পেনশন এক নীতি’ চালুর কথা স্মরণ করান গয়াল। সেনা বিভাগের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে গয়ালের বাজেটে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, সেনার তিন বিভাগেই সেই সব কর্মীদের বিশেষ ভাতার ঘোষণা করা হয়েছে।

(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE