তদন্তের দাবি চেয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা। ছবি: পিটিআই।
২০০৯ সালে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ১৮০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা। যাঁরা তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, সেই তালিকায় আছে অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীর নাম। পাশাপাশি টাকা দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন বিচারপতি এবং আইনজীবীদেরও। কর্নাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার নিজের হাতে লেখা একটি ডায়েরিও নিজেদের রিপোর্টে প্রকাশ করেছে সর্বভারতীয় ম্যাগাজিন ‘ক্যারাভান’। ভারতীয় আয়কর দফতরের হাতে এই নথি আছে বলেও দাবি করেছে ক্যারাভান। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রিপোর্ট ফাঁস হওয়ায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে বিজেপি। অন্য দিকে ‘চৌকিদার প্রধানমন্ত্রী’-র কাছে অবিলম্বে লোকপাল তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস। যদিও এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই এবং এই ডায়েরি ভুয়ো বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা।
ক্যারাভান-এ প্রকাশিত রিপোর্টে সামনে আনা হয়েছে বি এস ইয়েদুরাপ্পার নিজের হাতে লেখা একটি ডায়েরি। কর্নাটক বিধানসভার বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট এই ডায়েরিটিতে লেখা আছে কন্নড় ভাষায়। সেখানেই ২০০৯ সালে বিজেপির কোন নেতাকে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই হিসেব নিজের হাতে লিখে রেখেছিলেন বলে দাবি ক্যারাভান পত্রিকার।
ইয়েদুরাপ্পার লেখা সেই ডায়েরির পাতা থেকে দেখা যাচ্ছে, তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিকে দিয়েছিলেন মোট ১০০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে তিনি দিয়েছিলেন ১৫০ কোটি টাকা করে। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে তিনি দিয়েছিলেন ১০০ কোটি টাকা এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলীমনোহর যোশীকে তিনি দিয়েছিলেন ৫০ কোটি টাকা করে। পাশাপাশি নিতিন গডকড়ীর ছেলের বিয়েতেও তিনি দিয়েছিলেন অন্তত দশ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামা কাণ্ডে গোটা পাকিস্তানকে দায়ী করা ঠিক নয়, মন্তব্য পিত্রোদার, অস্বস্তি কংগ্রেসের
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি ইয়েদুরাপ্পা যে বিভিন্ন বিচারপতি এবং আইনজীবীদেরও টাকা দিয়েছেন এবং সেই হিসেবও এই ডায়েরিতে নিজের হাতে লিখে রেখেছেন ইয়েদুরাপ্পা, এমনটাই পাওয়া যাচ্ছে ক্যারাভান ম্যাগাজিনের ফাঁস করা রিপোর্টে।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পরই আসরে নেমেছে কংগ্রেস। সাংবাদিক বৈঠকে করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানতে চেয়েছেন, ‘‘এই রিপোর্ট সত্যি না মিথ্যা? ২০১৭ সাল থেকে ইয়েদুরাপ্পার নিজের হাতে সই করা এই ডায়েরি আয়কর দফতরের কাছে আছে। তা হলে বিজেপি এবং মোদীজি এই ঘটনার তদন্ত করেননি কেন?’’ একই সঙ্গে এই ডায়েরি নিয়ে অবিলম্বে লোকপাল তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, পুরো দেশ এই ঘটনা জানতে চায়, কারণ ১৮০০ কোটি টাকা জনগণের হিসেবে খুব একটা কম টাকা নয়।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রথমে ক্যারাভান ম্যাগাজিনে রিপোর্ট প্রকাশ এবং তার ঠিক পরেই কংগ্রেস এই অভিযোগ আনলেও তা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা। বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা বলে পাল্টা দাবি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ, আয়কর দফতর আগেই জানিয়েছে, এই নথি ভুয়ো এবং মিথ্যা।’’ ইয়েদুরাপ্পার পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠক করে পুরো বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদও। তাঁর দাবি ইয়েদুরাপ্পার সই জাল করা হয়েছে এবং পুরো বিষয়টি অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy