নজরে: বোলার হার্দিককে নিয়ে সংশয় এখনও কাটেনি। ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কি শুধু ব্যাটার হিসেবেই দেখা যাবে হার্দিক পাণ্ড্যকে? যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন এই প্রশ্ন তাড়া করতে শুরু করেছে বিরাট কোহালিদের। ঠিক যে ভাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে চার নম্বর ব্যাটসম্যানের বিতর্ক দগ্ধ করেছিল ভারতীয় দলকে। শেষ পর্যন্ত বিজয় শঙ্কর প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে আর গোটা প্রতিযোগিতায় চারের কাঁটায় রক্তাক্ত হয় দল।
এক বিশ্বকাপ থেকে আর এক বিশ্বকাপ। এক অলরাউন্ডার থেকে আর এক অলরাউন্ডার। আশ্চর্যজনক ভাবে বিশ্বকাপ থেকে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরে বিজয় শঙ্কর প্রায় হারিয়েই গেলেন! তাঁকে না দেখা গেল আইপিএলে, না খুঁজে পাওয়া যায় ভারতীয় দলের আশেপাশে। এর মধ্যেই যাঁকে কপিল দেব পরবর্তী অধ্যায়ে সেরা অলরাউন্ডার প্রতিভা ভাবা হচ্ছিল, তিনিও চোট-আঘাতে জর্জরিত। এ বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে শেষ বল করেছেন। তার পর থেকে আর হাত ঘোরাতে দেখা যায়নি। গোটা আইপিএলে বল করলেন না। বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেও শুধু ব্যাটার হিসেবে খেললেন। তা হলে কি বিশ্বকাপের দলে অলরাউন্ডার হিসেবে ঢুকেও খেলবেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে?
ওয়াকিবহাল মহল থেকে কিন্তু অন্য রকম ইঙ্গিত ভেসে আসছে। বোলার হার্দিককে পাওয়ার সম্ভাবনা নাকি এখনও পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি বলে এঁরা দাবি করছেন। তা সে যতই তিনি আইপিএলে বল না করুন, যতই প্রস্তুতি ম্যাচে হাত না ঘোরান। বলা হচ্ছে, বোলার হার্দিককে যতটা সম্ভব বিশ্রামে রেখে নামানোর কথা ভাবা হয়েছে। যাতে নতুন করে আর চোট-আঘাতের ধাক্কা না আসে। হার্দিককে একশো শতাংশ তৈরি করে তবেই বল করানো হবে।
পাল্টা কিছু প্রশ্নও উঠছে সঙ্গে সঙ্গে। যেমন ২৪ অক্টোবর ভারতের অভিযান শুরুই হচ্ছে পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে। প্রথমেই মহারণের স্নায়ুর চাপ নেওয়ার ঝক্কি। সেখানে সঠিক দল নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই ম্যাচে হার্দিক কি অলরাউন্ডার হিসেবে খেলতে পারবেন? তিনি ব্যাট-বল দুই’ই করতে পারলে এক রকম ভাবে প্রথম একাদশ হবে। না পারলে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। জানা গেল, জোর চেষ্টা হচ্ছে হার্দিককে নিয়ে এবং অনেকেই আশাবাদী, বডোদরার ছোট পাণ্ড্য বল করতে পারবেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, এত দিন বল না করার পরে সরাসরি ম্যাচে গিয়েই ছন্দ খুঁজে পাওয়া এত সহজ নাকি? হার্দিক কোন জাদু বলে দারুণ কিছু করে দেবেন? তাঁর কাছে কি কোনও আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ রয়েছে? এই ধাঁধার উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। যে যা-ই দাবি করুক না কেন, এত দীর্ঘ সময় চোটে ভোগার পরে বোলিংয়ে ফিরেই ছন্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
টি-টোয়েন্টিতে চার ওভার বল করতে হয় ঠিকই কিন্তু ব্যাটিং আগ্রাসনে বোলাররা সব সময় এতটাই চাপে থাকে যে, ওই চারটে ওভারেই সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে হয়। একটা বাজে বল মুহূর্তে পরিণত হয়ে যেতে পারে একটা বাজে ওভারে। তাই বোলার হার্দিককে যদি তৈরি-টৈরি করে মাঠে নামানো যায়ও, সরাসরি ম্যাচে ফেরানোর অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে ঝুঁকিও থাকবে। তায় আবার শুরুতেই পাক দ্বৈরথ। এমনিতেই অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বেড়ে যাবে। তবু যা পরিস্থিতি, প্রথম পছন্দ হিসেবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অলরাউন্ডারকেই ভাবা হচ্ছে।
সমস্যা হচ্ছে, হার্দিকের ব্যাটেও সেই ঝাঁঝটা দেখা যাচ্ছে না। গোটা আইপিএলে একটা ম্যাচ বাদ দিলে ঘুমিয়েই ছিলেন। বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁকে বেশ অস্বস্তিতেই দেখিয়েছে। ১০ বলে ১২ নট আউট করলেও ব্যাটে-বলে ভাল সংযোগ হচ্ছিল না। ইংল্যান্ডের ক্রিস জর্ডান ও রকম একটা বাজে ওভার না করলে ম্যাচটাও কঠিন হয়ে যেতে পারত ভারতের জন্য।
প্রস্তুতি ম্যাচে ঈশান কিশানের রান পাওয়া কিছুটা হলেও নির্বাচনী জট পাকিয়েছে। তবে কোহালি বলেই দিয়েছেন, রোহিত এবং রাহুল ওপেন করবেন। আইপিএল থেকেই রাহুল যে রকম ফর্মে আছেন, তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে ভাবাই সম্ভব নয়। ঈশান আবার মাঝের দিকে একেবারেই সফল নন। তাঁকে খেলাতে হলে ওপেনই করাতে হবে। তাই এই মুহূর্তে রান করেও, আইপিএলে মুম্বইয়ের বিদায়ী ম্যাচে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেও ঈশানকে হয়তো অপেক্ষায় থাকতে হবে।
আর একটা প্রশ্ন হচ্ছে, যশপ্রীত বুমরার পেস-সঙ্গী কে হবেন? ভুবনেশ্বর কুমার খুব ভাল ছন্দে নেই। ওদিকে, মহম্মদ শামি আইপিএলে ভাল বল করে এসে বিশ্বকাপের মঞ্চেও প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তিন উইকেট নিয়েছেন। ২৪ অক্টোবর পাক দ্বৈরথের আগে অনেক ধাঁধারই সমাধান করার আছে কোহালির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy