রোটাং পাসের কাছে এই দুর্ঘটনাস্থল থেকেই মেলে বায়ুসেনার পাইলট এস ভট্টাচার্যের (ইনসেটে) দেহ। নিজস্ব চিত্র
গত পাঁচ দশক ধরে বাবাকে মৃত নয়, নিখোঁজ বলেই বিশ্বাস করে এসেছেন সন্তানেরা। অ্যানিলা বারের সেই বিশ্বাস টলে গেল বায়ুসেনার এক বার্তায়— ‘আপনার বাবা এস ভট্টাচার্যের দেহ হিমালয়ের বরফের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছে।’
১৯৬৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনার একটি এএন-১২ বিমান চণ্ডীগড় থেকে কয়েকজন বিমানকর্মীকে নিয়ে লে-র উদ্দেশে রওনা হয়। লাদাখের আগে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হরকেওয়াল সিংহ ও স্কোয়াড্রন লিডার প্রাণনাথ মলহোত্র বিমানের মুখ ঘোরান। কিন্তু রোটাং পাসের উপরে এসে বিমানের সঙ্গে এটিসির সংযোগ ছিন্ন হয়। হারিয়ে যায় বিমানটি। একই সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যায় বায়ুসেনার এক ঝাঁক পাইলট ও কর্মী। নিখোঁজ হন বায়ুসেনার পাইলট এস ভট্টাচার্যও।
১৯৪৩ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেওয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে সেনাবাহিনীর নার্স আর টি বারের প্রেম ও বিবাহের পরে ভট্টাচার্য বদলি হন চণ্ডীগড়ে। স্বামী-সহ বিমান নিখোঁজ হওয়ার পরে বারে ফিরে আসেন বাপের বাড়ি, মেঘালয়ের জোয়াইয়ে। তার পরে বছর দশেক বেঁচে ছিলেন তিনি। স্বামী যে নেই, তা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। সন্তানদের বুঝিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই শত্রুদেশে ঢুকে পড়েছে বিমান। তোমাদের বাবা সেই দেশে বন্দি রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কোন ট্রেন কখন ছাড়বে, দেখে নিন সময়সূচি
হিমাচলের রোটাং পাসের কাছে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় সেনাবাহিনীর ডোগরা স্কাউটের গত দু’বছরের লাগাতার অভিযানে উদ্ধার হওয়া এএন-১২ বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও বরফ চাপা থাকা দেহগুলির মধ্যে এস ভট্টাচার্যের দেহও মেলে। একটার পর একটা দেহ শনাক্ত করার কাজ চলতে চলতেই শনাক্ত হয় এস ভট্টাচার্যের দেহও। সেই খবর জোয়াইয়ের মিশন কম্পাউন্ডে, বারে পরিবারে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই ৫২ বছরের এক বিশ্বাস ভেঙে গেল।
অ্যানিলা জানান, বাবার বিমান দুর্ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩ বছর। ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে একলা মা হিমসিম খাচ্ছিলেন। তাই চণ্ডীগড় থেকে পশ্চিম জয়ন্তীয়া পাহাড়ে, জোয়াইয়ের বাড়িতে ফিরে আসেন। অ্যানিলার কথায়, “এত বছর পরে বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।” বাবার চেহারা বলতে সাদাকালো একটা ছবিই ভরসা। মেয়ে শুনেছেন, বরফে চাপা থাকায় অনেকটাই অবিকৃত বছর চল্লিশের দেহটি। তাই একটি বার নিজের চেয়েও বয়সে ‘ছোট’ বাবার সামনে দাঁড়িয়ে থমকে থাকা সময়ের সাক্ষী হতে চান অ্যানিলা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy