ছবি পিটিআই
মোদী সরকারের মন্ত্রীরা ঠারেঠারে বলছেন, আমলারাই ডুবিয়েছেন। আমলারা বলছেন, ভোটের ময়দানে ফায়দা তুলতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আগেভাগে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাঁদের অত্যুৎসাহই বিপদ ডেকে এনেছে।
কোভিড পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলেই দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। দেশে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন। বিদেশের সংবাদমাধ্যমেও নরেন্দ্র মোদীর দিকে ব্যর্থতার আঙুল উঠেছে। এর দায় কার ঘাড়ে গিয়ে পড়বে, তা নিয়ে এখন সরকারের মধ্যে কার্যত আলোড়ন চলছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, আমলারা সরকারকে ভুল পথে চালিত করেছেন। কোভিড পরিস্থিতি লাগামের মধ্যে চলে এসেছে ভেবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে কোনও ব্যবস্থা নেননি। অস্থায়ী হাসপাতালের মতো যে সব ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা তুলে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ঢেউ এলে প্রতিষেধক বা অক্সিজেনের অভাব হবে, এটাও আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। এখন তার দায় প্রধানমন্ত্রীর উপরে এসে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে আমলা মহলের উপরে ক্ষুব্ধ।”
উল্টো দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আইএএস অফিসাররা বলছেন, আমলারা নিজেদের কাজ করে গিয়েছেন। কোভিডের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যগুলিতে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী দু’জনেই কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে খাতায়-কলমে সরকারি সতর্কবার্তায় কোনও কাজ হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসন সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় সরকারের এক আমলা বলেন, “গত ৭ জানুয়ারিই স্বাস্থ্য মন্ত্রক মহারাষ্ট্র, কেরল, ছত্তীসগঢ়, পশ্চিমবঙ্গকে কোভিডের সংক্রমণ বাড়ছে বলে সতর্ক করে। এরপর ২১, ২৫ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ধাপে ধাপে এই তালিকায় পঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, গুজরাত, তেলঙ্গানা যোগ হয়। কিন্তু এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ২৮ জানুয়ারি দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এ কার্যত কোভিড নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে বলে বার্তা দেন। তারপর থেকে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের বাংলায় জনসভাও শুরু হয়ে যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ৭ মার্চ বলেন, কোভিডের খেলা শেষ পর্বে।”
আমলাদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য, অফিসারদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই মন্ত্রীরা বিবৃতি দিয়েছেন। পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে তা প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়নি কেন? এক মন্ত্রী বলেন, “ডিসেম্বর মাসে আয়ুষ্মান ভারতের তৎকালীন সিইও ইন্দু ভূষণ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এ দেশে অতিমারি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। তাঁর যুক্তি ছিল, একজন সংক্রমিতের থেকে গড়ে এক জনেরও কম সংক্রমিত হচ্ছেন। ফলে টিকাকরণের পিছনে খরচ করে কী লাভ, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।” ওই মন্ত্রীর ক্ষোভ, অবসরের পরে এখন সেই ইন্দু ভূষণই গণটিকাকরণের পক্ষে সওয়াল করছেন।
দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে যে ভাবে অক্সিজেনের অভাব নিয়ে হাহাকার তৈরি হয়েছে, তার জন্যও আমলাদের দায়ী করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। তাঁদের যুক্তি, জানুয়ারি মাসেই পিএম-কেয়ার্স তহবিল থেকে ১৬২টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুর হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৩৩টি তৈরি হয়েছে। এতে রাজ্যের গাফিলতি রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের কর্তারাও রাজ্যগুলির উপরে তদারকি করেনি। নীতি আয়োগের এক কর্তার পাল্টা যুক্তি, “সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বোঝা গিয়েছিল, অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে। তাই সে সময়ই স্বাস্থ্য মন্ত্রক ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি-কে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ করতে বলা হয়। যাতে অক্সিজেন মজুত হয়, দামও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। আমলারা সচেতন ছিলেন না, এই অভিযোগ ভুল।”
এই দায় ঠেলাঠেলির শেষে কী হবে? সরকারের অন্দরমহল থেকে ইঙ্গিত মিলছে, আপাতত কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে না। কারণ, তাতে এক প্রকার কেন্দ্রের দিক থেকেই গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে। বিজেপি নেতারা এখন বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। অভিযোগ তুলছেন, কোভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কংগ্রেস ও বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি সতর্ক হয়নি। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমলা স্তরে রদবদবল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy