প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র
২০২৪ সালে কেন্দ্রে ফের নরেন্দ্র মোদী সরকার চাইলে ২০২২ সালে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে ক্ষমতায় ফেরাতে হবে উত্তরপ্রদেশে। শুক্রবার এমন মন্তব্য করে নাকি ঠিক বলেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লখনউতে শাহ এই মন্তব্য করার পরেই নাকি নড়েচড়ে বসে বিজেপি-র মিডিয়া সেল। ধরে ধরে গেরুয়া শিবিরের খবরের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সাংবাদিকদের নাকি ফোন করে ওই মন্তব্য প্রচার না করতে অনুরোধ করা হয়। একান্ত প্রচার করতে হলেও সেটাকে যেন বড় না দেখানোর আর্জি জানানো হয়। সক্রিয় হয়ে ওঠেন লখনউয়ের পাশাপাশি দিল্লির নেতারাও। সাংবাদিকদের এই ধরনের ফোন পাওয়ার কথা সোমবার প্রকাশিত হয়েছে এক সর্বভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
বিজেপি-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি শাহকে এখনও দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ মনে করা হয়। সরকারের মতো দলেও তিনি মোদীর পরেই। কিন্তু সেই শাহর বলা কথাই অস্বস্তি ফেলে বিজেপি-কে। কারণ, বিজেপি শিবিরের বড় অংশের বক্তব্য, শাহ এই মন্তব্য করে মোদী এবং যোগী দু’জনের সম্পর্কেই জনমানসে ভুল ধারণা তৈরি করে দিয়েছেন। দলের নীতিগত জায়গা থেকেই বিষয়টা ঠিক নয়। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি এখনও নিজেকে অপ্রতিরোধ্য হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে। মোদীর বিরোধিতায় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যখন এককাট্টা হতে চাইছে সেই সময়ে অমিত এই মন্তব্য করে কার্যত দলের দুর্বলতা সামনে এনে ফেলেছেন।
আগামী বছরেই দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। ভারতীয় রাজনীতিতে এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, ‘উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লির সিংহাসন তার’। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল শক্তি নিয়ে বিজেপি-র ক্ষমতায় আসার পিছনে ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশের বড় ভূমিকাও ছিল। ২০১৪-র নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা অমিত গত শুক্রবার লখনউ গিয়েছিলেন দলের সদস্য বৃদ্ধি কর্মসূচির উদ্বোধন করতে। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘মোদীজিকে আরও এক বার ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চাইলে ২০২২ সালে ফের এক বার যোগীজিকে মুখ্যমন্ত্রী বানাতে হবে।’’
গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি মোদীকে এমন ভাবে তুলে ধরতে চেয়েছে যেন, মোদী মানে একটা ‘দর্শন’, মোদী মানে একটা ‘আদর্শ’। তিনিই ভারতের হৃদয় সম্রাট। তিনি ভারতীয় সমাজ এবং মনকে যে ভাবে চেনেন, তেমনটা আগে কেউ পারেনি। বিজেপি-র এই ‘মোদী-নামা’ যেন আঘাত পেয়েছে শাহর মন্তব্যে। ‘বিকাশ-পুরুষ’-এর ক্ষমতায় ফেরা কি তবে কোনও ব্যাক্তির জয় বা কোনও রাজ্যে বিজেপি-র সাফল্যের উপরে নির্ভরশীল? এমনই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে শাহর মন্তব্যে। একই সঙ্গে যোগীর তরফেও এমন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাঁর ক্ষমতায় ফেরার জন্য কি মোদীর নাম নেওয়া জরুরি? কারণ, ২০১৭ সালের পর থেকে যোগী নিজের রাজ্যে ঠিক তেমন ভাবেই নিজের ইমেজ তৈরি করেছেন যেমনটা গুজরাতে করেছিলেন মোদী।
দিল্লির সরকার গঠনে উত্তরপ্রদেশ বড় ভূমিকা নিলেও অতীতে অন্য নজিরও দেখা গিয়েছে। রাজ্যে কল্যাণ সিংহের মুখ্যমন্ত্রিত্বে বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও সেই সময় লোকসভায় খারাপ ফল করেছিল পদ্মশিবির। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছিল বিজেপি। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃতীয় শক্তি হওয়া বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৭১টা আসনে জয় পায়। আবার ২০১৭ সালে যোগীকে জেতানো উত্তরপ্রদেশ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ১০ শতাংশ বেশি ভোট দিয়েছিল বিজেপি-কে। এই সব যুক্তি সামনে এনেই বিজেপি ‘অমিত শাহ বেঠিক বলেছেন’ প্রমাণ করতে সক্রিয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy