প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ বিজেপি সমর্থকদের। বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দিতে। ছবি: অমিত দাস।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই অসমের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে কাছাড়, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ, দুলিয়াজান, গোহপুর, ভবানীপুর, চামাগুড়ি, ধেমাজিতে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের আন্দোলন তীব্র আকার নিয়েছে।
বড়খলায় ছেলে কনাদ পুরকায়স্থ টিকিট না পাওয়ায় ভিশন ডকুমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। কণাদবাবু দীর্ঘদিন থেকেই সেখানে সংগঠনের কাজকর্ম করছিলেন। কিন্তু দল কিশোর নাথকে প্রার্থী করে। কনাদবাবু বলেন, ‘‘দলে কাজ করে লাভ কী! প্রমাণ
মিলল, দলের আদর্শ মেনে চলার কোনও মূল্য নেই! টাকা-পয়সা থাকলেই টিকিট মেলে।’’
দলীয় সূত্রে খবর, ক্ষোভে কবীন্দ্রবাবু আজই পদত্যাগপত্র রাজ্য সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সোনোয়ালের দিল্লির বাড়িতে বসে রাজ্য
কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় জানান, কোনও পদত্যাগ পত্র তাঁরা পাননি। তিনি বলেন, ‘‘কবীন্দ্রবাবু দলের প্রণম্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু কে কবে থেকে দল করে প্রার্থী মনোনয়নে তা বিবেচ্য হতে পারে না। বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়।’’ জেলা কমিটির সভাপতি কৌশিক রাই বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি, কবীন্দ্রবাবু ইস্তফা দিয়েছেন। সবাই মিলে তাঁর সঙ্গে কথা বলব।’’
থৈবা সিংহকে প্রার্থী করায় লক্ষ্মীপুরের তিন দাবিদার সঞ্জয় ঠাকুর, রীনা সিংহ ও মুকেশ পান্ডে একসঙ্গে মিলিত হন। তাঁদের সমর্থনে বিজেপির বহু কর্মী গণহারে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। খবর পেয়ে কৌশিকবাবু তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরামর্শ করেন রাজ্য কমিটির সঙ্গে। তিনজনের মধ্যে একটি নাম চূড়ান্ত করে পাঠাতে বলেন তিনি। বিক্ষুব্ধরা জানিয়ে দেন, সঞ্জয় ঠাকুর বা রীণা সিংহের মধ্যে যে কোনও একজনকে প্রার্থী করলেই চলবে। রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। সমস্যা মিটে যাবে।’’
বরাক উপত্যকার ১৫টি আসনে বর্তমানে একমাত্র বিধায়ক শিলচরের দিলীপকুমার পাল। তাঁর টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় ছিল না।
কিন্তু প্রার্থী নিয়ে ক্ষুব্ধ কাটিগড়া এবং উধারবন্দের একাংশ কর্মীও। কাটিগড়ায় অমরচাঁদ জৈন ও উধারবন্দে মিহিরকান্তি সোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়েন। দল তাঁদের সাময়িক বরখাস্তও করেছিল। এ বার টিকিট মেলায় বিদ্রোহকেই স্বীকৃতি দেওয়া হল।
প্রার্থী বদলের দাবিতে আজ হাইলাকান্দিতেও বিজেপি সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান। জেলার প্রাক্তন সভাপতি গোবিন্দলাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কাটলিছড়া এবং হাইলাকান্দিতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি দুর্বল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এর জন্য দায়ী প্রদেশ বিজেপির দুই কর্তা রাজদীপ রায় এবং পরিমল শুক্লবৈদ্য। কাটলিছড়া এবং হাইলাকান্দির বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা জেলা কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদে জানান। প্রশ্ন তোলেন, জেলার বাসিন্দা না হয়েও কী ভাবে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত দত্ত চৌধুরী এখানকার প্রার্থী হলেন? কাটলিছড়া কেন্দ্রে রাজকুমার দাসকে প্রার্থী করার বিরোধিতা করে স্থানীয় বিজেপি সমর্থকরা জেলা সভাপতি ক্ষিতীশরঞ্জন পালের সামনেই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে চলে যায়। ক্ষিতীশবাবু বাধা দেননি। তিনি নিজেও হাইলাকান্দি থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলের নেতাদের সিদ্ধান্তে আমি দুঃখিত। কবে কার্যালয় খুলবে জানি না।’’ বিক্ষুব্ধরা কাটলিছড়ায় প্রকাশ মিশ্রকে প্রার্থী করার দাবি জানায়। দুলিয়াজানে সাংসদ রামেশ্বর তেলির বাড়িতে হামলা চালায় উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকদের দল। বাড়ি ভাঙচুরও হয়। তাঁরা টেরস গোয়ালাকে প্রার্থী হিসেবে মানতে নারাজ। নলবাড়িতে বিধায়ক জয়ন্তমল্ল বরুয়ার বদলে টিকিট দেওয়া হল অশোক শর্মাকে। তাতে ক্ষুব্ধ জয়ন্তমল্লের অনুগামীরা। গোহপুরে উৎপল বরা, ভবানীপুর মনোজ বরুয়া, চামাগুড়িতে জিতু গোস্বামী, রঙিয়ায় ভবেশ কলিতা, ধেমাজিতে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক প্রদান বরুয়ার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ চলছে। রাঙাপাড়া, রূপহিহাটে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ধেমাজিতে বিজেপির টাউন কমিটির সভাপতি-সহ পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেন। গোলকগঞ্জে অশ্বিনী সরকারকে প্রার্থী করায় বিক্ষোভ দেখায় ধুবুরি জেলা বজরঙ দলের সমর্থকরা।
শিবসাগরে সুরভি রাজকুঁয়রিকে প্রার্থী করায় জেলা বিজেপির তিন নেতা পদত্যাগ করেন। গোলাঘাটের চা গোষ্ঠীর বিজেপি নেতা মৃদুল দত্তও পদত্যাগ করেছেন। বড়োভূমিতে বিপিএফের সঙ্গ ত্যাগ করে বিটিসি সংখ্যালঘু পরিষদ।
করিমগঞ্জে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দু’জনকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন রাতাবাড়ির বর্তমান বিধায়ক কৃপানাথ মালা এবং জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু পাল। কৃষ্ণেন্দুবাবু পাথারকান্দি আসনে দাঁড়িয়েছেন। মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদের সঙ্গে দু’বার লড়ে পরাজিত হওয়া শিপ্রা গুণকে ফের দক্ষিণ করিমগঞ্জে প্রার্থী করেছে বিজেপি। শিপ্রাদেবী নিজে পাথারকান্দিতে লড়তে চেয়েছিলেন। বিজেপির একাংশের মতে, জনবিন্যাস অনুসারে দক্ষিণ করিমগঞ্জে বিজেপি প্রার্থীর জয়লাভের কোনও সম্ভাবনা নেই। তিনবারের বিজয়ী বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দেকের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া লড়াইতে নামছেন জেনেও শিপ্রাদেবী বলেন, ‘‘দলের সৈনিক হিসেবে আমি লড়াই চালিয়ে যাব।’’
রাতাবাড়িতে বিধায়ক কৃপানাথ মালাকে দাঁড় করানোয় একাংশ বিজেপি সদস্যের অভিযোগ, কৃপানাথ কংগ্রেসের বিধায়ক থাকার সময় এলাকার কোনও উন্নতি করেননি। তাই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তাঁর বিরুদ্ধে যাবে। পাথারকান্দির প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু পাল সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন। ‘বহিরাগত’ কৃষ্ণেন্দুবাবুকে প্রার্থী করা নিয়েও এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘কারও অভিমান থাকতেই পারে। তা কেটে যাবে। রাতাবাড়ি ও পাথারকান্দিতে আমাদের জয় নিশ্চিত।’’
ডিমা হাসাও জেলার হাফলংয়ে টিকিট না পেয়ে দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া পরিষদ সদস্য প্রকান্ত ওয়ারিশা। তাঁর সঙ্গী আরও ১২ জন বিজেপি সদস্যও দলত্যাগের হুমকি দেন। হাফলংয়ে ১২ জন আবেদনকারীর মধ্যে জেলা বিজেপির সভাপতি তথা প্রাক্তন আমলা বীরভদ্র হাগজার ও প্রকান্ত মূল দাবিদার ছিলেন। কিন্তু প্রকান্তকে নিয়ে জেলায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। বিজেপির মধ্যেও প্রকান্তকে নিয়ে অসন্তোষ ছিল। তাই হাগজারকেই বেছে নেয় রাজ্য বিজেপি। এআইইউডিএফ সূত্রে খবর, এই প্রথম হাফলংয়ে তারা মহিলা প্রার্থী দাঁড় করাতে চলেছে। তাদের প্রার্থী হতে পারেন নিকোল হাওলাই।
পূর্ব গুয়াহাটির প্রার্থী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের সমর্থকেরা মিছিল বের করায় ম্যাজিস্ট্রেট লক্ষ্মীনন্দন শহরিয়া ভাঙাগড় থানায় সিদ্ধার্থবাবুর বিরুদ্ধে নির্বাচনবিধি ভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy