লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে খারাপ ফলের পরেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গেল দোষারোপের পালা। সামনে চলে এল দলের দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্ব। ঘটনাচক্রে, দু’জনেই ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ হিসেবে পরিচিত এবং ২০১৩-র মুজফ্ফরনগর গোষ্ঠীহিংসায় অভিযুক্ত। প্রথম জন জাঠ জনগোষ্ঠীর ‘বাহুবলী’, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ান। দ্বিতীয় জন, রাজপুত নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক সংগীত সোম।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মুজফ্ফরনগরে বিপুল ভোটে জেতা সঞ্জীব এ বার সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছেন। আর তার পরেই প্রকাশ্যে তিনি অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তোলেন সংগীতের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘‘আমি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানাব, যাঁরা সমাজবাদী পার্টির পক্ষে প্রকাশ্যে এবং গোপনে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যেন কড়া পদক্ষেপ করা হয়।’’
আরও পড়ুন:
জবাবে সংগীত শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে সদ্যপ্রাক্তন সাংসদ সঞ্জীবের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। নিজেকে বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী বলে দাবি করে সংগীত বলেন, ‘‘অন্যকে দোষারোপ না করে সঞ্জীবের উচিত, কেন ভোটে হারলেন, তা নিয়ে আত্মসমীক্ষা করা। লাগামছাড়া দুর্নীতিই তাঁর পতনের কারণ।’’ প্রসঙ্গত, মেরঠের সরধানা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০১২ এবং ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন সংগীত। কিন্তু ২০২২-এ হেরে যান। এর পরেই সঞ্জীব শিবিরের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছিলেন সংগীত অনুগামীরা।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ২৬টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জিতেছিল বিজেপি। এ বার প্রভাবশালী জাঠ নেতা জয়ন্ত চৌধরির আরএলডির সঙ্গে জোট হওয়ার পরেও সহারনপুর, কইরানা, সম্ভল, মোরাদাবাদ, মুজফ্ফরনগর, নাগিনার মতো আসন হারিয়েছে বিজেপি। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজপুত ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার কারণেই এই বিপর্যয়।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর, গাজিয়াবাদ, সহারনপুর, মিরাট, কইরানা, মুজফ্ফরনগর, বাগপত, বিজনৌর, নাগিনা, আমরোহা, মোরাদাবাদ, সম্ভল, আলিগড়, হাথরস, মথুরা, আগ্রা এবং ফতেপুর সিক্রির মতো আসনে রাজপুত (ঠাকুর) ভোটারদের গড় সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি। রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের নেতাদের অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা বিজেপির ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ব্রাত্য।
আরও পড়ুন:
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ওই অঞ্চলের শুধুমাত্র গাজ়িয়াবাদে রাজপুত প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ভিকে সিংহকে। কিন্তু এ বার ওই আসনেও টিকিট দেওয়া হয়েছে বানিয়া জনগোষ্ঠীর এক নেতাকে। আরএলডির সঙ্গে বিজেপির জোট হওয়ার পরে রাজপুতদের প্রতি উপেক্ষা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই পরিস্থিতিতে গুজরাতের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালার ‘রাজপুত বিরোধী’ মন্তব্যে ‘আগুনে ঘি পড়ে’। সংগীত-সহ বেশ কয়েক জন রাজপুত নেতার অনুগামীরা প্রকাশ্যে বিজেপি বিরোধী প্রচারে শামিল হন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।