এখনও বন্ধ বেশির ভাগ দোকানপাট। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় ঘরবন্দি শ্রীনগর। রবিবার। ছবি: এপি
প্রজাতন্ত্র দিবসের ধাঁচে নয়াদিল্লির রাজপথে ট্যাবলো, বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বছর বল্লভভাই পটলের ১৪৪তম জন্মদিন পালনের সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ঘটনাচক্রে চলতি বছরে ৩১ অক্টোবর বল্লভভাই পটেলের জন্মদিনেই জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে খাতায়-কলমে আত্মপ্রকাশ করবে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল— জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। তাই গোটা দেশকে বার্তা দিতেই ওই দিনটিকে বেছে নিতে চাইছে শাসক শিবির। অবশ্য বিরোধীদের মতে, গোটাটাই রাজনীতি। বছর শেষে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তা মাথায় রেখেই পটেল এবং কাশ্মীর নিয়ে আবেগ খুঁচিয়ে দিয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে উস্কে দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা।
বিজেপির দাবি, স্বাধীনতার সময়ে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের দায়িত্বে পটেল থাকলে জল এত দূর গড়াত না। তখনই সমাধান হয়ে যেত। এ বার তিনশোর বেশি আসনে জিতে এসে সেই ‘ঐতিহাসিক ভুল’ সংশোধনে উদ্যোগী হন মোদী-শাহ জুটি। নতুন সরকারের প্রথম অধিবেশনেই রদ করা হয় কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা। রাজ্যকে ভেঙে দেওয়া হয় দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। স্বাধীনতার সাত দশক পরে কাশ্মীর সমস্যার প্রকৃত সমাধান হয়েছে দাবি করে পটেলের জন্মদিনে গোটা দেশ জুড়ে বড় মাপের অনুষ্ঠান করতে উদ্যোগী হয়েছে শাসক শিবির। উদ্দেশ্য, মোদী-শাহের হাত ধরেই পটেলের স্বপ্ন যে সফল হল, দেশের মানুষকে সেই বার্তা দেওয়া।
পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ৩১ অক্টোবর দিনটি ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে মোদী সরকার। যে অনুষ্ঠান এত দিন সীমাবদ্ধ থাকত মূলত গুজরাত ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। এ বার ঠিক হয়েছে, ওই অনুষ্ঠানের পরিধি গুজরাতে বল্লভভাইয়ের ‘স্ট্যাটু অব ইউনিটি’-তে সীমাবদ্ধ না রেখে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। মূল অনুষ্ঠানটি হবে দিল্লিতে। যার দায়িত্বে থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
২৬ জানুয়ারি রাজপথে বিভিন্ন মন্ত্রক ও রাজ্যগুলি ট্যাবলোর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলে। আগামী ৩১ অক্টোবর ঠিক সেই ধাঁচেই রাজপথে একটি শোভাযাত্রা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিভিন্ন দফতর ও বাছাই করা কিছু মন্ত্রককে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য পটেল সম্পর্কিত ট্যাবলো বানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইনটেলিজেন্স বুরো, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলি, সবক’টি আধা সেনার প্রধান ও কেন্দ্রীয় পুলিশ সংগঠনগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরালে শোভাযাত্রা সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশের ডিজিকেও নিজেদের রাজ্যে কী ভাবে ওই অনুষ্ঠান পালন করা যায়, তার একটি রূপরেখা তৈরি করে তা পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এ বছর থেকে ওই দিন সর্দার পটেলের নামে সংহতি পদক দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র সূত্র জানিয়েছে, যে সমস্ত সাধারণ নাগরিক বা উর্দিধারী ব্যক্তি নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে অগ্রাহ্য করে সমাজ গঠনে ও সংহতি রক্ষায় ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাঁদের অবদানকে সে দিন স্বীকৃতি দেবে কেন্দ্র।
রাজনৈতিক ভাবেও ওই দিনটিকে ব্যবহার করে প্রচারে ঝাঁপাতে চাইছে বিজেপি। বছরের শেষে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। তিন রাজ্যেই ক্ষমতায় বিজেপি। ফলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাশ্মীরের ‘সাফল্য’কে তুলে ধরে জাতীয়তাবাদের তাস খেলার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। ওই তিন রাজ্যে বল্লভভাইয়ের স্বপ্নকে কী ভাবে মোদী-অমিত শাহ সফল করলেন, তা ফলাও করে প্রচারে নামবে দল। তেমনি দেশের যে প্রায় দু’শোটি আসনে বিজেপি জিততে পারেনি, সেখানেও শোভাযাত্রা করে বিজেপির কাশ্মীর সাফল্যকে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। পটেলের মতো কংগ্রেসের নেতাকে বিজেপি নিজেদের ‘আইকন’ হিসেবে তুলে ধরায় শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ভোট ছাড়া কিছ ভাবতে পারে না। ভোটের ফায়দা নিতেই এ ভাবে পটেলের জন্মদিনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে শাসক দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy