পানিপথে বিজেপির অস্থায়ী অফিসে গড়গড়ায় টান। নিজস্ব চিত্র
ক্ষুধা সূচকে ভারত যে বিশ্বে শেষ বেঞ্চে, শুনারো দেবী, হাসমুখীরা তা জানেন না। শুধু জানেন, রাস্তার পাশে দিনভর বসে চাটাই বানিয়েও এক বেলা ভরপেট খাবার জোটে। অন্য বেলা বড়জোর আধপেটা!
অসময়ের বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়েছে চাষের। গলা পর্যন্ত লোকসান। চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়ার প্রশ্ন তাই মস্করা ঠেকে অরবিন্দ সাহানি, ছোট্টু রাই যাদবদের কানে। কাঁধের কোদাল জমিতে নামিয়ে কথার মাঝেই হাতজোড়। অর্থাৎ, ‘নমস্কার, এ বার আসুন’।
কিন্তু ভোটের কথা উঠলে এই হাসমুখী, অরবিন্দ, রোশন লালরাই বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর পদ্মেই বোতাম টিপবেন তাঁরা। হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে ফিরবেন মনোহর লাল খট্টরই। তাই যে পানিপথ ইতিহাসের মোড় ঘোরানো তিন-তিনটি যুদ্ধের সাক্ষী, সেখানে ব্যালটের লড়াইয়ে উত্তাপ তেমন নেই। রাস্তার পাশে হাত চিহ্নের পতাকা লাগানো ট্রাক্টরে নীতীশ যাদব-সহ যে কয়েক জন কংগ্রেস সমর্থকের সঙ্গে দেখা হল, তাঁদেরও অভিযোগ, “দল গা লাগাচ্ছে কই? প্রচারে দম নেই। ঝাঁজই নেই নেতাদের বক্তৃতায়।”
প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী বলেছিলেন, “বাকি সব বিষয়ে আমার জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি নিয়ে সন্দেহ না-রাখাই ভাল।” দিনভর পানিপথে চক্কর কেটে টের পাওয়া গেল, অর্থনীতির এই চরম দুর্দশার দিনেও জনতার মনে এ ভাবে সেঁধিয়ে যেতে পারেন কেউ। পাঁচ বছর আগে প্রবল মোদী-হাওয়ায় প্রথম বার হরিয়ানার তখত দখল করেছিল বিজেপি। এ বারও বিধানসভার নব্বই আসনে প্রার্থী তিনিই। ভোট তাঁর নামেই। এমন নয় যে, মুখ্যমন্ত্রী খট্টরের কাজে সকলে অখুশি। বরং রাম কুমার, সুধীর কৌশিক, রমেশ লালদের দাবি, “সরকারি চাকরি পেতে ঘুষের রেওয়াজ কমেছে। বেড়েছে মেয়েদের নিরাপত্তা। তাদের স্কুলে যাওয়াও বেড়েছে বেটি বঁচাও-বেটি পড়াও প্রকল্পের দৌলতে।”
পরিসংখ্যানও বলছে, বার বার কন্যাভ্রুণ হত্যার অভিযোগ ওঠা এই রাজ্যে পাঁচ বছরে সামান্য হলেও শুধরেছে নারী-পুরুষের অনুপাত। কিন্তু বাজার-দোকান, রাস্তার মোড়, কারখানার গেট থেকে জমির আল—সর্বত্র এই সাফল্যের ফিরিস্তি আসছে অনেক পরে। আগে জায়গা পাচ্ছে কেন্দ্রে মোদীর ‘সাফল্যের আখ্যান’। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার ছাতি, পাকিস্তানকে চোখে চোখ রেখে জবাব দেওয়ার কলজে, এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাঁধে হাত রাখার ‘সাহসও’ অনেক তল্লাটে ‘সুপারহিট’। যে রাজ্য থেকে সেনায় যোগদানের অনুপাত অন্যতম বেশি, সেখানে তা হয়তো খুব অস্বাভাবিকও নয়। সঙ্গে বিজেপির ভোট-মেশিনারি। আর অঢেল অর্থের জোগান। যার জোরে দিল্লি থেকে পানিপথের রাস্তায় তেমন নামডাকহীন রই বিধানসভা জিততেও বিজেপির অস্থায়ী ভোট-অফিস গাড়িতে ছয়লাপ। থাকা-খাওয়ার ঢালাও বন্দোবস্ত কর্মীদের। বাদ নেই গড়গড়াও!
পাশাপাশি এখনও রাফাল-আক্রমণেই আছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ বুমেরাং হচ্ছে দেখেও একই পথে হাঁটছেন স্থানীয় নেতারা। আর দুর্নীতির দায়ে জেলবন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওম প্রকাশ চৌটালার পারিবারিক বিবাদে তাঁর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের জাঠ ভোট ভেঙে ছত্রখান।
কিন্তু ‘সেনাপতি’ অমিত শাহ জানেন, দিল্লি থেকে প্রায় নব্বই কিলোমিটার দূরের এই পানিপথেই আচম্বিতে মোড় ঘুরে গিয়েছে বহু যুদ্ধের। অনেক কম সেনা নিয়েও সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন বাবর। এগিয়ে থেকেও শেষে সম্রাট আকবরের কাছে হারতে হয়েছিল ‘দিল্লির রাজা’ হিমুকে। আফগানদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন পরাক্রমী মরাঠারাও। ভোটের পানিপথে যাতে তেমন না-ঘটে, সে বিষয়ে সাবধান করে গিয়েছেন অমিত।
জয়ের প্রশ্নে বিজেপি হাসমুখীর মতোই ক্ষুধার্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy