প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রাজস্থানে বিজেপি-কংগ্রেস তুল্যমূল্য ভোট পেলেও, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির ‘আশাতীত’ ভোট প্রাপ্তি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সাহায্য করেছে নরেন্দ্র মোদীর দলকে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই দুই রাজ্যে গত বারের ধাঁচেই নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস। তা সত্ত্বেও মধ্যপ্রদেশে প্রায় সাত শতাংশ ও ছত্তীসগঢ়ে তেরো শতাংশ ভোট বৃদ্ধির পিছনে বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মহিলা ভোটারদের বিপুল সমর্থন, মেরুকরণের ফলে হিন্দু ভোটের বেশির ভাগটা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে যাওয়ার পাশাপাশি ‘ডাবল ইঞ্জিনে’র সরকারের উপর ভরসা করেছেন দুই রাজ্যের মানুষ।
মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ভোট পেয়েছে মোট ভোটের প্রায় ৪৮.৫৫ শতাংশ। যা গত বারের চেয়ে প্রায় সাত শতাংশ বেশি। অন্য দিকে কংগ্রেস ২০১৮ সালে ভোট পেয়েছিল ৪০.৮৯ শতাংশ। আর এ যাত্রায় পেয়েছে ৪০.৪০ শতাংশ। যার অর্থ হল মাত্র আধ শতাংশ ভোট কমেছে কংগ্রেসের।
অন্য দিকে, ছত্তীসগঢ়ে ২০১৮ সালে মাত্র ১৫টি আসন জেতা বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার ছিল ৩২.৯ শতাংশ। এ বার ৫৪টি আসন পাওয়া বিজেপি জনজাতিপ্রধান ওই রাজ্যে ভোট পেয়েছে ৪৬.২৭ শতাংশ। যা গত বারের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। অন্য দিকে, পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৩.০৪ শতাংশ ভোট। রাহুল গান্ধীর দল এ বার পেয়েছে ৪২.২৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও কংগ্রেসের এক শতাংশের কম ভোট কমেছে। যা খুবই সামান্য।
প্রশ্ন হল, ওই দুই রাজ্যে কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা সত্ত্বেও বিজেপির ভোট বৃদ্ধি হল কী ভাবে? বিজেপি নেতৃত্বের মতে, মহিলাদের বিপুল সমর্থন দলের পক্ষে গিয়েছে। লাডলি বহেনা যোজনায় মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার কারণে দলে দলে মহিলারা পদ্মে ভরসা করেছেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, ভোটের দিন বুথে-বুথে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, এ বার মধ্যপ্রদেশে সার্বিক ভাবে ভোটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছর আগে যেখানে ৭৫.৬৩ শতাংশ ভোটদান হয়েছিল, এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৭.৮২ শতাংশে। বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, মহিলারা দলে দলে ঘর ছেড়ে বের হওয়াতেই সার্বিক ভোটদানের হার প্রায় দু’শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে ভোটের বেশিটাই পেয়েছে বিজেপি।
মধ্যপ্রদেশে লাডলি বহেনা যোজনার নগদ অর্থ গিয়েছে মুসলিম মহিলাদের হাতে। বিজেপির পর্যবেক্ষণ, মুসলিম পুরুষের কাছে টানতে না পারলেও, মুসলিম মহিলাদের কাছে ক্রমশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিজেপি। বিশেষ করে তিন তালাক প্রথা রদ, মহিলা সংরক্ষণ ও সর্বোপরি হাতে নগদ টাকা পৌঁছনোয় মুসলিম মহিলারা বিজেপিকে বিকল্প হিসাবে বেছে নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। যা মধ্যপ্রদেশে গেরুয়া শিবিরের সার্বিক ভোট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিজেপির নেতৃত্বের মতে, বছর দুই আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও মুসলিম মহিলারা বড় সংখ্যায় বিজেপির সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। মধ্যপ্রদেশেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। যা আসন্ন লোকসভার আগে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছে বিজেপি।
মধ্যপ্রদেশে জনজাতি ভোটের বড় অংশও নিজের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যের প্রায় ২০-২২ শতাংশ মানুষ জনজাতি শ্রেণির। জনজাতিপ্রধান আলিরাজপুর, সেনধাওয়া, বারওয়ানির মতো জায়গাগুলিকে অতীতে কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসাবে ধরা হত। সেখানে এ বার সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজনীতিকদের মতে, কংগ্রেসের সংগঠন যখন ভোটের আগেই আত্মতুষ্টিতে গা-ঢিলে দিতে শুরু করে, তখন অমিত শাহের কড়া নজরদারিতে শেষ এক-দেড় মাস সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপান বিজেপির কর্মী-সমথর্কেরা। বিশেষ করে ‘ফ্লোটিং ভোটার’ (যাঁরা শেষ মুহূর্তে কাকে ভোট দেবেন বলে স্থির করেন)-দের কাছে টানতে ভোটের ঠিক আগে তুমুল প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। অভিযোগ, শেষ পর্বের ওই প্রচার অনেক ক্ষেত্রেই মেরুকরণের লক্ষ্যে চালানো হয়েছিল। যে ভোট বিজেপির বাক্সে গিয়েছে। শেষ মুহূর্তে বিজেপির ওই প্রচার কৌশলের তল পায়নি কংগ্রেস।
এ ছাড়া ফল বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশে বিএসপি, এসপি বা জিজিপি-র মতো দলগুলির অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যার অর্থ পাঁচ বছর আগেও এই দলগুলি বেশ কিছু আসন জিতলেও, এ বার বিজেপির প্রচারে ভরসা রেখেছে ওই ভোটারেরা। বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, জাতভিত্তিক দলের ভোটারেরা সাধারণত একজোট হয়ে একটি দলকে ভোট দেন। এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন তাঁরা।
ভোটপ্রাপ্তিতে বৃদ্ধির দিক থেকে বিজেপির সবথেকে ভাল ফল হয়েছে ছত্তীসগঢ়ে। যদিও বুথ ফেরত সমীক্ষা আসার আগে পর্যন্ত ওই রাজ্যে দল জিততে চলেছে বলে দাবি করতে দেখা যায়নি বিজেপির ছোট-বড় কোনও নেতাকেই। দলের এই বিপুল পরিমাণে ভোট বৃদ্ধির পিছনে জনজাতি সমাজের ভূমিকা সবথেকে বেশি বলেই মনে করছে বিজেপি। পাঁচ বছর আগে ওই রাজ্যে জনজাতি ভোটের অধিকাংশ পেয়েছিল কংগ্রেস। পরবর্তী সময়ে দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করা, বিরসা মুন্ডাকে বিশেষ সম্মান জানানোর কৌশল যেমন জনজাতি সমাজের মধ্যে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে তেমনই প্রচারে নেমে বিজেপি নেতারা দেখতে পান, প্রত্যন্ত জনজাতি এলাকায় কংগ্রেস আমলে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কেন্দুপাতা সংগ্রহকারীরা। যা জনজাতি সমাজের অন্যতম জীবিকা ওই রাজ্যে। অতীতে বিজেপির রমন সিংহের সরকারের মতোই তাঁদের জন্য বিশেষ বোনাস, জুতোর ব্যবস্থা, জঙ্গলে পাতা কুড়াতে গিয়ে মারা গেলে বিমাসুরক্ষার মতো প্রতিশ্রুতির ঘোষণায় জনজাতি সমাজে বিপুল সাড়া পাওয়া যায়।
ক্ষমতায় এলে মধ্যপ্রদেশের লাডলি বহেনা যোজনার ধাঁচে ছত্তীসগঢ়ে মাতৃ বন্দনা যোজনা (বছরে এক হাজার টাকা করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি) শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপি। শুধু তাই নয়, কারা ওই সুবিধে পাবেন এমন প্রায় ৫০ লক্ষ মহিলার একটি তালিকাও তৈরি হয়। যাঁদের ভোটের আগের দিন ফোন করে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের মতো ছত্তীসগঢ়ে মহিলারা জয়-পরাজয়ের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ভোটের সময় তলে তলে মেরুকরণের প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। যা ওই রাজ্যে হিন্দু ভোট পদ্ম শিবিরের পক্ষে আনতে পেরেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy