Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

হিন্দুদের পথে নামানো কৌশল এখন বিজেপির

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ঠেলায় নিজের রাজ্য গুজরাত সফরও বাতিল করতে হচ্ছে অমিত শাহকে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

দিন একটি ইট আর ১১ টাকা! অযোধ্যায় রামমন্দিরের জন্য দেশের সব নাগরিকের কাছে হাত পাতছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এগারো কেন? দশ নয় কেন? বিজেপির যুক্তি, আগেপিছে সংখ্যাটি যাই হোক, ওই এক টাকাতেই ষোলোআনা মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ঠেলায় নিজের রাজ্য গুজরাত সফরও বাতিল করতে হচ্ছে অমিত শাহকে। কিন্তু ঘটা করে বলছেন, অযোধ্যায় গগনচুম্বি রামমন্দির হবে। চার মাসের মধ্যে শুরু হবে সে কাজ। আর এই মন্দিরের জন্য সররকার কোনও টাকা খরচ করবে না। আমজনতার থেকেই চাওয়া হবে মন্দির গড়ার অর্থ। যেমন বলা, তেমনই কাজ। অমিত শাহও বললেন, যোগীও সঙ্গে সঙ্গে চাঁদা চাইলেন। কিন্তু অযোধ্যাকে ঘিরে গেরুয়া শিবিরের এই তৎপরতা নিছক মন্দির গড়া নিয়ে ভাবলে ভুল হবে। গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, গত কয়েক দিন ধরেই অযোধ্যা নিয়ে ভোট প্রচারেও ঘনঘন বলছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। অথচ গত লোকসভাতেও এই নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। এখন কেন?

বিজেপি শিবিরের মতে, এটিও হিন্দুত্বের প্রচার। এর মধ্যে সুকৌশলে লুকিয়ে আছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে রাজনীতিও। গত কয়েক দিন ধরেই এই আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। যাঁদের না কি ‘পোশাক’ দেখেই চিনে ফেলছেন মোদী-শাহ। অর্থাৎ, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ইঙ্গিত, সংখ্যালঘুরাই তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এর পাল্টা কৌশল কী হতে পারে? হিন্দুদের পথে নামানো। এ বারে সেই পথেই হাঁটতে চাইছে বিজেপি। ২০০২ সালের পরে মোদীর পক্ষে যে ভাবে প্রচার হয়েছিল, এখন সেটিকেই আবার নতুন করে ঝালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘মুসলিমদের এত দেশ, হিন্দুদের তো একটাও নেই’, আক্ষেপ গডকড়ীর

বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালব্য। আজ সকালে অনেকটা ‘তোমাকে চাই’ গোছের টুইট করলেন, ‘‘বিরোধী দল, পাকিস্তান, সংবাদমাধ্যম, বিশিষ্টজন, অপরাধী, দুর্নীতিগ্রস্ত, সকলে মোদীর বিরুদ্ধে। কিন্তু সাধারণ মানুষ আপনার পাশে। কারণ, আপনাকে চাই।’’ কংগ্রেসকে আক্রমণের নামে হুঁশিয়ারি দিলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস দেশের নীরব সংখ্যাগুরুর ক্ষতি করেছে। গেরুয়া সন্ত্রাস তকমা লাগানো হয়েছে। ’১৪ ও ’১৯ সালে তাঁরা জবাব দিয়েছেন। এ বারও দেবেন।

‘পাকিস্তান’ প্রসঙ্গ তুলে মোদী ইতিমধ্যেই মেরুকরণের তাস খেলছেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন কংগ্রেসকে। আজ যার জবাব দিয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু বিজেপি যে এই বিষয়টি জিইয়ে রাখতে চায়, সে বার্তা দলের নিচু তলার কাছে স্পষ্ট। যে কারণে তারাই বলছে, অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের চাঁদা তোলার অভিযানও আসলে হিন্দুদের সংগঠিত করা। রাজ্যে রাজ্যে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে নামানো হয়েছে ছাত্রদেরও। সক্রিয় আরএসএসের সংগঠনও। নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে কাল দিল্লির রাজঘাটে অবস্থান করবেন ভিন্‌‌ দেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি নির্বিশেষে অমুসলিমরা। অবশ্যই গেরুয়া শিবির একজোট করেছে এঁদের!

আজ কর্নাটকের বিজেপি সরকার জানিয়েছে, কোনও রকম বিক্ষোভ-আন্দোলনে যাতে জনজীবন ব্যহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাল ভোর ছটা থেকে বেঙ্গালুরু-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ হবে। চলবে ২১ ডিসেম্বর মাঝরাত পর্যন্ত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE