Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

মনমোহনকে ঢাল করছে মোদীর দল!

২০০৩ সালে মনমোহন সিংহ ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। বিজেপি আজ বের করল, সে বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাজ্যসভার এক আলোচনার অংশ।

মনমোহন সিংহ।—ছবি পিটিআই।

মনমোহন সিংহ।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করবে কংগ্রেস, আজ স্পষ্ট ভাবেই এ কথা জানিয়ে দিলেন রাহুল গাঁধী। এই বিলের বিরোধিতায় গোটা বিরোধী শিবিরকে একজোট রাখতে চাইছে কংগ্রেস। বিজেপির সঙ্গত্যাগ করা শিবসেনার পুরনো অবস্থান বদলানোরও চেষ্টা চলছে। এমনই এক সময়ে মনমোহন সিংহের ষোলো বছরের পুরনো এক মন্তব্যকে সামনে নিয়ে এল বিজেপি। যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন অসম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন।

২০০৩ সালে মনমোহন সিংহ ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। বিজেপি আজ বের করল, সে বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাজ্যসভার এক আলোচনার অংশ। সেখানে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর উদ্দেশে মনমোহন বলছেন, ‘‘দেশভাগের পরে বাংলাদেশের মতো দেশে সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। পরিস্থিতি যদি এই হতভাগ্য মানুষদের আমাদের দেশে শরণ নিতে বাধ্য করে, তা হলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আরও উদার মনোভাব নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। আশা করব, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের সময় উপপ্রধানমন্ত্রী এটিকে মাথায় রাখবেন।’’ এটি শুনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদেরও খেয়াল রাখতে। আর আডবাণীও বলেন, ‘‘আমি পুরোপুরি একমত।’’

এটিকে সামনে রেখেই বিজেপি আজ দিনভর প্রচার করল, ‘‘নাগরিকত্ব বিলে আমরা তো ঠিক এটাই বলতে চাইছি, যেটি মনমোহন সিংহ বলেছেন। তা হলে কীসের বিরোধিতা?’’ কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, যে মর্মে এর আগে এই বিল এনেছিল বিজেপি সরকার, আর যে কথা বলে ফের এই বিল আনতে চাইছে, তাতে স্পষ্ট শুধুমাত্র ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতেই বিল আনা হচ্ছে। আর তাতে বাদ থাকছে শুধু মাত্র মুসলিমরা। ফলে এই ভাবনাটিই পুরোপুরি সংবিধান বিরোধী। কেরলে নিজের কেন্দ্রে পা রেখে রাহুল গাঁধী আজ তাই প্রথমেই স্পষ্ট বলে দেন, ‘‘কংগ্রেস এই বিলের বিরোধিতা করবে। কারণ, ভারতের ভাবনাকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এতে। যে কোনও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কংগ্রেস। আমরা মনে করি, ভারত সকলের। সব সম্প্রদায়, ধর্ম ও সংস্কৃতির।’’ এই সূত্র ধরে দেশের আর্থিক সঙ্কট নিয়েও সরাসরি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের কাল্পনিক দুনিয়ায় থাকেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। বাইরের জগতের সঙ্গে কোও যোগ নেই। সে কারণেই দেশে এত সঙ্কট। মোদী যদি মানুষের কথা শুনতেন, দেশে এত সমস্যা থাকত না।’’

লোকসভায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু রাজ্যসভায় নয়। তবুও টেনেটুনে, কৌশলে সেখানে সংখ্যা অনুকূলে যাবে বলেই বিজেপির বিশ্বাস। এনডিএ-র বাইরে নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বিজেপির কথা হয়েছে। আজ জগন্মোহন রেড্ডিও দিল্লি আসছেন মোদী-শাহদের সঙ্গে দেখা করতে। তার উপর মহারাষ্ট্রে সঙ্গত্যাগ করলেও শিবসেনা অনুপ্রবেশ রোখার নামে এই বিলকে সমর্থনের কথআ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সংসদে অঙ্কের লড়াই যা-ই হোক, বিরোধী শিবিরকে অটুট রাখতেই এখন মরিয়া কংগ্রেস।

রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ আজ সংসদ ভবন চত্ত্বরে নিজের ঘরে তৃণমূল, এনসিপি, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, সিপিএম-সিপিআই সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেন। ৪৫ মিনিটের বৈঠকে স্থির হয়েছে, সংসদে ভোটাভুটির আগে বিরোধীরা বিষয়টিকে একযোগে মানুষের দরবারে নিয়ে যাবে।

সংসদেও একই সুরে কথা বলবে। বিজেপির ‘মিথ্যা’ প্রচারের মুখোশও খোলা হবে। তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আগামিকাল থেকে সোমবার অবধি এই প্রক্রিয়া চলবে।’’

বিএসপি এই বৈঠকে না থাকলেও সকালেই মায়াবতী বিলের বিরোধিতা করে এটিকে কমিটিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন। কংগ্রেস বলছে, উদ্ধব ঠাকরেকেও বলা হবে মহারাষ্ট্রে এখন অভিন্ন কর্মসূচি মেনেই সরকার চলছে। ফলে কংগ্রেস-এনসিপির ভিন্ন অবস্থান কেন নেবে সেনা?

অন্য বিষয়গুলি:

CAB BJP Congress Manmohan Singh Parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy