ইনফোসিস ফাইল চিত্র
টাটা গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্তার দিকে আঙুল তুলে মোদী সরকারের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল প্রশ্ন করেছিলেন, দু’একটা বিদেশি সংস্থা কিনে ফেলেছেন বলে কি তাঁদের গুরুত্ব জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে!
এ বার আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকায় ইনফোসিসের দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হল, কোনও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি কি ইনফোসিসের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করতে চাইছে? দেশের প্রথম সারির এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে নকশাল, বামপন্থী ও ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-কে আর্থিক সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে বলেও পাঞ্চজন্য পত্রিকায় দাবি করা হয়েছে।
পাঞ্চজন্য এই অভিযোগ তোলার পরে শিল্পমহলে প্রশ্ন ওঠে, মোদী সরকার, বিজেপি, আরএসএসেরও কি একই মত? কারণ ইনফোসিসের তৈরি সরকারি আয়কর রিটার্ন ফাইলের ওয়েব পোর্টালে সমস্যা হচ্ছে এবং তা ঠিকমতো কাজ করছে না বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইনফোসিসের সিইও সলিল পারেখকে দিল্লিতে তলব করেছিলেন।
শিল্পমহলে চাঞ্চল্য তৈরি হওয়ায় আজ আরএসএসের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুনীল অম্বেকর দাবি করেছেন, পাঞ্চজন্য আরএসএসের মুখপত্র নয়। ওই নিবন্ধের সঙ্গে আরএসএসের যোগ খোঁজাও ঠিক নয়। ইনফোসিস সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে অম্বেকর বলেন, ‘‘ভারতীয় সংস্থা হিসেবে দেশের উন্নতিতে ইনফোসিসের প্রভূত অবদান রয়েছে। ইনফোসিস-চালিত একটি পোর্টালে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। এ বিষয়ে পাঞ্চজন্যে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখকের মতামত ব্যক্তিগত।’’
তাৎপর্যপূর্ণ হল, ইনফোসিসের সঙ্গে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির যোগাযোগের’ অভিযোগ তোলা হলেও এ নিয়ে বণিকসভাগুলি মুখ খোলেনি। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকম-ও এ নিয়ে কিছু বলেনি। উল্টো দিকে সরকারের তরফেও এ বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও কোনও মন্তব্য করেননি। সূত্রের খবর, বণিকসভাগুলি প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও সরকারের উপরে এ বিষয়ে চাপ তৈরি হয়েছে। ইনফোসিসের সদর দফতর বেঙ্গালুরুতে। অর্থমন্ত্রী সীতারামন রবিবার বেঙ্গালুরুতেই সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ইনফোসিসের দিকে আঙুল তোলার ফলে ওই সংস্থার লক্ষাধিক কর্মী ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের লাখো কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা ছিল। ফলে এ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার হয়ে পড়ে। সেই কারণেই আরএসএস মুখপাত্রকে দিয়ে পাঞ্চজন্যের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি
করানো হয়।
১৯৪৮ সালে আরএসএস ও জনসঙ্ঘের নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত পাঞ্চজন্য পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। গাঁধী-হত্যার পরে এই পত্রিকা বন্ধ করে দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আরএসএসের শীর্ষ নেতারা ও বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা নিয়মিত এই পত্রিকায় লেখালেখি করেন। পাঞ্চজন্য তাদের মুখপত্র নয় বলে এখন আরএসএস দাবি করলেও পত্রিকার সম্পাদক হিতেশ শঙ্কর ওই নিবন্ধটির অবস্থানেই অটল রয়েছেন।
নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে— ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন নারায়ণমূর্তির মতাদর্শগত অবস্থান যে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে, তা অজানা নয়। আর এক প্রধান নন্দন নিলেকানি কংগ্রেসের টিকিটে
ভোটেও লড়েছেন। এর আগে ইনফোসিসের তৈরি জিএসটি ও কর্পোরেট মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও একই সমস্যা হয়েছে। বারবার একই ঘটনা হলে সন্দেহ তৈরি হবেই। নিবন্ধে আরও দাবি করা হয়েছে যে, ইনফোসিসের বিরুদ্ধে নকশাল, বামপন্থী ও টুকরে টুকরে গ্যাংকে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোয় জড়িত কিছু সংগঠনও নাকি ইনফোসিসের সমাজসেবার অর্থ পেয়েছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, দেশের একটি কর্পোরেট সংস্থার উপরে এ ভাবে কালি ছেটানোর চেষ্টা হচ্ছে দেখেও প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদী চুপ কেন? শিল্পমহলও কেন মুখ খুলছে না? তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামেই অংশ নেয়নি, তারা এখন দেশপ্রেমের শংসাপত্র বিলি করছে! সরকার আসলে সবাইকে হুমকি দিয়ে,
ভয় দেখিয়ে রাখতে চাইছে।’’ শিবসেনার নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও শিল্পমহলের কর্তাদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘প্রথমে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী টাটাদের
আক্রমণ করলেন। তার পরে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত পাঞ্চজন্য বলছে, ইনফোসিস রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির সঙ্গে কাজ করছে। শিল্পমহলের প্রধানেরা নীরব।’’
অগস্ট মাসে বণিকসভার অনুষ্ঠানেই টাটা গোষ্ঠীকে আক্রমণ করেছিলেন পীযূষ গয়াল। তাঁর অভিযোগের কারণ ছিল, ক্রেতাদের স্বার্থে তৈরি সরকারি বিধিনিয়মের বিরোধিতা করেছে টাটা গোষ্ঠী। বণিকসভার ওই অনুষ্ঠানের মধ্যেই টাটা সন্স-এর প্রেসিডেন্ট (ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ডিফেন্স, এরোস্পেস) বনমালী আগরওয়ালের উদ্দেশে গয়াল বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের মতো সংস্থা, বোধ হয় দু’একটা বিদেশি সংস্থা কিনে ফেলেছেন, তাই গুরুত্ব বেশি হয়ে গিয়েছে? দেশের স্বার্থ কম হয়ে গিয়েছে?’’ টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনকেও তিনি ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন বলে গয়াল বলেন, ‘‘আমি, আমার, আমার সংস্থা— এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বণিকসভার কর্তা বলেন, ‘‘মোদী সরকার এক দিকে আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলছে। অন্য দিকে দেশীয় সংস্থাগুলিকেই নিশানা করছে। হয়তো এখনই শিল্পমহল মুখ খুলছে না। কিন্তু তা বলে এ নিয়ে বিরক্তি তৈরি হচ্ছে না, এমন নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy