এ ভাবে মোটরসাইকেলে বসিয়ে স্ত্রীর দেহ আঁকড়ে শঙ্কর শাহ।
দারিদ্রের যন্ত্রণা মৃত্যুর পরও পিছু ছাড়ে না। তাই শুধুমাত্র অর্থের অভাবে হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর দেহ বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে একটা অ্যাম্বুল্যান্সও পেলেন না বৃদ্ধ। কারণ, হাসপাতাল থেকে বাড়ি পর্যন্ত দেহ নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ ছিল না তাঁর। অপারগ হয়ে মোটরসাইকেলে বসিয়ে স্ত্রীর দেহ আঁকড়ে কোনও মতে বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ।
শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের পূর্ণিয়ার জেলা সদর হাসপাতালে। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ শঙ্কর শাহ বলেন, “আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর যখন আমায় দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে বলা হল, আমি হাসপাতালের কর্মীদের অনুরোধ করি একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু ওরা আমায় বলল, ওরা কোনও সাহায্য করতে পারবে না, যা করার নিজেকেই করে নিতে।” শঙ্কর আরও জানান, এর পর অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে স্ত্রীর দেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে চালক ২৫০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। অনেক অনুরোধেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে ছেলে পাপ্পুর মোটরসাইকেলে বসিয়েই স্ত্রীর দেহ বাড়ি নিয়ে আসতে বাধ্য হন শঙ্কর।
পূর্ণিয়ার জেলা সদর হাসপাতাল।
যদিও গোটা ঘটনাকে মিথ্যে বলে দাবি করে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঘটনার সময় হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ছিলই না। আর যে অ্যাম্বুল্যান্সটির কথা বলা হচ্ছে সেটি অকেজো।
আরও পড়ুন: মন্ত্রীকে এমআরআই মেশিনে ঢোকাতেই ছিটকে বেরোল কোমরে থাকা পিস্তল
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, বিহারে এমন অমানবিক ঘটনা কিছু নতুন নয়। দিন দু’য়েক আগেই মুজাফফরপুরের শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য একটি দেহ ময়লার গাড়িতে করে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এ বছরের মার্চেই মুজাফ্ফরপুরের জেলা সদর হাসপাতাল এমনই একটি অমানবিক ঘটনার জন্য খবরের শিরোনামে এসেছিল। ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও রকম সাহায্য না পেয়ে মৃতের পরিজনরা প্রথমে প্রায় ৫০০ মিটার পথ দেহ কাঁধে নিয়ে হেঁটে বড় রাস্তায় পৌঁছন। পরে সেখান থেকে একটা অটো জোগাড় করে কোনও মতে তাতে দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের।
এমন ঘটনা একের পর এক ঘটার পর এবং তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার পরও বিহারের দুর্ভোগ-চিত্রটা যে একটুও বদলায়নি, ফের তার প্রমাণ মিলল শঙ্করের ঘটনায়।
ছবি: সংগৃহীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy