নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ’ নয়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সংযোজক বা সমন্বয়কারীর ভূমিকায় দেখা যাতে পারে। বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, এ বিষয়ে সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিক মতো এগোলে গত সপ্তাহে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়ে যেত। কিন্তু কিছু ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
গত কালই নীতীশ কুমার ফের জেডিইউ-র সভাপতি পদে ফিরেছেন। এর পরে তাঁকে ‘ইন্ডিয়া’র সংযোজকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মতামতের উপরে। নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী জোট তৈরি করতে নীতীশ কুমারই প্রথমে দিল্লিতে এসে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বাম-সহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তখন থেকেই জল্পনা চলছিল, নীতীশকে বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়কের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। পটনাতেই ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম বৈঠক হয়। কিন্তু তার পরে বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক হলেও এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। গত সপ্তাহে দিল্লিতেও বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকের পরেই নীতীশ ক্ষুব্ধ কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার দিল্লিতে জেডিইউ-র সাংগঠনিক বৈঠকে ফের দলের জাতীয় সভাপতির পদে নীতীশের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
বিরোধী শিবিরের একটি সূত্রের দাবি, গত সপ্তাহে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকেই নীতীশের নাম বিরোধী জোটের সংযোজক হিসেবে প্রস্তাবের পরিকল্পনা ছিল। বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসেবে আচমকা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁকে সমর্থন করেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। খড়্গে তা নাকচ করেন। এর পরে নীতীশের নাম প্রস্তাবের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাঁর বক্তৃতার সময়ে এম কে স্ট্যালিন, টি আর বালুর মতো ডিএমকে নেতারা হিন্দি বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ চাইলে নীতীশ মেজাজ হারান। তিনি বলেন, হিন্দুস্তানে থাকলে হিন্দি জানা দরকার। এই তিক্ততায় পুরো পরিকল্পনা কেঁচে যায়।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, নীতীশকে ‘ইন্ডিয়া’র সংযোজকের ভূমিকায় দেখা গেলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার প্রশ্ন নেই। মমতা-কেজরীওয়ালদের প্রস্তাব খড়্গে নিজেই নাকচ করে দেওয়ার পরে শরদ পওয়ার বলেছেন, বিরোধী জোটে কোনও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী থাকার দরকার নেই। কংগ্রেসও তাঁকে সমর্থন করে ‘ম্যায় নহি, হম’-এর নীতির কথা বলেছে। কংগ্রেস আপাতত পুরো নজর দিচ্ছে আসন সমঝোতার দিকে। শুক্র ও শনিবার কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটি উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র-সহ সব রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা সেরে ফেলেছে। মুকুল ওয়াসনিক, অশোক গহলৌত, ভূপেশ বঘেলদের কমিটি এ বার খড়্গে, রাহুলের সঙ্গে দেখা করে রিপোর্ট দেবে।
তৃণমূলের মতো বেশ কিছু দল দাবি তুলেছিল, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতা সেরে ফেলতে হবে। রবিবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, আগামী সপ্তাহেই আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সবার আগে জোট কমিটি কথা বলেছে। রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ বহরমপুরে তাঁর জোট নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “জোটের সম্ভাবনা তো দিদি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। দিদি নিজেই জোট চান না। কারণ, জোট করতে গেলে তাঁর অসুবিধা আছে। তাঁকে যে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে তাতে জোট করতে গেলে অসুবিধা আছে তাঁর। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। এই বাংলায় কে এল, কে গেল তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।”
কংগ্রেসের রণনীতি নিয়ে অধীরের মন্তব্য, “আগেও বলেছি, আজও বলছি এ বাংলায় কংগ্রেস নিজের শক্তিতে লড়ার ক্ষমতা রাখে। যেখানে আমাদের নিজের ক্ষমতা আছে, সেখানে আমরা লড়ব— এটা আমাদের স্পষ্ট কথা। কে আমাদের সঙ্গে এল, কে গেল তার আমরা ধার ধারি না। এই মুর্শিদাবাদ জেলায় এক বার নয়, তৃণমূলকে আর বিজেপিকে বার বার হারিয়েছি। আবার হারাব।’’ তাৎপর্যপূর্ণ হল, মমতা যে খড়্গের নাম প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন, অধীর আজ তারও সমালোচনা করে বলেছেন, এটা উচিত হয়নি। অধীরের বক্তব্য, “দিদি সব জায়গায় দিদিমাগিরি করেন। দিদি সব জায়গায় ঠিক করছেন, মোদীর বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে, প্রধানমন্ত্রী কে হবে। দিদি সব জায়গায় তাঁর মতো করে কথা বলেন। এ সব নাটক দেখতে অভ্যস্ত আমরা।” তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এ দিন পাল্টা বলেছেন, ‘‘ওঁর মুখে এ সব কথা মানায় না। ২০২১ সালে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে শূন্য পেয়েছিল। যাঁর ইস্তফা দিয়ে চলে যাওয়ার কথা, তিনি এখন বড় বড় কথা বলছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy