Bifurcation of J&K:From Kalhan’s Rajtarangini to Today’s Kashmir’s Chronology dgtl
Jammu And Kashmir
রাজতরঙ্গিনীর উপত্যকা থেকে দিল্লিশাসিত কাশ্মীরের বিচিত্র ইতিহাস
‘কা’ শব্দের অর্থ জল।‘শিমিরি’ শব্দের অর্থ ‘শুষ্ক’ করা। অর্থাৎ জল শুকিয়ে যে স্থলভাগের উৎপত্তি, তা-ই ‘কাশ্মীর’। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ঋষি কাশ্যপ জলসেচন করে শুষ্ক করেছিলেন। তাঁর নাম থেকেই নামকরণ কাশ্মীরের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ১১:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
শুধু ডাল আর উলার হ্রদই নয়। ভৌগোলিক পরিচয় বলছে বহু কোটি বছর আগে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল শুধুই হ্রদ। তারপর একদিন সেই হ্রদ রূপান্তরিত হল উপত্যকায়। নাম হল ‘কাশ্মীর’। দ্বাদশ শতকে লেখা কবি কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’-ও বলছে হ্রদ থেকেই কাশ্মীরের উৎপত্তি।
০২১৮
সংস্কৃত ভাষায় ‘কা’ শব্দের অর্থ জল।‘শিমিরি’ শব্দের অর্থ ‘শুষ্ক’ করা। অর্থাৎ জল শুকিয়ে যে স্থলভাগের উৎপত্তি, তা-ই ‘কাশ্মীর’। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ঋষি কাশ্যপ জলসেচন করে শুষ্ক করেছিলেন। তাঁর নাম থেকেই নামকরণ কাশ্মীরের।
০৩১৮
মহাভারতে বলা হয়েছে কাশ্মীর ছিল কম্বোজদের রাজ্য। পরবর্তীকালে পাঞ্চালরাও এই ভূখণ্ড শাসন করেছিল। তাওয়াই নদীর ধারে জম্মু নগরীর গোড়াপত্তন খ্রিস্টীয় নবম শতকে, রাজা জম্বুলোচনের হাতে। তাঁর নাম থেকেই নগরীর নামকরণ।
০৪১৮
প্রাচীন ভূখণ্ড কাশ্মীরে প্রস্তর যুগেও মানুষের বাস ছিল। বৈদিক যুগে উত্তর-কুরুদের রাজ্য ছিল কাশ্মীর। এরপর সম্রাট অশোকের যুগে মৌর্য সাম্রাজ্যের অংশ ছিল কাশ্মীর। কুষাণ সাম্রাজ্যে কণিষ্কের সময় কাশ্মীর ছিল গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই সময় থেকে কাশ্মীর বৌদ্ধধর্ম চর্চার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
০৫১৮
এরপর হুন আক্রমণের সময়েও কাশ্মীর ছিল তাদের মূল ঘাঁটি। এরপর কর্কোট এবং উৎপল বংশ ছিল কাশ্মীরের দুই উল্লেখযোগ্য শাসক। ততদিনে ম্লান হতে শুরু করেছে কাশ্মীরের অতীত গৌরব। মধ্যযুগে লোহারা বংশের শাসনে কাশ্মীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধসে পড়ে।
০৬১৮
এরপর কাশ্মীর দখল করে তুর্কিরা। তাদের থেকে ক্ষমতা হাতবদল হয় মুঘলদের কাছে। পারস্য ও মধ্য এশিয়ার শিল্প সংস্কৃতিই হয়ে ওঠে কাশ্মীরের নতুন পরিচিতি। একদিকে যেমন প্রাচীন পরিচিতি আড়ালে চলে যায়, অন্যদিকে কাশ্মীরে বিকশিত হয় শাল বয়ন, সূচিশিল্প ও কাঠের কাজ।
০৭১৮
মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে কাশ্মীর সরাসরি যুক্ত হয়েছিল সম্রাট আকবরের রাজত্বে। উপত্যকায় মুঘল শাসন শেষ হয় অওরঙ্গজেবের শাসনকালেই। নাদির শাহের আক্রমণে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে কাশ্মীর।
০৮১৮
চারশো বছর তুর্কী-পারসিয়ান-মুঘল শাসনের পরে অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে কাশ্মীরে ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে শিখ শক্তি। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি কাশ্মীর শাসন করেছে শিখরা। তাঁদের সময়েই জম্মু যুক্ত হয় কাশ্মীরের সঙ্গে।
০৯১৮
শিখ সেনাদলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ডোগরা রাজপুতদের। প্রথম ইঙ্গ-আফগান যু্দ্ধে ব্রিটিশদের হাতে পরাজিত হয় শিখ শক্তি। ব্রিটিশদের সঙ্গে ডোগরা রাজপুতদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
১০১৮
১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর চুক্তির পরে গুলাব সিংহকে প্রিন্সলি স্টেট জম্মু কাশ্মীরের প্রথম মহারাজা ঘোষণা করে ব্রিটিশরা। বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোষাগারে গুলাব সিংহকে দিতে হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ। ব্রিটিশ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশীয় রাজন্য স্টেটের প্রথম রাজা ছিলেন মহারাজা গুলাব সিংহ জামওয়াল।
১১১৮
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে জম্মু কাশ্মীর প্রিন্সলি স্টেটের সিংহাসনে অভিষেক হয় গুলাব সিংহের প্রপৌত্র হরি সিংহ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে হরি সিংহ-ই ছিলেন ক্ষমতায়। কিন্তু জম্মু কাশ্মীর কোন দিকে যাবে, ভারত না পাকিস্তান, সে প্রশ্নে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।
১২১৮
কিন্তু নিজের অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হন হরি সিংহ। তৎকালীন নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স বা আজকের খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে আসা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে তাড়াতে তাঁর প্রয়োজন ছিল ভারতের সেনা-সাহায্য। ফলস্বরূপ ১৯৪৭-এর ২৬ অক্টোবর ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাসেশন স্বাক্ষর করেন মহারাজা হরি সিংহ।
১৩১৮
স্বাধীন ভারতের জন্মলগ্ন থেকেই উপত্যকায় শুরু হল ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যায় ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশ, কাশ্মীরের মানুষের মন বুঝতে গণভোট হোক। পাশাপাশি সেনা সরাতে হবে পাকিস্তানকে। উপত্যকায় ভারতীয় সেনা থাকবে ন্যূনতম। বজায় থাকবে সংঘর্ষ বিরতি। সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হয় পাকিস্তান।
১৪১৮
১৯৪৯ সালে পরিস্থিতির চাপে হরি সিংহ কাশ্মীর ছাড়েন। ক্ষমতা যায় ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির নেতা শেখ আবদুল্লার হতে। তিনি ছিলেন জম্মু কাশ্মীরের ‘দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী’।
১৫১৮
১৯৫১ সালে জম্মু কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হয়। ভারতের বক্তব্য ছিল এরপর গণভোট নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু উপত্যকাবাসীর মনোভাব বুঝতে গণভোটের প্রশ্নে অটল রাষ্ট্রপুঞ্জ ও পাকিস্তান। গণভোটের পক্ষে মত দেওয়ায় ১৯৫৩ সালে বরখাস্ত ও গ্রেফতার হন কাশ্মীরের তৎকালীন ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আবদুল্লা। ফলে ভারতে অন্তর্ভূক্তিতে বিলম্ব। জম্মু কাশ্মীরের নতুন সরকার কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তিকে অনুমোদন দেয়।
১৬১৮
জওহরলাল নেহরুর পূর্ণসমর্থনপ্রাপ্ত অস্থায়ী সংস্থান অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ভারতীয়দের পারমিট নিয়ে কাশ্মীর প্রবেশের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ১৯৫৩ সালে এই নিয়ম ভেঙে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে গিয়ে শেখ আবদুল্লা সরকারের হাতে গ্রেফতার হন। কাশ্মীরে বন্দি অবস্থায় তাঁর রহস্যমৃত্যু হয় ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন। তাঁর আন্দোলনের জেরে লুপ্ত হয় কাশ্মীরের পারমিট প্রথা।
১৭১৮
১৯৫৭ সালে ভারতের অংশ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায় জম্মু কাশ্মীর। ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়েছিল। সোমবার রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক নির্দেশিকায় খারিজ হয়ে গেল ৩৫-এ অনুচ্ছেদ। তার আগে ২০১৮-র জুন মাস থেকে ছ’মাস রাজ্যপালের শাসনের পরে জম্মু কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতির শাসন চলছিল।
১৮১৮
রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে রাজ্যের পুনর্গঠন বিলও। লোকসভায় পাশ হলে রাষ্ট্রপতি নির্দেশিকা জারি করে ঘোষণা করবেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারা বাদে বাকি অংশ কার্যকরী থাকছে না। ফলে রাজ্যের তকমা হারানোর মুখে জম্মু-কাশ্মীর। এ বার থেকে হতে চলেছে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখ।