Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘কাশ্মীরে সব শান্ত! রাগে ফুঁসছে আমার পাড়া’

কড়া চোখে ছেলের বেয়াদপি দেখছেন মা তবস্সুম। এমনিতে শান্ত স্বভাবের মেয়ে। হঠাৎই তীব্র চিৎকার করে উঠলেন। ছেলেটা থমকে গেল।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

তৌসিফ মাজেদ রাঠের
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

কিছুতেই বাড়িতে থাকবে না আমার ভাইপো। স্কুলে যাবে। হাত ছুড়ছে। মাটিতে পা ঠুকছে, তীক্ষ্ণ চিৎকারে খানখান করে দিতে চাইছে সুনসান সকালকে। ভীষণ রাগে ফুটছে চার বছরের ছেলেটা।

কড়া চোখে ছেলের বেয়াদপি দেখছেন মা তবস্সুম। এমনিতে শান্ত স্বভাবের মেয়ে। হঠাৎই তীব্র চিৎকার করে উঠলেন। ছেলেটা থমকে গেল। মাকে এমন চিৎকার করতে সে দেখেনি। বলে চলেছেন মা, ‘‘কী ভাবে তোকে স্কুলে পাঠাই? দুপুরে যে কার্ফু জারি হবে না কে বলতে পারে! কী করে বাড়ি নিয়ে আসব? মোবাইলটাও নেই যে খবর পাব! কবে থেকে বন্ধ। চার্জ দিয়ে রাখছি। দিনে চোদ্দ বার কানে দিয়ে ভাবছি এই বুঝি চালু হল! কী হবে এটা রেখে!’’ ভীষণ রাগে তবস্সুম ছুড়ে ফেললেন মোবাইল ফোনটাকে।

পাশের ঘর থেকে এ বার চিৎকার তাঁর বৃদ্ধ দাদু কাজি ওমরের। ‘‘ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে দেখাতে হবে কাশ্মীর শান্ত! ফেরার পথে পুলিশ তাকে ছররা মারবে না, সে গ্যারান্টি আছে? কেন তাকে স্কুলে পাঠাব!’’ শ্বশুরকে কখনও এত জোরে কথা বলতে শোনেননি তবস্সুম।

রাগে ফুটছে শ্রীনগরের এয়ারপোর্ট রোড সংলগ্ন অভিজাত এলাকার পরিবারটি। সব বাড়িই আজ জেলখানা। এখানে আমারও বাড়ি। একমাত্র এই এলাকায় রোজ গাড়ি ছুটেছে। রাস্তায় বিধিনিষেধ কম। এক কিলোমিটার দূরে মাইজ়মাতেই রাস্তায় কাঁটা তারের বেড়া। মোড়ে মোড়ে রাইফেল উঁচিয়ে পাহারা। সেখানে আমাদের যৌথ পরিবার কেমন আছে জানতে গিয়ে বারে বারে ফিরে এসেছি। বাড়ির ঠিকানার প্রমাণ দিয়েও ঢুকতে পারিনি। ১৫ দিন জানতে পারিনি, কে কেমন আছেন।

বেরোনো বারণ। বাড়িতে বসে টি‌ভি দেখা আর খাওয়া। মেরুদণ্ডের নীচে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে যেতে হল হাসপাতালে। কেন এই যন্ত্রণা? হাসিখুশি মেজাজের ডাক্তারের মেজাজও বদশরিফ। খিঁচিয়ে উঠে জানালেন— হাঁটাহাঁটি নেই, গোটা দিন গোল হয়ে বাড়িতে বসে থাকলে মেরুদণ্ডের আর দোষ কী!

ট্র্যাভেল এজেন্সির ব্যবসা চৌপাট। ছোট্ট দফতরটা যে খুলতে যাব, গাড়িঘোড়া নেই। সাহসও নেই। ব্যবসায়ী সমিতির নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সতর্কতামূলক গ্রেফতার। পর্যটকদের ভাড়া দেব বলে একটা মোটরগাড়ি কিনেছি সদ্য। পড়ে ধুলো খাচ্ছে সেটা। গরমের মরসুমে ব্যবসা হল না। পুজোও কাটবে এ ভাবেই। সরকার দেখাতে চাইছে কাশ্মীর শান্ত। বিধিনিষেধ হালকা হতেই নতুন নতুন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই এয়ারপোর্ট রোডেও ছেলেরা পাথর ছুড়েছে। সন্ধ্যায় পাহারা কমলে মানুষ দ্রুত দোকান বাজার সেরে ঘরে ফেরেন। সারাটা দিন খাঁ খাঁ রাস্তা। এ যেন কবরখানার শান্তি!

টিভিতে দেখছিলাম অমর্ত্য সেন বলছেন— ব্রিটিশরা এ ভাবে শাসন করত। এতে কাশ্মীরের মানুষ কখনও খুশি হতে পারেন না। ঠিক কথা।

রাজনৈতিক নেতা, হুরিয়তের মাথা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রধান— হাজার হাজার মানুষকে জেলে ভরা হয়েছে। বন্দুক দেখিয়ে গৃহবন্দি করা হয়েছে গোটা উপত্যকাকে। এ রাগ সহসা মোছার নয়। রাইফেল কত দিন তা দমিয়ে রাখবে?

(লেখক: ভ্রমণ সংস্থার মালিক)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy