Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Bharat Jodo Nyay Yatra

বিভাজনের মণিপুর থেকে রবিবার রাহুলের ন্যায় যাত্রা, শুরুর আগে হবে জনসভা, সোমবার তাঁর কর্মসূচি কী?

রবিবার বেলা ১২টায় এই থৌবাল জেলার খংজোম ওয়ার মেমোরিয়াল থেকেই রাহুল মণিপুর থেকে মুম্বই ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করছেন। নিরাপত্তার ঝুঁকি সত্ত্বেও।

Rahul Gandhi

রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
ইম্ফল শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৭
Share: Save:

শনিবার বিকেল ৫টা। ইম্ফলের হোটেলে গোটা উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা এককাট্টা। রবিবার দুপুর থেকে শুরু হচ্ছে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। তা নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক শুরু হবে।

ঠিক সেই সময়ে হোটেলের নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিশ অফিসারদের ওয়াকি টকি-তে খবরটা এল। ‘চতুর্থ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে’।

দু’দিন আগেই মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় তিন জনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার মধ্যে একই পরিবারের বাবা ও ছেলের দেহও ছিল। চার জন কাঠ কুড়োতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। চতুর্থ মৃতদেহের খোঁজ চলছিল। শনিবার তা উদ্ধার হয়েছে।

গত বছরের মে মাস থেকে মণিপুরে চলতে থাকা হিংসায় নিহতদের তালিকায় আরও চারটি নাম যোগ হল। এই বছরের দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড। তার আগে নতুন বছরের প্রথম সন্ধ্যাতেই ইম্ফলের পাশে থৌবাল জেলায় চার জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন। আরও পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

রবিবার বেলা ১২টায় এই থৌবাল জেলার খংজোম ওয়ার মেমোরিয়াল থেকেই রাহুল মণিপুর থেকে মুম্বই ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করছেন। নিরাপত্তার ঝুঁকি সত্ত্বেও। ৫৩ বছর বয়সে শারীরিক ধকলের দিকটি অগ্রাহ্য করেই। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের মতো এ বার গোটাটাই পদযাত্রা নয়। প্রায় ৬,৭০০ কিলোমিটারের বেশির ভাগটাই বাসযাত্রা। তবে প্রতি দিন কিছুটা পথ পদযাত্রাও করবেন রাহুল। রবিবার যেমন ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই থৌবাল থেকে ইম্ফলের পথ ধরেই। যেখানে কুকি-মেইতেই বিবাদের জেরে হিংসায় দু’সপ্তাহ আগেই গুলি চলেছে। চার জন প্রাণ হারিয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় তাই কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলছিলেন, “রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তা আধিকারিকরা রয়েছেন। তাঁরা নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন।” কংগ্রেস নেতারা মানছেন, নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েই থৌবাল থেকে ইম্ফল হয়ে তাঁর দ্বিতীয় ভারত যাত্রা শুরু করছেন রাহুল। বলা ভাল, করতে হচ্ছে। এক বছর আগে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পায়ে হাঁটার পরে ফের তাঁকে ৬,৭০০ কিলোমিটার বাস-যাত্রা করতে হচ্ছে। কারণ, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীর দ্বিতীয় ভারত যাত্রাই কংগ্রেসের শেষ হাতিয়ার। গোটা কংগ্রেস এই রাহুলের যাত্রাতেই বাজি ধরে বসে রয়েছে। সকলেই মানছেন, রাহুলের এই যাত্রা থেকেই বিরোধীদের পক্ষে কিছুটা হাওয়া উঠতে পারে। না হলে নরেন্দ্র মোদীর রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে ঘিরে আবেগে এ বারও লোকসভা ভোট ভেসে যাবে।

এমনিতে ইম্ফলে পৌঁছে বোঝার নেই, মণিপুরের এই রাজধানী শহর দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে কার্যত দুটি দেশের মতো বিভাজিত। শহর চলছে নিজের ছন্দে। কিন্তু আদতে গোটা শহর ও রাজ্য কুকি ও মেইতেই, দুই সম্প্রদায়ের এলাকায় বিভাজিত। এক সম্প্রদায়ের মানুষ আর এক সম্প্রদায়ের এলাকায় ঢোকে না। কারণ, ঢুকলে প্রাণ হাতে বেরিয়ে আসা অসম্ভব।

কংগ্রেস নেতারা যে হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন, সেই হোটেলেরই ম্যানেজার মনোরমা দেবী বলছিলেন, “সন্ধ্যার পরে যাতায়াত করতে ভয়ই লাগে। গত আট মাস ধরে গোটা ইম্ফল এই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।” এই তিরতির করে বয়ে চলা আতঙ্ককেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে কংগ্রেস।

মে মাস থেকে মণিপুরে হিংসা চলছে। আট মাস অতিক্রান্ত। সরকারি হিসাবেই ২০০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বারও মণিপুরে আসেননি। সংসদে মুখ খুলতে চাননি। অনাস্থা প্রস্তাবের শেষে একশো বিশ মিনিটের বক্তৃতায় মাত্র সাড়ে তিন মিনিট মণিপুর নিয়ে ব্যয় করেছিলেন। উল্টো দিকে, রাহুল গান্ধী এর আগেও মণিপুরে এসেছেন। ত্রাণ শিবিরে গিয়েছেন। এ বার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু হচ্ছে এই মণিপুর থেকেই। জয়রাম রমেশের বক্তব্য, এটাই বাস্তবতা। মোদী অমৃত কালের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কংগ্রেস মোদী জমানায় দশ বছরের ‘অন্যায় কাল’-এর ছবি তুলে ধরবে।

প্রথমে ইম্ফলের প্রাণকেন্দ্র প্যালেস ময়দান থেকে ভারত যাত্রা শুরু করতে চাইলেও রাজ্যের বিজেপি সরকার তার অনুমতি দেয়নি। রবিবার দুপুরে থৌবালের খংজোম ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনের ময়দান থেকে যাত্রা শুরু হবে। মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ বলছিলেন, “খংজোম ওয়ার মেমোরিয়াল হল ১৮৯১ সালে অ্যাংলো-মণিপুর যুদ্ধে নিহত মণিপুরীদের স্মৃতি স্মারক। মণিপুরীরা ব্রিটিশ সেনার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। মণিপুর সে সময় ব্রিটিশ ভারত বা অসমের অংশ ছিল না। কোনও দিন হয়ওনি। ১৯৪৯-এ রাজার শাসনে থাকা মণিপুর ভারতে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন এই স্মৃতিস্মারকের উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন।”

রাহুলের যাত্রা শুরুর আগে বিরাট জনসভা হবে। প্রথম দিন মণিপুরে যাত্রা চলার পরে সোমবার যাত্রা ঢুকবে নাগাল্যান্ডে। উত্তর-পূর্বে মোট ১১ দিন ধরে রাহুলের যাত্রা চলবে। যে উত্তর-পূর্বের এখন সব রাজ্যেই বিজেপি বা তার শরিক দলের রমরমা। রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারে উত্তর-পূর্বের কংগ্রেস নেতারাও রাহুলের যাত্রার উপরেই বাজি ধরছেন। আর গোটা দেশে রাহুল গান্ধীর ভারত যাত্রা কি কংগ্রেস তথা বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র ঝুলিতে নির্বাচনী ফায়দা তুলে দিতে পারবে?

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, “এটা রাজনৈতিক দলের যাত্রা ঠিকই। তবে লড়াইটা মতাদর্শগত। নির্বাচনী যাত্রা নয়। শুধুমাত্র নির্বাচনী ফায়দা এই যাত্রার লক্ষ্য নয়।” বিজেপির সামাজিক ও ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে এই লড়াই জেতা সহজ নয়। কারণ, জয়রামও মানছেন, তাঁদের হাতে কোনও ‘জাদুদণ্ড’ নেই। এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সকলকে সঙ্গে নিয়ে। আজ তাই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ‘ইন্ডিয়া’ নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে সকলকে ভারত যাত্রায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যে রাজ্য দিয়ে যখন যাত্রা যাবে, তখন সেখানে ‘ইন্ডিয়া’-র শরিকদের রাহুলের পাশে চাইছে কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠেছে, রবিবার থৌবালের যাত্রারম্ভের অনুষ্ঠানে ‘ইন্ডিয়া’-র কোন কোন শরিক দল হাজির থাকবে?

মণিপুরের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে মেঘচন্দ্র সিংহ বলেন, “দশটি রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তাঁরা রাহুল গান্ধীর যাত্রাকে সমর্থন করছেন। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, সিপিআই, জেডিইউ-র মতো ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলির রাজ্য শাখা রয়েছে। তাঁদের নেতারা থৌবালে থাকবেন।” তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ত্রিপুরা, মেঘালয়, অসম, গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য শাখা রয়েছে। আর কোথাও নেই।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy