মুনাওয়ার ফারুকি।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে— এই আশঙ্কায় কৌতুকশিল্পী মুনাওয়ার ফারুকির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হুমকি দিয়েছিল, ফারুকিকে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠান করতে দিলে অশান্তি হতে পারে। ওই হুমকির জেরেই অনুষ্ঠানের ১২ ঘণ্টা আগে অনুমতি প্রত্যাহার করে পুলিশ। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রুদ্ধ ফারুকি লিখেছেন, ‘ঘৃণা জিতল, শিল্পী হারল’। ক্ষুব্ধ ফারুকি আর অনুষ্ঠান না করার কথা ঘোষণা করেছেন। এই ঘটনায় শিল্পীর উদ্দেশে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘‘ঘৃণা জিতবে না— বিশ্বাস রাখুন, হার মানবেন না, থামবেন না।’’
বেঙ্গালুরুর অশোক নগরে একটি অডিটোরিয়ামে আজ বিকেল ৫টায় ফারুকির একটি অনুষ্ঠানের কথা ছিল। আয়োজকদের অন্যতম সিদ্ধার্থ দাস জানিয়েছেন, গত কাল রাতে পুলিশ চিঠি পাঠিয়ে অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিলের কথা জানায়। তার পরেই ফারুকির অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশের যুক্তি, ‘‘এই কৌতুকশিল্পীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমাদের কাছে খবর, বহু সংগঠন এই শিল্পীর অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছে। এই শিল্পীর অনুষ্ঠানে অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এবং সম্প্রীতি নষ্টের সম্ভাবনাও রয়েছে।’’
এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘মুনাওয়ার ফারুকি এক জন বিতর্কিত শিল্পী। অনেক রাজ্যে তাঁর অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য তাঁর অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়। গত ১৫ নভেম্বর ওই অনুষ্ঠানের সংগঠকেরা চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলেন। আমরা তা বাতিল করেছি।’’
গত কাল হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি ফারুকির অনুষ্ঠান নিয়ে চিঠি দিয়েছিল বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ কমিশনারকে। তাতে বলা হয়েছিল, ‘মুনাওয়ার ফারুকি হিন্দু দেবদেবী, করসেবক, গোধরা কাণ্ড-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কৌতুক করেন। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁকে শহরে অনুষ্ঠান করতে দিলে ওই সব বিষয় নিয়ে রসিকতার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তার ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে’। ওই চিঠি সংগঠনের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্টও করা হয় মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ট্যাগ করে। তার পরেই অনুষ্ঠান বাতিল করতে সক্রিয় হয় কর্নাটকের বিজেপি সরকারের পুলিশ।
গোটা ঘটনায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ ফারুকি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর পোস্ট, ‘‘ঘৃণা জিতল, শিল্পী হারল। অবিচার! ...মনে হয়, এটাই শেষ। আমার নাম মুনাওয়ার ফারুকি এবং আমার সময় শেষ হয়েছে। আপনারা খুব ভাল শ্রোতা ছিলেন। বিদায়, অনেক হয়েছে।’’ এই শিল্পী জানিয়েছেন, কৌতুকের জন্য তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর দাবি, দেশের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ তাঁর কৌতুক অনুষ্ঠানগুলি ভালবাসেন। বেঙ্গালুরুর অনুষ্ঠানের ৬০০-র বেশি টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। হিন্দুত্ববাদীদের হুমকির জেরে গত দু’মাসে ফারুকির ১২টি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। আজ সে কথা জানাতেও ভোলেননি তিনি। ওই কারণেই চলতি মাসের প্রথম দিকে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে তাঁর অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়।
ফারুকির অনুষ্ঠান বাতিল এবং তাঁর অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে। আর এক কৌতুকশিল্পী কুণাল কর্মা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রতি বছর কৌতুক শিল্পীদের তাঁদের কৌতুকের চড়া দাম দিতে হচ্ছে। এটা তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ততা ও রসবোধের উপরে তার প্রভাব ফেলছে। আমরা স্বাভাবিক ভাবে কৌতুক করতে পারছি না। আমি এ-ও শুনেছি, কিছু শিল্পী তাঁদের আইনজীবী ও আইনি দলের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন যে তাঁরা কোন কৌতুক করবেন’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy