ফাইল চিত্র।
মুখ বন্ধ রাখাও যাচ্ছে না আর, কিন্তু মুখ খুললে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। শিলংয়ের বাঙালিদের অবস্থা তেমনই। তাঁদের আশঙ্কা, বিপদে পাশে পাওয়া যাবে না সরকার বা পুলিশকেও।
ফেব্রুয়ারিতে ইছামতীতে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় এক খাসি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জটিল হয়। জুলাইতে শিলংয়ে পাঁচ বাঙালি যুবককে বিনা প্ররোচনায় পেটায় খাসি যুবকরা। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। সাংবাদিক প্যাট্রিসিয়া মুখিম ঘটনার নিন্দা করে শিলংয়ে অ-জনজাতিদের উপরে বহু দশক ধরে অত্যাচার, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, নিরাপত্তার অভাবের কথা লিখেছিলেন। উল্টে তাঁর বিরুদ্ধেই উস্কানি দেওয়ার মামলা চলছে। শিলংয়ে বাঙালিদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে বরাক ও কলকাতায় প্রতিবাদ হয়েছে।
কিন্তু মেঘালয়ে ইনারলাইন চালুর দাবিতে গড়া যৌথ মঞ্চ ও রাজ্য সরকার— উভয়েরই দাবি, শিলংয়ের বাঙালিদের নিয়ে ‘মিথ্যে বলে রাজনীতি’ চলছে। মেঘালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বাইরের রাজ্যে কথা বলা চলবে না। খাসিদের সংগঠনের স্পষ্ট কথা, মেঘালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে থাকা বাঙালিদের ব্যবসার অধিকার, ভোটাধিকার, চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা কিছুতেই ভূমিপুত্রদের সমান হবেন না। রাজ্যের সব বাঙালিই বাংলাদেশি বলে দাবি করে খাসি ছাত্র সংগঠন পোস্টার-ব্যানারও ঝুলিয়েছে শিলংয়ে।
সম্প্রতি উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ মেঘালয়ে আইএলপি চালু না করতে এবং বাঙালি-নিগ্রহ রোখার দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী জেমস সাংমা কমলাক্ষবাবুর দাবির বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘বাস্তব চিত্র না জেনে এমন মন্তব্য করলে প্রতিক্রিয়া আরও খারাপ হতে পারে।’’
মেঘালয়ের বাঙালিদের অনেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন। শিলংয়ের এক বাঙালি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিতে লেখেন, ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত নয় বলেই বাঙালি সেখানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে চিঠিতে।
শিলংয়ের এক রবীন্দ্র অনুরাগী প্রতি বছর নিয়ম করে খাসি, বাঙালিদের নিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করেন। তিনি বলেন, “প্রবীণ ও সংস্কৃতিবান খাসিদের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি বা ভাষার কোনও বিবাদ নেই। কিন্তু নব্য খাসি নেতারাই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে। জানি না পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।” শিলংয়ের এক বাঙালি সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদের কথায়, “পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কার। সম্প্রতি এক বাঙালি ট্যাক্সিচালককে খুন করা হল। শিলংয়ে বাঙালিদের নিরাপত্তা বিপন্ন। সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, উল্টে প্রচ্ছন্ন মদত দিচ্ছে।” শিলংয়ের এক বাঙালি ট্যাক্সিচালক বলেন, “গত বছর কার্ফু, আন্দোলন, এই বছর ফের আন্দোলন ও করোনার জেরে পর্যটন ও ব্যবসা এমনিতেই তলানিতে। তার উপরে বাঙালি হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে রয়েছি। শিলংয়ের অনেক বাঙালি বরাক উপত্যকা বা গুয়াহাটি বা কলকাতায় চলে যাচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy