Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘মায়ের মরা মুখটাও দেখতে পেলাম না, কী করব আমি যে এখানে জলবন্দি’

কেরলে বন্যার খবর শুনে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। দাদাদের বলেছিলাম, আমি যে কী অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা যেন মা জানতে না পারে। রবিবার দুপুরে দাদারা খবর দেয়, মা আর নেই। তার পর থেকে ছটফট করছি।

জল নামার পরে বাড়ির ভিতরের অবস্থা ঠিক এমনই। ত্রিশূরের চালাকুডিতে সোমবার। ছবি: পিটিআই

জল নামার পরে বাড়ির ভিতরের অবস্থা ঠিক এমনই। ত্রিশূরের চালাকুডিতে সোমবার। ছবি: পিটিআই

গৌতম মাজি
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৮
Share: Save:

কিছুই করতে পারলাম না! মনে হচ্ছে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত মায়ের ভাল চিকিৎসার জন্যই তো ঘর ছেড়েছিলাম। সেই মায়ের মুখটা যে শেষবারের মতো দেখতে পাব না, ভাবতে পারিনি।

তিন বছর ধরে কেরলের ত্রিশূরে রয়েছি। সোনার দোকানে কাজ করি। দেড় বছর আগে হঠাৎ খবর পাই বাবা অসুস্থ। সে বার তড়িঘড়ি সবংয়ের মাসুমপুরে বা়ড়ি ফিরলেও বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। মা ছবি মাজি দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন। কষ্ট করে চলাফেরা করতেন। দাদাদের থেকে খবর পাচ্ছিলাম, কেরলে বন্যার খবর শুনে মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। দাদাদের বলেছিলাম, আমি যে কী অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা যেন মা জানতে না পারে। রবিবার দুপুরে দাদারা খবর দেয়, মা আর নেই। তার পর থেকে ছটফট করছি। কিন্তু কী করব আমি যে এখানে জলবন্দি। বাড়ি ফেরার কোনও উপায় নেই।

ত্রিশূরের কিয়ারাম এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে কয়েক জন মিলে থাকি। ১৫ অগস্ট রাতে ঘুম ভাঙতেই দেখি ঘরে কোমর সমান জল। গভীর রাতে ওই বাড়ি ছেড়ে তুলনায় উঁচু এলাকায় আমার বন্ধু চন্দন ঘোড়ইয়ের ভাড়াবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও ত্রাণশিবিরে পৌঁছতে পারিনি। চন্দনের বাড়িতে যেটুকু খাবার ছিল সেটাও ‌শেষ হয়ে আসছে। জল নেমেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

আরও পড়ুন: ভরসা কোচি বন্দর ও এক বঙ্গসন্তান

খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, চিকিৎসা করানো সুযোগ না পেলেও বাবার মুখটা অন্তত দেখেছিলাম। মায়ের ক্ষেত্রে তো তা-ও হল না। শ্রাদ্ধের আগে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়!

(লেখক: কেরলের বন্যায় আটকে পড়া সোনার কারিগর)

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Flood Worker Kerala Flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE