কড়া নিরাপত্তায় অযোধ্যা। ছবি; পিটিআই।
অযোধ্যা মামলার রায়দানে বড় ভূমিকা নিয়েছে পুরাতত্ত্ব। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের রিপোর্টের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদের নীচে অ-ইসলামি ধ্বংসাবশেষের প্রমাণ মিলেছে। মাটির বিভিন্ন স্তর থেকে উদ্ধার হওয়া পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রীও ইসলামি ধাঁচের নয়। তবে সে সব যে হিন্দু মন্দিরেরই অবশেষ, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
অযোধ্যায় প্রথম খননকার্য হয়েছিল উনিশ শতকে এএসআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার কানিংহামের সময়ে। ১৯৬০-৭০ এর দশকেও দফায় দফায় খননকার্য হয়। ১৯৯২ সালে ধ্বংস হয় বাবরি মসজিদ। ২০০৩ সালে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে ফের খনন চালিয়ে পাঁচ মাস পরে রিপোর্ট দেয় এএসআই। আজকের রায় সেই রিপোর্টকেই অনুসরণ করেছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ পটেল জানিয়েছেন, শীঘ্রই ওই রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করা হবে।
রামলালা বিরাজমানের চৌহদ্দির চারপাশে ১০ ফুট ছেড়ে খননকার্যে নেমেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। খননকারী দলের প্রধান বি আর মণি আজ জানান, সামান্য খুঁড়তেই মাটির নীচে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা ৫০টি বড় স্তম্ভ আবিষ্কার হয়। মিলেছে ইটের গর্ভগৃহ, যার সঙ্গে রেওয়া বা শ্রাবস্তীর প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনার মিল রয়েছে। সেই তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এএসআই-এর দাবি, অযোধ্যার গর্ভগৃহটি সম্ভবত দশম শতাব্দীতে বানানো হয়েছিল। লৌহ যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনাও উদ্ধার করেন খননকারীরা। মণি বলেন, ‘‘ওই স্থানে সবচেয়ে বড় মাপের নির্মাণটি হয়েছিল একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে। ৫০টি স্তম্ভ ওই সময়েই নির্মাণ হয়েছিল।’’ রিপোর্ট বলছে, পরবর্তী সময়ে ওই স্তম্ভের উপর অন্তত তিনটি তলা গড়ে তোলা হয়েছিল। যার উপরে মসজিদের কাঠামো গড়ে ওঠে।
রিপোর্টের শেষ ভাগে এএসআই দাবি করে, মসজিদের তলায় দশম শতাব্দী থেকে কাঠামোগত নির্মাণের ধারাবাহিক উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। মণির মতে, ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া ঘট বা কলস, হাতি, কুমির বা কচ্ছপের টেরাকোটা মূর্তি মন্দিরের উপস্থিতিকেই প্রমাণ করে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশের দাবি, কুমিরের মুখওয়ালা জল বেরোনোর রাস্তাও প্রমাণ করে, এখানে এক সময়ে মন্দির ছিল। সাধারণত, মসজিদে এ রকম দেখা যায় না।
এএসআই-এর এই রিপোর্টটি অবশ্য বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা আদালতে জানান, খননের সময়ে হাড় ও চারকোলের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কেবল চারকোলের কার্বন ডেটিং (সি১৪) করা হয়। জবাবে বি আর মণি বলেন, ‘‘সময় বলার নির্ভুল ঘড়ি হল চারকোল। সেই কারণে তা ব্যবহার করা হয়েছে।’’ তবে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টও মেনেছে, এএসআই-এর রিপোর্ট থেকে মন্দিরের প্রত্যক্ষ প্রমাণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড তাদের তরফে নিয়োগ করেছিল দুই প্রত্নতত্ত্ববিদ সুপ্রিয়া বর্মা ও জয়া মেননকে। ওই দুই অধ্যাপক এএসআই-এর রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে বলেছিলেন, এএসআই-তত্ত্বের মূল ভিত্তি হল ৫০টি স্তম্ভ। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, স্তম্ভের গোড়াগুলি ভাঙা এবং স্তম্ভের ভিতরে কাদা-মাটি ছাড়া কিছু নেই। রিপোর্টে পশ্চিম দিকের একটি দেওয়ালের উল্লেখ করা হয়েছে। মেননদের বক্তব্য, এই ধাঁচের দেওয়াল মসজিদেরই বৈশিষ্ট্য। প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনের ঐতিহাসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই দু’জন। তাঁদের মতে, ওই নির্দশনগুলি আসলে ধ্বংসস্তূপ থেকেই উদ্ধার হয়েছে, মাটির তলা থেকে নয়। খননকার্যের সময়ে অযোধ্যায় গিয়েছিলেন রোমিলা থাপার, রামশরণ শর্মা, ডি এন ঝা-র মতো ইতিহাসবিদরা। তাঁরাও এএসআই-এর দাবি নিয়ে সন্দিহান। ডি এন ঝা এ দিন সরাসরি অভিযোগ করেন, এএসআই রিপোর্ট ত্রুটিযুক্ত। যে সব নিদর্শনের ভিত্তিতে এএসআই যে ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার মধ্যেই গলদ রয়েছে। নিদর্শনগুলির কালনির্ণয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy