কখনও বাবলু, কখনও সুরেন্দ্র কুমার, কখনও বা সন্দীপ কুমার— পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে একের পর এক ভুয়ো নাম ব্যবহার করছেন আতিক-ঘনিষ্ঠ পলাতক গুড্ডু মুসলিম। গা ঢাকা দিয়ে নাম বদলানোর পাশাপাশি নিজের ভোলবদলও করছেন গুড্ডু। এমনটাই জানতে পেরেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
মৃত্যুর আগে শেষ নাম নিয়েছিলেন গুড্ডু মুসলিমের। তার পরেই আততায়ীদের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলিতে মারা যান উমেশ পাল হত্যা মামলায় বন্দি আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরফ। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দাবি, তার পর থেকেই নাকি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন গুড্ডু মুসলিম। কিন্তু তল্লাশি করতে গিয়ে অবশেষে তাঁর খবর মিলল। হাতেনাতে ধরা না পড়লেও গুড্ডুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে পেরেছে পুলিশ। গুড্ডুর সহকারী রাজা খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই গুড্ডুর সম্পর্কে জানতে পেরেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৬২ দিন ধরেই পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গুড্ডু। ওড়িশার বারগড় এলাকায় তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার পর আবার গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, ২ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল ওড়িশাতেই ছিলেন গুড্ডু। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভুয়ো নাম ব্যবহার করে থেকেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পুলিশের দাবি, বার বার হিন্দু নামই ব্যবহার করেছিলেন গুড্ডু। বাবলু, সুরেন্দ্র কুমার, সন্দীপ কুমারের মতো একাধিক ভুয়ো নাম ব্যবহার করে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন তিনি। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে করছেন ভোলবদলও। গুড্ডুর সহকারী রাজা জানান, পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য নাকি দাড়িও বাড়িয়ে ফেলেছেন গুড্ডু। রাজার দাবি, ওড়িশা থেকে ছত্তীসগঢ় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন গুড্ডু। সেখান থেকে মিরাট, আজমেঢ়, ঝাঁসি, নাসিক, পুনের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে গুড্ডুর।
গুড্ডুর পরিচিতেরা দাবি করেন যে, উমেশ পালকে হত্যা করার কোনও কারণ ছিল না আতিকের। গুড্ডুই নাকি এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। সূত্রে খবর, আতিক এবং আশরফ দু’জনেই যখন জেলে বন্দি ছিলেন, সেই সময় ব্যবসা সামলাতেন গুড্ডু। সূত্রে খবর, কয়লার ব্যবসা-সহ অন্যান্য ব্যবসাতেও টাকা ঢালতেন গুড্ডু।
আরও পড়ুন:
গুড্ডুর পরিচিতদের দাবি, শৈশব থেকেই দুরন্ত ছিলেন তিনি। তৎকালীন ইলাহাবাদে (বর্তমান প্রয়াগরাজ) জন্ম গুড্ডুর। স্কুলজীবন থেকে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। লুট এবং তোলাবাজির মতো ঘটনায় হামেশাই নাম জড়িয়ে পড়ত গুড্ডুর। এই সময় বহু দুষ্কৃতীর সংস্পর্শে আসেন তিনি। সেই সময় থেকেই বোমা বাঁধতে শুরু করেন গুড্ডু। প্রতি দিন কোনও না কোনও অপরাধের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা পড়াশোনার জন্য তাঁকে লখনউয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে, তাতে কোনও লাভ হয় না। লখনউ যাওয়ার পর আরও বড় অপরাধে হাত পাকানো শুরু করেন তিনি।
গুড্ডুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, লখনউয়ে এসে দুই গ্যাংস্টার অভয় সিংহ এবং ধনঞ্জয় সিংহের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। সেই সময় লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন গুড্ডু। ১৯৯৭ সালে একটি মিশনারি স্কুলের শিক্ষককে খুন করে খবরের শিরোনামে আসেন তিনি। পরে আতিক আহমেদের দলে শামিল হন গুড্ডু।
আরও পড়ুন:
রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর প্রধান অমিতাভ যশ জানান যে, ১৯৯৯ সালে এই গুড্ডুকেই এক বার তিনি গ্রেফতার করেছিলেন। বেআইনি মাদক পাচারের অভিযোগে হাতকড়া পরাতে হয়েছিল আতিক-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীকে। আতিকের আইনজীবীই সেই সময় গুড্ডুকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
উমেশ পাল হত্যা মামলায় বন্দি আতিক এবং তাঁর ভাই আশরফকে শনিবার রাতে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে সেখানে পৌঁছে যান আততায়ীরা। হাসপাতালের সামনে যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময় আশরফ নাম নিয়েছিলেন গুড্ডু মুসলিমের। তার পর সাংবাদিকদের বেশে থাকা আততায়ীরা আতিকদের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করেন। সেই গুড্ডুকে গ্রেফতার করার জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গুড্ডু এখনও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন, তাঁর খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।