Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Assam

হিমন্তের তোপে বন্ধ হল মিয়াঁ মিউজিয়াম

মুখ্যমন্ত্রীর তোপের পরেই গোয়ালপাড়া জেলা প্রশাসন মিউজিয়াম সিল করে নোটিস লাগিয়ে দেয়। লক্ষ্মীপুর রাজস্ব চক্রের তরফে পাঠানো নোটিসে লেখা হয়েছে জেলাশাসকের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে থাকা ঘরটি বন্ধ রাখা হচ্ছে।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১৩
Share: Save:

অসমে মিয়াঁ মিউজিয়াম তৈরি নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার তীব্র আপত্তি ও নির্দেশে গোয়ালপাড়ার সেই মিউজিয়াম সিল করে দিল জেলা প্রশাসন। রবিবার গোয়ালপাড়ার লক্ষ্মীপুরের দাপকারভিটায় অসমিয়া মিঁয়া পরিষদের সভাপতি মোহর আলির বাড়িতেই মিয়াঁ মিউজ়িয়ামের উদ্বোধন করা হয়েছিল। তাঁকে প্রথমে আটক করেছিল পুলিশ। পরে মোহর ও তাঁর সঙ্গী আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়েছে। ওই দু’জনের সঙ্গে আল কায়দা ও আনসারুল্লা বাংলা টিমের যোগ নিয়েও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, “অসমিয়া বিভিন্ন জনজাতির লাঙল, মাছ শিকারের জিনিসপত্র নিয়ে মিয়াঁ মিউজ়িয়াম খোলা মেনে নেওয়া হবে না। একমাত্র লুঙ্গি বাদে কিছুই তাঁদের নিজস্ব নয়। তাঁদের প্রমাণ করতে হবে লাঙল শুধুই মিয়াঁরা ব্যবহার করেন। অসমিয়ার সম্পদ নিজের বললে সরকারকে জবাব দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “মিয়াঁ কবিতা লেখার সময়ই সকলকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু তখন অসমের বিশিষ্ট জনেরা, সংবাদমাধ্যম উল্টে আমার সমালোচনা করেছেন। আজ সেই আশঙ্কা সত্যি হচ্ছে। মিয়াঁ স্কুলের পরে মিয়াঁ মিউজিয়ামও তৈরি হল। তাঁরা কোথা থেকে মিউজিয়াম তৈরির টাকা পেলেন পুলিশ তার তদন্ত করবে।” মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই ঘটনা অসমিয়া জাতির আশঙ্কার কারণ। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভেদের যোগ নেই। উল্লেখ্য, উনবিংশ শতকে বাংলাদেশ থেকে ব্রহ্মপুত্রের চরে চাষ করতে আসা মানুষের পরবর্তী প্রজন্মকে সাধারণ ভাবে মিয়াঁ বলা হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর তোপের পরেই গোয়ালপাড়া জেলা প্রশাসন মিউজিয়াম সিল করে নোটিস লাগিয়ে দেয়। লক্ষ্মীপুর রাজস্ব চক্রের তরফে পাঠানো নোটিসে লেখা হয়েছে জেলাশাসকের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে থাকা ঘরটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। ওই বাড়ির মালিক মোহর আলি। তাঁকে আলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় লক্ষ্মীপুর থানার পুলিশ। বাড়ি সিল করার পরে মোহর বলেন, ‘‘সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থেই সংগ্রহশালা তৈরি করেছিলাম। এখানে রাখা সামগ্রী নিয়ে আপত্তি থাকলে সরকার সেই জিনিসগুলি নষ্ট বা বাজেয়াপ্ত করতে পারত। কিন্তু আমার বাড়িতে তালা লাগিয়ে আমায় ঢুকতে না দেওয়া অন্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের কাছে সিল ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি মানেই সরকারি বাড়ি নয়। তা বর্তমান মালিকের সম্পত্তি। আমি সরকারি সব শর্ত পূরণ করে বাড়ি করার টাকা পেয়েছিলাম। এখন বাড়ির মালিক হিসেবে আমি সেখানে যা ইচ্ছে করতে পারি।’’ পরে তাঁকে আটক করে পুলিশ। ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়।মোহর আলি ও অসমিয়া মিয়াঁ পরিষদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চাও। তার ভিত্তিতে সন্ধ্যায় মোহর আলিকে আটক করে পুলিশ। রাজ্যের তথ্য ও জনসংযোগমন্ত্রী পীযুষ হাজরিকা বলেন, “খেতের কাজ করা, মাছ ধরার নানা সামগ্রী, দাঁড়িপাল্লা ইত্যাদি অসমিয়া জিনিসপত্র তথাকথিত মিয়াঁ মিউজিয়ামে রাখায় আমাদের তীব্র আপত্তি আছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর নিয়ে সেখানে মিয়াঁ মিউজিয়াম গড়াও মানা যায় না। ইতিমধ্যে প্রশাসন মিউজিয়াম সিল করেছে। মিয়াঁ নামে কোনও সম্প্রদায় নেই। আসলে সব কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র।”

মোহর আলি অবশ্য দাবি করেছেন, মিয়াঁরা অসমিয়া জাতির বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। প্রাচীন কামরূপী জনজাতির অঙ্গ। তাঁরা অসমিয়া সমাজের সম্প্রীতি ও বন্ধন সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে অযথা রাজনীতি করা হচ্ছে।কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ দাবি করেছেন, ‘‘এ সব মুখ্যমন্ত্রীর গোপন চক্রান্ত। কমলাক্ষ বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক বাঙালিদের জন্য বাঙালি মিউজিয়াম তৈরির দাবি তোলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Assam Himant Biswa Sharma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE