অসহায়: জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে শিলচর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জয়দেব ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র
ঘরে ক্যানসার আক্রান্ত সন্তান, মাথায় ভারতীয়ত্ব প্রমাণের খাঁড়া। অসমের করিমগঞ্জ জেলার বাসিন্দা জয়দেব ঘোষ ১৭ বছরের ছেলেকেও হারিয়েছেন, বিদেশি তকমা পেয়ে ডিটেনশন শিবিরেও গিয়েছেন। দশ মাস পর গত সপ্তাহে আদালতে মিলেছে জামিন। এখন আবার নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার লড়াইয়ে নামতে হবে তাঁকে।
বদরপুর এসটি রোডে বাড়ি জয়দেববাবুর। সদ্য কৈশোর পার করা একমাত্র ছেলের ক্যানসার ধরা পড়ল ২০১৬ সালে। সেই বছরই তাঁকে নোটিস পাঠাল ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। প্রথম দিকে দু’দিকই সামাল দিচ্ছিলেন। জয়দেব আনন্দবাজারকে জানাচ্ছেন, ২০১৮-য় ছেলের অসুখ যখন আরও ঘোরালো হয়ে উঠল, তিনি আর ট্রাইবুনালে দৌড়তে পারেননি। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে মারা গেল ছেলে। ২০১৯ সালের ২ মে বাড়িতে হাজির হল পুলিশ। তাঁকে বিদেশি ঘোষণা করেছে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল!
ফাইল ভর্তি কাগজপত্র এনে জয়দেববাবু দেখিয়েছিলেন পুলিশকে— ১৯৫১ সালের বাবার সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট, ১৯৫৫ সালের জমির দলিল, নিজের জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠার নানা নথি। তাঁর মা বীণারানি ঘোষ, ভাই সুদেব ঘোষের নামেও একবার বিদেশি সন্দেহে মামলা করেছিল পুলিশ। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর ফরেনার্স ট্রাইবুনাল তাঁদের ভারতীয় বলে রায় দেয়। সেই রায়ের কপিও দেখিয়েছিলেন। আর কত প্রমাণ দরকার? পুলিশ অফিসার জানান, নথি দেখানোর সময় ফুরিয়ে গিয়েছে। জয়দেবকে সোজা শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে (পড়ুন শিলচর কেন্দ্রীয় কারাগার) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: জনতার সঞ্চয়ে কেন ইয়েস উদ্ধার, প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র
শেষ পর্যন্ত বদরপুরেরই একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘ঝিনুক’-এর উদ্যোগে রিট আবেদন দাখিল হল গৌহাটি হাইকোর্টে। হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ এ সপ্তাহের ৩ মার্চ জয়দেববাবুকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। ১০ মাস পর বৃহস্পতিবার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে বেরিয়েছেন জয়দেব। তাঁকে এখন নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। তা নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন জয়দেববাবু। বলেন, ‘‘ট্রাইবুনাল একতরফা রায় না দিলে আমাকে জেলে যেতে হয় না।’’ তাঁর আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ট্রাইবুনালের রায়ে দাবি করা হয়েছিল, জয়দেব এক দিনও ট্রাইবুনালে হাজির হননি! আবার ওই একই রায়ে লেখা ছিল, শুরুর দিকে তিনি হাজির হতেন।
ট্রাইবুনালের রায় বেরোনোর পরে আপিলের জন্য এক মাস সময় দেওয়ার কথা। জয়দেববাবুকে সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy