কাছাড়ি রাজ্যের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য উন্মোচনে সমীক্ষায় নেমেছে অসমের উত্তর কাছাড় স্বশাসিত পরিষদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ডিমা হাসাও জেলার লাংটিং-ধনসিরি এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। তা কাছাড়ি রাজ্যের সাংস্কৃতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত অনুশীলনের উপরে আলোকপাত করে বলে গবেষক দলটির দাবি। তাঁরা জানান, ডিমা হাজং এবং সোনাপুর গ্রামের মধ্যে চারটি স্থানে পাওয়া গিয়েছে একটি বৃত্তাকার পরিখা, বড় মাপের কারখানা। সোনাপুর গ্রামের একটি পাহাড়ের উপরে এই বিশাল বৃত্তাকার পরিখার ব্যাস প্রায় ১২০ মিটার, গভীরতা ১৪ ফুট। তাঁদের অনুমান, এটি প্রতিরক্ষা কাঠামো হিসেবে কাজ করত। বহিরাগতদের হামলা থেকে রক্ষার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আবার হাতির আক্রমণ ঠেকানোর জন্যও তা নির্মিত হতে পারে। ওই জায়গায় প্রচুর মাটির পাত্রের টুকরোও পাওয়া গেছে। অধিকাংশই লাল রঙের, কিছু কালো পাত্রও পাওয়া গিয়েছে। সমীক্ষক-গবেষকদের কথায়, এগুলি ওই অঞ্চলে মানুষের বসতি এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের দিকনির্দেশ করে।
আরও একটি পরিখা আবিস্কার করেছেন তাঁরা। সেটি ১৫ ফুট গভীর। প্রায় ৩০ ডিগ্রি কোণে পাহাড়ের ঢাল বরাবর নির্মিত। উভয় পাশে খাড়া পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এই ধরনের পরিখা সম্ভবত বন্য প্রাণী, বিশেষ করে হাতিদের ধরার জন্য ব্যবহার করা হত। ওয়াটিডিসা দিখং উপনদীর তীরে আর একটি জায়গাকে তাঁদের কারখানা বলে মনে হয়েছে। কারণ সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খোদাই করা বেলেপাথরের জিনিসপত্র। পাওয়া গিয়েছে কামানের গোলাও।
এই নিদর্শনগুলির মধ্যে কিছু সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত, অন্যগুলি উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এগুলি একটি সক্রিয় এবং চলমান উৎপাদন প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়। কামানের গোলা সামরিক জিনিসপত্র উৎপাদনে এই স্থানের ভূমিকা নির্দেশ করে।
কাছাড়ি 'বুরাঞ্জি'র মতো ঐতিহাসিক নথিতে ডিমাসা রাজ্য কর্তৃক কামানের ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে, যা অস্ত্র উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে এই স্থানের তাৎপর্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। গবেষকরা আরও বলেন, এই আবিষ্কারগুলি কেবল ডিমাসা রাজ্যের প্রযুক্তিগত ও সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণাকে সমৃদ্ধ করে না। বরং উদ্ভাবন ও শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকেও তুলে ধরে। গবেষক প্রত্নতত্ত্ববিদ বিদিশা বরদলৈ, শ্রিংদাও লাংথাসা, ভুবনজয় লাংথাসা, পুলিথা কেমপ্রাই, হরশ থাওসেন, সঞ্জয় মাইবাংসা, জয়দীপ লাংথাসা, অমিত আরদাও এবং বিনয় ফংলো এই অনুসন্ধানে অংশ নেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)