৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে সংসদের বাইরে গুলাম গুলাম নবি আজাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েন, চিদাম্বরম-সহ বিরোধী নেতারা। ছবি: পিটিআই।
যত বড় পদক্ষেপ, ঠিক ততটাই চড়া স্বরে শুরু হয়ে গেল বিরোধিতা। এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল ভারতের ভাঙন— রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। আর রাজ্যসভার মধ্যে বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের মন্তব্য— হত্যা করা হল সংবিধানকে। জম্মু-কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা গৃহবন্দি থাকায় আসতে পারেননি মিডিয়ার সামনে। কিন্তু টুইটারে তাঁরা দু’জনেই তীব্র আক্রমণে বিঁধলেন মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের কথা এ দিন অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করা মাত্রই তুমুল হট্টগোল শুরু করে দেন বিরোধী দলগুলির সাংসদরা। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডিএমকে-র তিরুচি শিবা, এমডিএমকে-র ভাইকোদের নেতৃত্বে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জম্মু-কাশ্মীরের দল পিডিপির দুই সাংসদ সংবিধানের প্রতিলিপি সংসদের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেই রুলিং দিয়েছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। কিন্তু তাতেও হট্টগোল আটকানো যায়নি। পিডিপি সাংসদদের আচরণে প্রবল অসন্তুষ্ট হন বেঙ্কাইয়া, মার্শাল ডেকে বার করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তাঁদের। হট্টগোলের মধ্যেই অমিত শাহ কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র এবং বিল পড়ে শোনাতে থাকেন।
GOIs intention is clear & sinister. They want to change demography of the only muslim majority state in India , disempower Muslims to the extent where they become second class citizens in their own state.
— Mehbooba Mufti (@MehboobaMufti) August 5, 2019
চেয়ারম্যানের বিশেষাধিকার প্রয়োগের সুবাদে অমিত শাহ তাঁর কাজ সেরে ফেলেন ঠিকই। কিন্তু তাতে রাজ্যসভার উত্তাপ কমানো যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারকে তথা বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ শুরু করে বিভিন্ন বিরোধী দল। সংসদের ভিতরে শুধু নয়, বাইরেও শুরু হয় ক্ষোভ উগরে দেওয়া।
নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে এবং তার নীতিকে এ দিন সবচেয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন পি চিদম্বরম। গুলাম নবি আজাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের পাশে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সাংবিধানিক ইতিহাসে আজ কালো দিন। সরকার যা করেছে, তা অভূতপূর্ব।’’ চিদম্বরম গোটা দেশকে সতর্ক করে দেওয়া ঢঙে বলেন, ‘‘এটা যদি জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে করা যায়, তা হলে দেশের অন্য রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গেই করা যেতে পারে।’’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথমে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে, বিধানসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে যাবে, সরকার সংসদে একটা প্রস্তাব আনবে, সেটাতে সংসদ অনুমোদন দেবে এবং রাজ্যটা আর থাকবে না।’’ চিদম্বরম আশঙ্কা প্রকাশের ভঙ্গিতে বলেন— প্রত্যেকটা রাজ্যকে এই ভাবে ভেঙে দেওয়া যাবে, দুটো অথবা তিনটে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যাবে।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে তোলপাড় সংসদ, পক্ষে-বিপক্ষে ওলটপালট জোটের হিসাব
এর পরেই আসে চিদম্বরমের সবচেয়ে কঠোর মন্তব্যটি। তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার যদি এই পথেই এগোতে থাকে, তা হলে এখন থেকেই ভারতের ভাঙন শুরু হয়ে গেল।’’
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, সংবিধানকে হত্যা করা হল। ভারতের মানচিত্র থেকে একটা রাজ্য আজ মুছে গেল— এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
যে প্রক্রিয়ায় এ দিন কাশ্মীর সংক্রান্ত বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে, তার তীব্র বিরোধিতায় সরব হন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও। ক’টার সময়ে অমিত শাহ বিলটি পেশ করলেন, কখন সেই বিলের প্রতিলিপি সাংসদরা পেলেন, তার উপরে আলোচনার জন্য বা সংশোধনী আনার জন্য কতটুকু সময় দেওয়া হল— সে সব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন ডেরেক। আর বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে শরিক দল জেডিইউ বিরোধিতা শুরু করে সরকারের এই সিদ্ধান্তের এবং রাজ্যসভা থেকে জেডিইউ ওয়াকআউট করে।
জম্মু-কাশ্মীরের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যসভায় তীব্র আক্রমণে বিঁধছেন সরকারকে, তখন বাকি দুই মুখ্যমন্ত্রী উপত্যকায় গৃহবন্দি। রাজ্যকে যে দু’ভাগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং দু’টি ভাগকেই যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে, সে খবর বাড়িতে বসেই পেতে হয়েছে মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে। দু’জনেই সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন সরকারকে।
‘‘আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালোতম দিন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রত্যাখ্যানের এবং ভারতের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে ভারত সরকার নিয়েছে, তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক এবং এই সিদ্ধান্ত ভারতকে জম্মু-কাশ্মীরে একটি দখলদার শক্তিতে পরিণত করবে।’’ এই ভাষাতেই এ দিন টুইট করেছেন মেহবুবা।
ওমর আবদুল্লা টুইটারে যা লিখেছেন, তার বক্তব্যও অনেকটা একই রকম। তাঁর আক্রমণ, ‘‘১৯৪৭ সালে যখন জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে জুড়েছিল, তখন রাজ্যের মানুষ ভারতের উপরে যে বিশ্বাস রেখেছেন, সে বিশ্বাস আজ সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে দেওয়া হল।’’ ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী এবং বিপজ্জনক ফলাফল হবে বলেও ওমর আবদুল্লা এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy