রাহুল গাঁধী
মাসখানেক আগে জন্মদিনের পরেই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বিদেশে। যা-ও বা দেশে ফিরলেন, সংসদে দলিত-বিতর্ক চলাকালীন তাঁর চোখ বন্ধ করে বসে থাকার ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। সেটা থামতে না থামতে গুজরাত সফরে গিয়ে এমন এক মহিলাকে জড়িয়ে ধরলেন, যাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর মামলা! গত ক’দিন বিতর্কেই দিন কেটেছে রাহুল গাঁধীর।
আজ উঠলেন গা ঝাড়া দিয়ে।
আর উঠেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের এমন দুর্বল জায়গায় ঘা দিলেন, যা শুধু প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর দলকে অস্বস্তিতে ফেলল না। আগামী বেশ কয়েক মাস ধরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন স্লোগানও তুলে দিল কংগ্রেসের হাতে। এর আগে সংসদে দাঁড়িয়ে মোদীর ১০ লক্ষ টাকা দামের স্যুট নিয়ে ‘স্যুট-বুট কা সরকার’ বা কালো টাকা ফেরানোর প্রকল্পকে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি যোজনা’ বলে বিদ্রুপ করেছেন রাহুল। আজ তাঁর ঝুলি থেকে বেরলো নতুন স্লোগান, ‘অড়হর মোদী’! প্রধানমন্ত্রীর স্তাবকরা যে ভাবে ‘হর হর মোদী’ বলেন, অগ্নিমূল্যের ডাল নিয়ে বলতে গিয়ে সেটাকেই ব্যবহার করে বললেন, ‘‘গ্রামে গ্রামে লোকে এখন নতুন স্লোগান দিচ্ছে, অড়হর মোদী!’’
‘অড়হর মোদী’ হুলের জ্বালা যে মোক্ষম, তা বিলক্ষণ টের পেয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। সংসদে রাহুলের আক্রমণের জবাব দেওয়ার কথা খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের। কিন্তু এ নিয়ে অরুণ জেটলিকে বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মোদী। জেটলি সংসদে বলেন, নানা কারণে বাজার দর আর ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফারাক থাকে। তার মানে এই নয়, এতে দুর্নীতি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ইউপিএ আমলের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গও টানেন জেটলি।
লোকসভায় এ দিন বিষয় ছিল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা। সেখানে মাত্র ১৩ মিনিটে বাছাই করা নিখুঁত শব্দে প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকে তুলোধোনা করেন রাহুল। বলেন, দু’মাস আগে সরকারের ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ হয়েছে। বলিউড থেকে তারকারা এসে উৎসবে মেতেছেন। জেলায়-জেলায় নেতারা প্রচারও করেছেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেউ টুঁ শব্দ করেননি! প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগে বলেছিলেন, চোখের জল খেয়ে যে মা ও বাচ্চা শুয়ে পড়ে, ক্ষমতায় এলে সেই দুর্দিন ঘোচাবেন। কিন্তু এখন টমেটো, আলু, ডালের দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি চৌকিদার হবেন। অথচ সেই চৌকিদারের নাকের নীচেই ডাল চুরি হচ্ছে!
রাহুল বলবেন, তাই আগেভাগেই তৈরি ছিল বিজেপি। শাসক বেঞ্চের সামনের দিকের সারিতে বসানো হয়েছিল দলের তরুণ ব্রিগেডকে। রাহুলের কথার মধ্যেই পুনম মহাজন প্রশ্ন করেন, ‘‘কোন ডালের দাম বেড়েছে?’’ কথা থামিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘সব ডালের হিসেব দেব। আপনাকে তো আর বাজার যেতে হয় না!’’ বিজেপি শিবির থেকে বিদ্রূপ উড়ে এল, ‘‘আপনি বাজারে যান? আপনার মা বাজার যান?’’ কারা এ সব কথা বলছেন, দেখার জন্য সনিয়া মুখ তুলতেই বিজেপি শিবিরের ওই নেতারা ঘাপটি মেরে বসে পড়েন। সেটা দেখে রাহুল কথা শুরু করতেই ফের বিদ্রুপ, ‘‘আপনি ডাল খান না পাস্তা?’’ ‘‘আচ্ছা, ডাল কোন গাছে ফলে?’’ অরুণ জেটলি, পীযূষ গয়ালকেও এ সময় মুচকি হাসতে দেখা যায়।
কিন্তু এই সব ব্যঙ্গ উপেক্ষা করেই কথা চালিয়ে যান রাহুল। বিজেপি শিবিরকে জবাব দিতে ডালের দামও বলেন। বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর রাহুলকে পাশে বসিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেন সনিয়া গাঁধী।
রাহুলের বক্তৃতার সময় টানা কটাক্ষ করলেও বিজেপির শীর্ষ নেতারা জানেন, রাহুল যে প্রসঙ্গটি তুলেছেন, সেটি সামাল দিতে কেন্দ্র হিমশিম খাচ্ছে। সে কারণে রাহুলের বক্তৃতার কিছু পরে নীতি আয়োগের বৈঠকে খোদ নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘‘ডালের যে অভাব হল, কেন এটা আগে ভাবা হয়নি?’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দিনে তাঁরা কী খেতে পছন্দ করবেন, রেস্তোয়ায় কীসের চাহিদা বাড়বে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই যাবতীয় পরিকল্পনা করতে হবে।’’
দিনের শেষে অনেকেই বলছেন, রাহুলের তির এ দিন বিজেপি ফেরাতে পারল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy