প্রতিবাদে ‘বর্ষবরণ’। বুধবার ইন্ডিয়া গেটে। ছবি: এপি।
দিল্লিতে নতুন বছর এল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সুরে।
কাল ইন্ডিয়া গেটে যেখানে ছিল খোলা আকাশের নীচে অন্য আবহে বর্ষবরণের আয়োজন, আজ সেখানেই সংবিধান ছুঁয়ে তাকে রক্ষা করার শপথ নিলেন কয়েকশো হিন্দু-মুসলমান, ধনী-দরিদ্র, বর্ষীয়ান-তরুণ। জানালেন, তাঁদের শপথটি হল ধর্মের ভিত্তিতে দেশের বিভাজন রোখার।
ইংরেজি নববর্ষের দিনে এমনিতেই ভিড় হয় ইন্ডিয়া গেটে। আজ সেই ভিড়ের সঙ্গে মিশল প্রতিবাদীর স্রোত। ‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’, ‘তানাশাহি নেহি চলেগি’ স্লোগান তুললেন বিক্ষোভকারীরা। অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। কেউ পাঠ করলেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। অনেকে মিলে গেয়ে উঠলেন ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জের ‘হম দেখেঙ্গে’।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে নেই ব্রডব্যান্ডও, আংশিক চালু এসএমএস, হতাশ কাশ্মীর
জনস্রোতে তখন আশেপাশের রাস্তায় গাড়ির গতি মন্থর। লাগোয়া পাঁচটি মেট্রো স্টেশনের গেট ঘণ্টাখানেক বন্ধ রইল। পরে অবশ্য কর্তৃপক্ষ জানালেন, বিক্ষোভের জন্য নয়, ভিড় সামলাতেই এই বন্দোবস্ত।
পায়ে পায়ে: হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা, ‘ভারতে জন্মেছি, ভারতে থেকেছি, ভারতেই মরব।’ বুধবার কোচিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মিছিলে হাঁটলেন হাজার হাজার মানুষ। দাবি উঠল, এই আইন বাতিল করুক মোদী সরকার। ছবি: পিটিআই।
গত কাল তীব্র ঠান্ডার তোয়াক্কা না-করেই শাহিনবাগে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিবাদীরা। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতে পৌঁছতেই জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে নতুন দশককে স্বাগত জানান তাঁরা। ‘জনগণমন’-এর সঙ্গে দুলতে থাকে হাজার হাজার মোবাইলের টর্চ। উড়তে থাকে জাতীয় পতাকা। সেখানে উপস্থিত যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘ওরা ভাঙবে, আমরা গড়ব।’’ সমাজকর্মী হর্ষ মন্দারের কথায়, ‘‘হতে পারে কাল আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। হতে পারে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেবে। শেষ যা-ই হোক, শাহিনবাগ এর মধ্যে জিতে গিয়েছে।’’
এই মধ্যযামে বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন, প্রাণের পরশে আর স্বাধীনতায় জেগে উঠবে ভারত। এক একটা মুহূর্ত আসে, ইতিহাসে বিরল সেই সব মুহূর্ত, যখন আমরা প্রাচীন থেকে নবীনে পদার্পণ করি, যখন একটা যুগের অবসান হয়, যখন একটা জাতির দীর্ঘ দমিত আত্মা তার কণ্ঠস্বর খুঁজে পায়। ভারতের সেবায়, ভারতবাসীর সেবায় এবং বৃহত্তর মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগের শপথ গ্রহণই যথার্থ কর্তব্য হবে এই পবিত্র লগ্নে। —জওহরলাল নেহরু
১৪ অগস্ট ১৯৪৭ (স্বাধীনতাপ্রাপ্তির প্রাক্-মুহূর্তে)
শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়ায় আজও ছিল প্রতিবাদের চেনা ছবি। আজ জামিয়ায় যান অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর ও অভিনেতা জিশান আয়ুব। তেরঙ্গার ভিড়ে আয়ুব স্লোগান দেন, ‘হম এক হ্যায়’। কবিতা পড়েন স্বরা।
নাট্যকর্মী সফদর হাসমির মৃত্যুদিন ছিল আজ। সেই উপলক্ষে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বহু মানুষ। জামিয়ায় পুলিশি হামলা ও শাহিনবাগের প্রতিবাদ সংক্রান্ত ছবি নিয়ে প্রদর্শনীতে উপচে পড়ে ভিড়। অনুষ্ঠানে মোদী সরকারের নীতির বিরোধিতায় সরব বিশিষ্ট জনেদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি পড়েন অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক। বলেন, সম্প্রতি কেন্দ্র সংবিধানকে খাটো করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার চক্রান্ত রোখারও ডাক দেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন কর্নাটকি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গায়ক টি এম কৃষ্ণ। জাতীয় সঙ্গীতের বাকি স্তবকগুলি গেয়ে শোনান তিনি। বলেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীতকে পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে। একই সঙ্গে পুনরুদ্ধার করতে হবে রাম ও আল্লাকে।’’
শপথ: মঙ্গলবার রাতে শাহিনবাগে। ছবি: পিটিআই।
দেশব্যাপী প্রতিবাদে অস্বস্তিতে বিজেপি। আজ বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, সব শহরে সিএএ-র প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সভা করবেন বিজেপির নেতারা। আগামী ১২ জানুয়ারি জবলপুরে সিএএ-র সমর্থনে সভা করবেন অমিত। এ মাসেই সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। দায়িত্ব নেবেন এখনকার কার্যনির্বাহী সভাপতি জে পি নড্ডা। সে বিষয়টি নিয়েও আজ আলোচনা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy