ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। তৈরি হয়ে বিমানবন্দর যেতে যেতে ভোর ৫টা। তার পর ৫টা ৫৫ মিনিটে বিমান ধরেন। অফিস পৌঁছে যান ৭টা ৪৫ মিনিটে। সপ্তাহে পাঁচ দিন এটাই রুটিন মালয়েশিয়ার বাসিন্দা ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাচেল কৌরের। এ ভাবেই গত এক বছর ধরে সপ্তাহভর বিমানে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ করছেন এই চাকুরে মা। অফিস সামলে দুই সন্তানকে সময় দেওয়ার জন্য এটাই তাঁর কাছে সেরা উপায় বলে জানাচ্ছেন এয়ার এশিয়ার অর্থ দফতরের কর্মী। রাচেলের দাবি, বিমানে বাড়ি থেকে অফিস যাতায়াতে তাঁর সময় যেমন বাঁচছে, তেমনই খরচও কমেছে। কী ভাবে?
রাচেল জন্মসূত্রে ভারতীয়। পড়াশোনা, চাকরি সবই মালয়েশিয়ায়। থাকেন পেনাংয়ে। কর্মস্থল কুয়ালা লামপুরে। বাড়ি থেকে অফিসের সড়কপথে দূরত্ব সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের বেশি। প্রতি দিন বাড়ি থেকে যাতায়াত অসম্ভব ভেবে বাড়ি ভাড়া করেছিলেন কুয়ালা লামপুরে। কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারেননি। দুই সন্তানের জন্য বড্ড মনখারাপ হত। কাজের পর প্রতি দিন দুই ছেলেমেয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করত। কিন্তু উপায় কী?
এই সব ভেবেচিন্তে সপ্তাহে পাঁচ দিন বাড়ি থেকে অফিস বিমানে যাতায়াত শুরু করেছেন রাচেল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দুই সন্তান খুবই ছোট। ছেলের বয়স ১২ বছর। মেয়ে এখন ১১। ওদের বড় হয়ে ওঠার সময়টা আমি কাছে থাকতে চাই। তাই বাড়ি থেকে অফিস, অফিস থেকে বাড়ি যাতায়াতে এটাই আমাদের কাছে সেরা উপায়।’’ ওই মহিলা আরও বলেন, ‘‘আগে কুয়ালা লামপুরে অফিসের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। সপ্তাহে এক দিনের জন্য বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু তাতে আমার পরিবার এবং অফিস, কোনওটাই ভাল করে সামলানো হচ্ছিল না।’’ তাই ২০২৪ সালের শুরু থেকে রাচেল বাড়ি থেকে অফিস যান উড়ানে।
আরও পড়ুন:
অফিসের কাছে বাড়ি ভাড়া করে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে রাচেলের খরচ হত প্রায় ৪২ হাজার টাকা। এখন বিমানে যাতায়াতে মাসে খরচ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার টাকা। তাই এখন সঞ্চয়ও বেশি হচ্ছে। বিমানে যাতায়াতের সময়টুকু রাচেলের ‘মি টাইম’। তিনি জানান, বিমানযাত্রার প্রথম কয়েক মিনিট গান শোনেন। তার পর জানলা দিয়ে আকাশ দেখেন। বিমান থেকে নেমেই ব্যস্ততার শুরু। ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজ শেষে আবার উড়ান। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত সাড়ে ৮টা। তার পর সন্তান এবং পরিবারকে সময় দেন। রাচেল বলেন, ‘‘আমি যা-ই করি ১০০ শতাংশ দিয়ে করি। কাজের মধ্যে থাকলে অন্য কিচ্ছু নিয়ে ভাবি না। বাড়ি ফিরলে অফিসের কাজ নিয়ে ভাবনা নৈব নৈব চ।’’