স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিলে ওই পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়ায় আজ নিজেদের সংশোধনী ফিরিয়ে নেন আরএসপি নেতা এন কে প্রেমচন্দ্রন, মণীশ তিওয়ারিরা। ফলে ধ্বনি ভোটেই পাশ হয়ে যায় বিলটি।
ফাইল চিত্র।
অপরাধী শনাক্তরণ বিল (২০২২) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানোর দাবিতে একযোগে সরব ছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু দিনের শেষে বিরোধীদের আপত্তির বিষয়গুলি সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে লোকসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শাসক শিবির আশ্বাস দিয়েছে, বিরোদীদের দাবি মেনে অভিযুক্ত বা ধৃত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া তার ব্রেন ম্যাপিং বা নার্কো পরীক্ষা করা হবে না। এ ছাড়া সাত বছরের কম সাজাপ্রাপ্ত অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান বা ডিএনএ নমুনা না-ও দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিলের বিধিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার আজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহ। এতে রাজনৈতিক ধর্না বা মামুলি কোনও ঘটনায় গ্রেফতার হলে কোনও ব্যক্তির শারীরিক মাপজোখ ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ বাধ্যতামূলক থাকছে না।
গত ২৮ মার্চ বিলটি লোকসভায় পেশ করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিলে বলা হয়েছে, অভিযুক্তের হাত ও পায়ের ছাপের সঙ্গেই সেই ব্যক্তির চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান এমনকি ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ। প্রয়োজনে আটক ও ধৃত ব্যক্তিদের নার্কো পরীক্ষা ও ব্রেন ম্যাপিং-ও করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে। সরকারের দাবি, এর ফলে প্রমাণ জোগাড়ে পুলিশের সুবিধে হবে তাতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত করা সম্ভব হবে। পেশের দিনই বিলটি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। আজও বিল নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, “কোনও আটক ব্যক্তির এ ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারে হস্তক্ষেপের সামিল।” তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মতে, “এর ফলে সরকার বিরোধীদের গ্রেফতার করে তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করার অধিকার পেয়ে যাবে শাসক পক্ষ।” ব্রিটিশদের তৈরি করা ১০২ বছর আগের আইনে অভিযুক্তের ছবি এবং হাত ও পায়ের ছাপ নেওয়ার অধিকার কেবল ছিল সাব-ইন্সেপেক্টর পদমর্যদার অফিসারের। নতুন বিলে হেড কনস্টেবল বা জেলের হেড ওয়ার্ডার বা মুখ্য কারাপ্রহরী ওই নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের প্রশ্ন, “এক জন নন-গেজেটেড অফিসারকে দিয়ে ওই কাজ করানো কতটা যুক্তিযুক্ত?”
সংসদে এখনও পাশ হয়নি ডিএনএ প্রযুক্তি বিল। আটকে রয়েছে তথ্য সুরক্ষা আইন বিলও। আজকের বিলে সরকার অভিযুক্ত অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে। বিজেডি সাংসদ ভার্তৃহরি মাহতাবের প্রশ্ন, “ডিএনএ ও তথ্য সুরক্ষা বিল পাশ না হলে তথ্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিশ্চয়তা কী ভাবে দিতে পারবে সরকার!” বিএসপির দানিশ আলির মতে, “অতীতের পোটা বা টাডা আইনের মতোই আগামী দিনে অপরাধী শনাক্তকরণ আইনের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে সরকারকে।” ছাত্র আন্দোলন করে আসা ওই নেতা প্রশ্ন তোলেন, “ছাত্রাবস্থায় একাধিক বার সরকার বিরোধী আন্দোলন করায় গ্রেফতার হতে হয়েছে। নতুন আইন বলছে, সামান্য কারণে আটক হলেও সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ।” ডিএমকে নেতা দয়ানিধি মারনের অভিযোগ, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করতেই ওই আইন আনা হচ্ছে।” তিনি ওই আইনের চেয়ে বিচারাধীনদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার প্রশ্নে জোর দেন। আজ প্রায় সব বিরোধী দলই ওই বিলটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে সরব হয়।
বিরোধীদের জবাবে আজ গোড়াতেই অমিত শাহ জানিয়ে দেন, যে তথ্যভাণ্ডারে তথ্য সংগৃহীত হবে তা নিশ্ছিদ্র হবে। কোনও ভাবেই সেই তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ওই তথ্য কেবল জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) মাধ্যমে সংগৃহীত হবে ও তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারীকে তথ্য জোগানের দায়িত্বে থাকবে কেবল ওই সংস্থা। একই সঙ্গে থানা ও জেলে যারা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও দাবি করেন শাহ।
বিরোধীদের মূল উদ্বেগ প্রসঙ্গে অমিত শাহ আজ বলেন, সাত বছরের কম সাজার অপরাধের ক্ষেত্রে দোষী বা অভিযুক্ত ইচ্ছে না-হলে নিজেদের নমুনা না-ও দিতে পারেন। মূল বিলে না-থাকলেও সংসদে পাশের পরে আইনের ধারা যখন তৈরি হবে, তখন ওই বিকল্প জুড়ে দেওয়া হবে বলে জানান শাহ। আগামী দিনে আইনের ধারায় বিষয়টির উল্লেখ না থাকলে প্রয়োজনে আইনে সংশোধনী আনবে সরকার। অমিত শাহ বলেন, “রাজনৈতিক ধর্না দেওয়ায় কেউ গ্রেফতার বা আটক হলে সেই ব্যক্তির নমুনা দেওয়া আর বাধ্যতামূলক থাকছে না।” তবে মহিলা ও শিশুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তি বা গুরুতর অপরাধে যাদের সাত বছরের বেশি সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা ওই সুবিধা পাবেন না। তাদের নমুনা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। অভিযুক্তদের সম্মতি ছাড়া ব্রেন ম্যাপিং বা নার্কো পরীক্ষা করা যাবে না বলেও আশ্বাস দেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিলে ওই পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়ায় আজ নিজেদের সংশোধনী ফিরিয়ে নেন আরএসপি নেতা এন কে প্রেমচন্দ্রন, মণীশ তিওয়ারিরা। ফলে ধ্বনি ভোটেই পাশ হয়ে যায় বিলটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy