অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
এক দেশ, এক ভাষার পরে এ বার ‘এক দেশ-এক কার্ড’-এর প্রস্তাব দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ! কিন্তু গোটা দেশে আধার কার্ডের তথ্য ফাঁস হওয়ার একাধিক অভিযোগ যেখানে প্রায়ই আসে, ফি দিন আমজনতার ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে ফাঁকা করে দেওয়া হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সেখানে ওই কার্ড আদৌ কতটা সুরক্ষিত, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে কার্ডে যেখানে প্যান ও ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত তথ্য রাখার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তার প্রশ্নে কার্ড কতটা ভরসাযোগ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শুরুতেই।
বিশ্বের বহু উন্নত দেশেই নাগরিকদের পরিচয়ের প্রশ্নে সাধারণত একটিই কার্ড থাকে। সেই কার্ডের নম্বরের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে তথ্যভাণ্ডারে। অপরাধমূলক কাজের তদন্তে মাউসের মাত্র একটি ক্লিকেই কোনও সন্দেহভাজন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেখে নিতে পারেন তদন্তকারীরা। আজ কতকটা সেই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আধার, প্যান, ভোটার, ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব তথ্যের জন্য একাধিক কার্ডের পরিবর্তে একটি কার্ডেই সব তথ্য ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। আজ রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (আরজিআই)-এর নতুন ভবনের শিলান্যাসে এসে অমিত বলেন, ‘‘জনগণনার সময়ে কারও আধার, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান বা ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা কেবল একটি কার্ডে সংরক্ষিত করা সম্ভব।’’ ওই ব্যবস্থা কার্যকর হলে বহু কার্ড নিয়ে ঘোরার প্রয়োজন পড়বে না।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে ইউপিএ আমলেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মূলত সে সময়ে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির পরিবার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যের পাশাপাশি সেই ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য এক জায়গায় আনার পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্র। অতীতে ২০১০ ও ২০১৫ সালে এনপিআর-এর জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফের ওই কাজ হবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
খুব দ্রত ২০২১ সালের আদমশুমারির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে নামতে চলেছে আরজিআই-র প্রতিনিধিরা। তার ঠিক আজ ওই সংস্থার অনুষ্ঠানে এসে শাহের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের পরিকল্পনা হল, এনপিআর ও আধার তথ্যের পাশাপাশি কোনও ব্যক্তির সামাজিক ও আর্থিক বিষয়ক সমস্ত তথ্যকে এক জায়গায় আনা। সেই ইঙ্গিতই আজ দিয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘এতে অপরাধমূলক কাজের তদন্তে সাহায্যের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্প রূপায়ণেও সুবিধা হবে।’’
অনেকের মতে, এতে ভবিষ্যতে কোনও ব্যক্তির উপরে নজরদারি রাখা আরও সহজ হবে সরকারের। আসন্ন জনগণনা খাতায়-কলমের পরবির্তে মোবাইল অ্যাপের করা হবে বলে জানিয়েছন শাহ। ধার্য হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন হল ওই কার্ড কতটা সুরক্ষিত?
সাইবার বিশেষজ্ঞ কুমার বিক্রম সিংহের মতে, ‘‘গোটাটাই নির্ভর করছে কার্ডের নিরাপত্তার দিকটি কতটা সুরক্ষিত তার উপরে। যদি কার্ডে শক্তিশালী সুরক্ষাবিধি থাকে, তা হলে তথ্য চুরির ভয় কম। কিন্তু আজকের দিনে হ্যাকাররা অত্যন্ত চালাক। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশ্নে এরা এতটাই দক্ষ হয় যে কোনও একটি সিস্টেমের নিরাপত্তা বিধিকে পাশ কাটিয়ে এক দিকে যেমন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম, তেমনই কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট এক নিমেষে খালি করে দিতে পারে এরা। তাই কার্ডের তথ্যকে কী ভাবে সুরক্ষার মোড়কে প্যাকেটবন্দি (এনক্রিপট) করে রাখা হচ্ছে তা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ একই সঙ্গে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর তথ্যকে একটি স্থানে জমা রাখার জন্য দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy