উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী। রবিবার। ছবি: পিটিআই
সংসদে এখনও মুখ খোলেননি। বরং বিরোধীদের অভিযোগ, সংসদ থেকে পালিয়েই বেড়াচ্ছেন তিনি! এই পরিস্থিতিতে নোট বাতিলের বিষয়টি নিয়ে সংসদের বাইরে বিরোধীদের উদ্দেশে লাগাতার আক্রমণের ধারা আজও বজায় রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবারও সরগরম রইল নোট-তরজা।
প্রথমে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে। তার পরে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে এক জনসভায়। দুই ক্ষেত্রেই ‘নগদ লেনদেন কমানো’র কথা বলে মোদীর দাবি, সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ। এখনই সব ক্ষেত্রে নগদের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করা যাবে না, এটা বিলক্ষণ জানেন তিনি। এই অবস্থায় স্বচ্ছ অর্থনীতির স্বার্থে কম নগদ ব্যবহার করার জন্য প্রযুক্তি নির্ভর ই-ওয়ালেট ব্যবহারে জোর দিয়েছেন মোদী। আর বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, তিনি যখন দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে চাইছেন, তখন বিরোধীরা ধর্মঘট ডেকে দেশ স্তব্ধ করে দিতে চাইছে।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে আজই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ‘মন কি বাত’। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কী বার্তা দেন, তা দেখার জন্য সব শিবিরেই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। নিজের বক্তব্যে মোদী বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, কৃষক, শ্রমিক বা গরিব শ্রেণির স্বার্থেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত এবং এর অন্যতম লক্ষ্যই হল ‘আমিরি হটাও’! আমজনতার ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে মোদীর বার্তা, ‘‘গত ৭০ বছর ধরে যে অসুখের সঙ্গে দেশ লড়াই করছে, তা থেকে রেহাই পেতে সময় তো লাগবেই।’’ মোদীর আশা, দেশের যুব সম্প্রদায় তাঁর এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য এগিয়ে আসবে। নেট-মোবাইল ব্যাঙ্কিং সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে তাই যুব সম্প্রদায়ের সাহায্য চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এড়িয়ে গেলেও দুপুরে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে জনসভায় আক্রমণ শানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বার্তা, ‘‘নোট বন্ধ না বিরোধীদের ভারত বন্ধ— বেছে নিন আপনারাই।’’
চুপ করে বসে নেই বিরোধীরাও। নোট বাতিলের প্রতিবাদে আগামিকাল ‘আক্রোশ দিবসে’ পথে নামছে বিরোধী জোট। তার আগে আজ মোদীর বক্তব্যের পরেই সরব হন বিরোধী নেতারা। সবচেয়ে সরব ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান আসলে ‘মোদী কি বাত’ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে! একই সঙ্গে তাঁর টুইট, ‘‘সমাধান খোঁজার পরিবর্তে মোদী সরকারিতন্ত্রকে রাজনীতি, নিজের উদ্দেশ্যসাধন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছেন। মোদীজি, আপনি দেশের অর্থনীতি ও উন্নতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমরা না আপনাকে না আপনার প্রযুক্তিকে বিশ্বাস করি।’’ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘দেশের বড় অংশের মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ জোর দেওয়া হচ্ছে নগদবিহীন অর্থনীতির উপরে!’’
বিরোধীরা এককাট্টা দেখে পাল্টা আক্রমণাত্মক হচ্ছে বিজেপিও।
গত সপ্তাহে দলের সংসদীয় বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কালো টাকার প্রশ্নে কোনও আপস নয়। বরং এ নিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণে নামবে দল। আজ বেঙ্গালুরু থেকে বিরোধী নেতাদের একজোট হওয়াকে কটাক্ষ করে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘বন্যার সময়ে প্রাণ বাঁচাতে ইঁদুর, বিড়াল, সাপ, বেজি একসঙ্গে এক গাছে উঠে পড়ে! তখন কেউ কারও শত্রু নয়, প্রাণ বাঁচানোটাই আসল। এখানেও কালো টাকার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে রাহুল গাঁধী, অরবিন্দ কেজরীবাল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই মোদীর বিরুদ্ধে একজোট। ওই নেতাদের রাতের ঘুম চলে গিয়েছে!’’
এর মধ্যেই আগামিকাল থেকে ফের খুলছে সংসদ। শীতকালীন অধিবেশন শুরুর দিন থেকেই নোট বাতিল বিতর্কে ভেস্তে যাচ্ছে সংসদ। মোদীর আজকের প্রতিক্রিয়ার পরে কাল আরও রণংদেহি মনোভাব নিয়ে সংসদে আসবেন বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, মোদী সংসদে মুখ খোলা তো দূর, সংসদ থেকেই পালাচ্ছেন! অথচ বাইরে মুখ খুলে বিরোধীদের অপমান করছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চাইলে তবেই সংসদের অধিবেশন সুষ্ঠু ভাবে শুরু হতে পারে। নচেৎ নয়। কিন্তু নোট বদল প্রশ্নে মোদী যে ভাবে প্রতিদিন আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, তা দেখে বিজেপি শিবির বলছে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া বা পিছু হটার কোনও প্রশ্ন নেই।
অনড় দু’পক্ষই। ফলে সংসদের চলতি অধিবেশন যে কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে, সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। যে ঘটনা ইউপিএ জমানায় একাধিক বার দেখা গিয়েছিল।
সংসদের পাশাপাশি আগামিকাল দেশ জুড়ে ‘আক্রোশ দিবস’ পালন করবে কংগ্রেস। কলকাতায় পথে নামছেন মমতা। নোট বাতিলের প্রশ্নে কাল হরতাল ডেকেছে বামেরা। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, নতুন মাসের শুরুতে জনতার সমস্যা আরও চরমে উঠবে। গ্রামীণ এলাকায় টাকার টান পড়ায় বীজ কেনার সমস্যা রয়েছে। প্রভাব পড়ছে অসংগঠিত শিল্পে। কানপুরে চামড়ার ব্যবসায়ীরা কাঁচামালের অভাবে ট্যানারি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মার খেতে শুরু করেছে বস্ত্র শিল্প। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন না। কমছে উৎপাদনের হার। তার মধ্যেই সামনে নতুন মাস। মাসপয়লা থেকে টাকার জোগানের অভাবে সমস্যার মুখে পড়তে চলেছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। মুদির দোকান থেকে দৈনিক বাজার— নগদের অভাবে প্রবল সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমজনতার সেই ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই মোদীর বিরুদ্ধে নতুন মাসের শুরুতে সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিরোধী শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy