Amid ongoing Farmers’ protest almost 10000 Apple Trees of Muslim nomads chopped down in Kashmir dgtl
Jammu And Kashmir
কোন যুক্তিতে কাটা পড়ল হাজার হাজার আপেল গাছ? উত্তর খুঁজছেন কাশ্মীরিরা
ফসলের যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে মুখ খোলার সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা, সেখানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চাওয়ার সুযোগও নেই কাশ্মীরের আপেল চাষিদের!
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
বিতর্কিত কৃষি আইন ঘিরে বিক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কৃষকদের সঙ্গে সরকারের দফায় দফায় বৈঠকেও মেলেনি সমাধানসূত্র। নয়া কৃষি আইনের যে দিকগুলো নিয়ে কৃষকদের আপত্তি, তার মধ্যে অন্যতম ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। অথচ ফসলের যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে মুখ খোলার সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা, সেখানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চাওয়ার সুযোগই নেই কাশ্মীরের আপেল চাষিদের!
০২১৪
কারণ কয়েক দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সযত্নে যে আপেল বাগান তৈরি করেছিলেন তাঁরা, সরকারি বুলডোজারের নীচে তা আজ ধুলোয় মিশে গিয়েছে। কৃষক আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীনই জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশে উপত্যকায় ১০ হাজারের বেশি আপেল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
০৩১৪
গত বছর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকে এমনিতেই গোটা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর উপত্যকা। ভাটা পড়েছে পর্যটন শিল্পেও। তাই বংশপরম্পরায় লালিত-পালিত আপেলবাগানের পরিচর্যাতেই মন দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ, যাতে শীতের মরসুমে কিছু রোজগার হয়। কিন্তু চোখের সামনে সেই বাগানই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে দেখলেন তাঁরা।
০৪১৪
মধ্য কাশ্মীরের বদগাম জেলার কানিদাজান-সহ আশেপাশের এলাকাতেই মূলত আপেল গাছ নিধন শুরু হয়। গুর্জর এবং বাখরওয়াল, এই দুই মুসলিম যাযাবর গোষ্ঠীর বাস সেখানে। ১৯৯১ সালে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই দুই গোষ্ঠী। তাদের আপেল বাগানেই নিধন যজ্ঞ চালিয়েছে বন দফতর। এলাকায় মাটির কুঁড়েঘর বানিয়ে এত দিন থাকছিলেন ওই দুই গোষ্ঠীর মানুষ। সেগুলিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
০৫১৪
স্থানীয় বাসিন্দা, ৬০ বছর বয়সি আবদুল গনি ওয়াগে জানিয়েছেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে নভেম্বর মাসে আপেল গাছ নিধন যজ্ঞ শুরু হয়। শ্রীনগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দেড় বিঘে জমি রয়েছে আবদুলের। তাতে আপেল চাষ করতেন তিনি। আবদুলের অভিযোগ, ১০ নভেম্বরের সকালে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ খবর পান যে একদল লোক কুড়ুল-করাত নিয়ে তাঁর বাগানে হাজির হয়েছেন। তড়িঘড়ি সেখানে ছুটে যান তিনি। কিন্তু গিয়ে দেখেন, পুলিশ এবং সিআরপিএফ-এর তত্ত্বাবধানে নির্বিচারে গাছ কেটে চলেছেন বন দফতরে লোকজন।
০৬১৪
আবদুল জানান, আপেল বাগানে ৫০টি গাছ ছিল তাঁর। তার উপর নির্ভর করেই সংসার চলত। ৭ মেয়ে রয়েছে তাঁর। মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুলিশের কাছে অনুনয় বিনয়ও করেন তিনি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বরং বছর ৫০ আগে বাবার কাছ থেকে শিখে নিজে হাতে যে গাছগুলি বসিয়েছিলেন, কুড়ুলের ঘায়ে সেগুলি একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেন।
০৭১৪
উপত্যকার সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ নভেম্বর, বনদফতরের ৫০ জন আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে সারাদিনে প্রায় ১০ হাজার আপেল গাছ কেটে ফেলা হয় উপত্যকায়। গ্রামের মোড়ল মহম্মদ আহসান জানা, গাছ কাটার বিরোধিতা করে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দিলে মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তাঁদের পিছু হটতে বাধ্য করা হয়। মহম্মদ আহসান আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আপেল গাছের ডাল অত্যন্ত সরু এবং নরম। কুড়ুলের এক-দু’ঘাও সহ্য করার ক্ষমতা নেই।’’
০৮১৪
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আপেলচাষি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘এতদিন আপেল বাগানেই সারাদিন কেটে যেত। কিন্তু ২০ দিন হয়ে গেল, আপেল বাগানে পা রাখিনি। গাছ কেটে ফেলার পর খাঁ খাঁ করছে বাগান। ওখানে যাওয়ার মতো মনের জোর আর নেই আমার।’’
০৯১৪
কাশ্মীরে আপেল বাগানগুলি বন দফতরের জমির উপর তৈরি বলে দাবি সরকারের। সাত পুরুষ ধরে সেখানে আপেল চাষ করে আসছেন গুর্জর এবং বাখরওয়ালরা। শুধু এই গুর্জর এবং বাখরওয়ালরাই নন, দেশের ১০ লক্ষের বেশি তফসিলি উপজাতি এবং বনবাসীরা অরণ্যের অধিকার আইন ভোগ করেন। অর্থাৎ অরণ্যে বসবাসের অধিকার যেমন রয়েছে তাঁদের, তেমনই সেখানে বসবাসের অধিকারও রয়েছে তাঁদেরই। কাগজে কলমে ওই জমির উপর মালিকানাও ভোগ করেন তাঁরা।
১০১৪
একদা রাজ্য থাকলেও জম্মু-কাশ্মীরে আজও ওই আইন কার্যকর হয়নি। গত বছর উপত্যকার জন্য সংরক্ষিত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পর, ১৫৫টি কেন্দ্রীয় আইন আপনাআপনিই সেখানে কার্যকর হয়ে যায়। অরণ্যের অধিকার আইনও সেখানে কার্যকর করা হবে বলে সেইসময় আশ্বাস দিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। সেই সময় উপত্যকার মুখ্যসচিব বিভিআর সুব্রহ্মণ্যমের দফতর থেকে বলা হয়, ‘‘২০২১-এর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই সংক্রান্ত সমীক্ষা সংম্পূর্ণ হলে, মার্চ মাসের মধ্যে উপত্যকায় অরণ্যের অধিকার আইন কার্যকর হয়ে যাবে।’’
১১১৪
কিন্তু আইন কার্যকর হওয়ার আগেই হাজার হাজার আপেল গাছ নিধন, স্থানীয়দের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং উচ্ছেদ নোটিস ধরানোর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ লুকিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই মুহূর্তে উপত্যকায় গুর্জর এবং বাখরওয়াল গোষ্ঠীর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বাস। উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ এই দুই গোষ্ঠীর মানুষ। কাশ্মীরি এবং ডোগরাদের পর তারাই সেখানকার তৃতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়।
১২১৪
তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গুর্জর এবং বাখরওয়ালদের উচ্ছেদের নোটিস ধরানো সম্পূর্ণ বেআইনি পদক্ষেপ বলে দাবি আইনজীবীদের। বনবাসীদের বাড়িঘড় ধ্বংস করা হলে, আইনত তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলেও জানান তাঁরা। তা যাতে না দিতে হয়, তার জন্যই উপত্যকায় অরণ্যের অধিকার আইন কার্যকর করা নিয়ে সরকার ঢিলেমি করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
১৩১৪
এর আগে, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্যকে নির্দেশ দেয় যে, অরণ্যের অধিকার আইনের এক্তিয়ারে পড়ছেন না যে সমস্ত তফসিলি উপজাতি এবং বনবাসী, অবিলম্বে বন দফতরের জমি থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু দেশের অন্দরে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ১৫ দিনের মাথায় নিজের রায়েই স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
১৪১৪
তার পরেও কোন যুক্তিতে হাজার হাজার আপেল গাছ কেটে ফেলা হল, তার সদুত্তর মেলেনি এখনও পর্যন্ত। এ নিয়ে মধ্য কাশ্মীরের ফরেস্ট কনজারভেটর জুবের আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু জেলাস্তরের নির্বাচন ঘিরে যে আচরণবিধি জারি হয়েছে, তার আওতায় এ নিয়ে কোনও রকম মন্তব্য করা থেকে তাঁকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।