বিরোধী ঐক্যের জেরে রাজ্যসভায় কাল মুখ পুড়েছে সরকারের। জমি অর্ডিন্যান্সকে কৃষক-বিরোধী বলে যে ভাবে একজোটে প্রচার চালাচ্ছে বিরোধীরা, তাতে সরকারের ভাবমূর্তিতেও আঁচ পড়ার আশঙ্কা। এই অবস্থায় জমি অর্ডিন্যান্সের বিলে সংশোধন করছে সরকার। তবে জমি বিল নিয়ে সরকার নমনীয় হলেও যে রাজ্যসভায় বিমা বিলের পথ মসৃণ হবে, এমন আশা করতে পারছেন না নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা। তবে সাহসী মুখ বজায় রাখছে সরকার। এবং কেন্দ্রের তরফে পাল্টা এই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে যে জমি বিল, সোজা পথে পাশ না হলে মে মাসে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকেই পাশ করিয়ে নেওয়া হবে বিমা অধ্যাদেশের বিল।
বিমা বিলটি আজ লোকসভায় পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে জমি বিলে প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পরে বিজেপি সূত্রে বলা হয়, জমি অধ্যাদেশে আপত্তি জানিয়ে বিরোধীরা যে ভাবে কেন্দ্রকে কৃষক ও গরিবদের বিরোধী বলে প্রতিপন্ন করতে নেমে পড়েছে, তাতে এ ছাড়া পথ ছিল না। কৃষক-বিরোধী তকমা ঝেড়ে ফেলা যেমন জরুরি, তেমনই সংসদে ওই বিলটি পাশ করানোর জন্যও তা জরুরি। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু অবশ্য আজ দাবি করেন, কৃষক-স্বার্থেই সরকার অবস্থান নরম করছে। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, সোমবার সংসদে জমি বিল ও তার একটি সংশোধনী পেশ করা হবে।
কিন্তু কী ধরনের সংশোধন করতে চাইছে সরকার?
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বড় কোনও পরিবর্তনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নন। কারণ, তাতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেটাই ভেস্তে যাবে। শিল্পমহল অসন্তুষ্ট হবে। বিনিয়োগ বাধা পাবে। তাই অধ্যাদেশে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হবে যে, সরকার কৃষক-স্বার্থেই কাজ করছে। যেমন, শিল্প করিডর, গ্রামীণ পরিকাঠামো নির্মাণ, আবাসন, প্রতিরক্ষা কারখানা পত্তন এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের সময় সেই জমি বহুফসলি কি না, সেই বাছবিচার করা হবে না জানানো হয়েছিল অর্ডিন্যান্সে। কিন্তু এখন বলা হবে, পারতপক্ষে বহুফসলি জমির অধিগ্রহণ এড়িয়ে চলবে সরকার। দুই, উপরে বলা পাঁচ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের সময় কৃষকদের সম্মতি নেওয়ার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সামাজিক প্রভাবের সমীক্ষার শর্তও তুলে দেওয়া হয়েছিল। এখন সুর নরম করে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে জমির মালিকদের সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তা ছাড়া, অধিগৃহীত জমিতে কারখানা হলে সেখানে ভূমিহীন কৃষকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের নগদ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হতে পারে।
এর পরেও কি এ যাত্রায় জমি বিল পাশ করাতে পারবে সরকার?
কংগ্রেস ও বিরোধীরা কিন্তু আপত্তিতে অনড় এখনও। মোদীর জমি-নীতির প্রতিবাদে আজ জয়পুরে কংগ্রেস সমর্থকরা পথে নামেন। তাদের ওপর লাঠিও চলে। শুধু কংগ্রেস নয়, সরকারের আনা জমি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় তৃণমূল, বাম, সংযুক্ত জনতা দল, সমাজবাদী পাটি ও বহুজন সমাজ পার্টি এখন এককাট্টা। রাজ্যসভায় কাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করাতে পেরে বিরোধীরা এখন আরও উজ্জীবিত। এবং সেই বিরোধী ঐক্য যাতে কায়েম থাকে, সে জন্য রাজ্যসভায় বিমা বিলের বিরোধিতা করতেও প্রস্তুত এখন কংগ্রেস। ছবিটা অনুকূল নয় ¥
বিজেপির নিজের শিবিরেও। বিজু জনতার মতো বন্ধু দল এবং শিবসেনা-অকালির মতো শরিক দলও আপত্তি করছে জমি বিলে। শরিক দলগুলির আপত্তি দূর করতে না পারলে যৌথ অধিবেশন ডেকেও বিলটি পাশ করানো কঠিন হবে সরকারের পক্ষে।
এই পরিস্থিতিতে জমি বিলে সংশোধনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দৌত্যেও নেমেছে বিজেপি। বাজেট পেশের পরেই পারিবারিক কারণে আমেরিকা গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কাল তিনি দেশে ফিরছেন। সরকারের সূত্রের খবর, দেশে ফিরেই তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দোলযাত্রা উপলক্ষে কাল থেকে সংসদ ছুটি। খুলবে আগামী সোমবার। এর মধ্যেই বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চাইছে সরকার পক্ষ। ইতিমধ্যেই সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, জগৎপ্রকাশ নড্ডা বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, শরিকদের বোঝানো গিয়েছে। ভোটাভুটিতে তারা এই বিলকে সমর্থন করবে। লোকসভায় সরকারের গরিষ্ঠতা রয়েছে। রাজ্যসভায় বিলগুলি আটকে গেলে যৌথ অধিবেশনের পথ খোলাই রয়েছে। আজ অর্থ-প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হাও বলেন, “লোকসভায় পাশ হওয়া বিলগুলি রাজ্যসভায় আটকে গেলে সরকার যৌথ অধিবেশনে যেতে প্রস্তুত।”
প্রস্তুত হচ্ছে বিরোধীরাও। এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যেও দফায় দফায় আলোচনা চলছে। কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাজ্যসভায় সংশোধনী বিলটি পেশ করাতেই বাধা দেবেন তাঁরা। অতীতে যে রকম বিল ছিঁড়ে, হট্টগোল করে রাজ্যসভায় মহিলা বিল পেশ করার চেষ্টা ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছিল, হয়তো তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy