হাবিবকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি টুইট করেছেন কেরলের রাজ্যপাল।
দেশের সব প্রান্তেই নিন্দার ঝড় বইছে। অশীতিপর ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবকে ‘ভুয়ো ঘটনায় অভিযুক্ত’ করার তীব্র নিন্দা করল ‘আলিগড় সোসাইটি অব হিস্ট্রি অ্যান্ড আর্কিয়োলজি’ (আশা)-ও।
শনিবার কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের ৮০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্য করেন। তার প্রতিবাদ করেন হাবিব। রাজ্যপালের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোয় কয়েক জন প্রতিবাদকারীকে আটক করে পুলিশ। পরে রাজ্যপালের দফতর থেকে টুইট করে জানানো হয়, হাবিব রাজ্যপালকে শারীরিক ভাবে বাধা দিতে গিয়েছিলেন। যদিও অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ভিডিয়োয় তার প্রমাণ মেলেনি।
আলিগড়ের ইতিহাস গবেষকদের সংগঠন আজ বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’-সহ নানান অবমাননাকর মন্তব্য করেন আরিফ। তার পরেই গোলমাল শুরু হয়। ইতিহাস কংগ্রেসের বিদায়ী সভাপতি হিসেবে হাবিব চেয়ার থেকে উঠে কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপীনাথ রবীন্দ্রনকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে যাচ্ছিলেন। রাজ্যপালের এডিসি ও নিরাপত্তারক্ষী সেই সময় হাবিবকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক হাবিব গণতন্ত্র রক্ষায় যে-ভাবে প্রতিবাদ করেছেন, তা নিয়ে গর্বিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা।
কেরলের রাজ্যপালের টুইটে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, তিনি কোনও বিদ্বেষমূলক কথা বলেননি। পূর্ববর্তী বক্তাদের কথার সূত্র ধরেই রাজ্যপাল হিসেবে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব মেনে পাল্টা মন্তব্য করেছিলেন। আরিফ আজ কেরলের মুখ্যসচিব টম জোসকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজভবন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব ইতিমধ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন।
আরও পড়ুন: এনআরসিতে এনপিআর তথ্য! গুলিয়ে দিলেন রবিশঙ্করও
পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত, ৮৮ বছরের ইতিহাসবিদ হাবিবের প্রতি এমন ব্যবহার নিয়ে ইতিহাস গবেষকেরা ক্ষুব্ধ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় মঞ্চের সামনে উপস্থিত ইতিহাস কংগ্রেসের এক প্রবীণ সদস্যা বলেন, ‘‘একটি বৃদ্ধ মানুষ নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে রাজ্যপালকে শারীরিক ভাবে বাধা দিলেন এবং সেটা কারও চোখে পড়ল না, তা কী ভাবে সম্ভব!’’ পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের সম্পাদক আশিসকুমার দাস আজ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, “হাবিবকে রাজ্যপালের দেহরক্ষীরা যে-ভাবে ধাক্কা দিয়েছে এবং রাজ্যপালের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের পুলিশ যে-ভাবে হেনস্থা করেছে, তার প্রতিবাদ করছি।”
বামপন্থী ইতিহাসবিদ হাবিব দীর্ঘদিন ধরেই গেরুয়া শিবিরের নিশানায় রয়েছেন। শনিবারের ঘটনার পরে যে-ভাবে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে তাঁকে গুন্ডা আখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে, তাতে গোটা ঘটনার পিছনে পরিকল্পনার ইঙ্গিতও পাচ্ছেন অনেকে। রবিবার বিকেলে এক দল আরএসএস-সমর্থক কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে জড়ো হন। পুলিশ গিয়ে মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। গেটের বাইরে দাঁড়িয়েই রাজ্যপালের পক্ষে এবং হাবিব তথা ইতিহাস কংগ্রেসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন সঙ্ঘ-সদস্যেরা। পরে ক্যাম্পাসের ভিতরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া। তাতে পা মেলান ইতিহাস সম্মেলনের কিছু প্রতিনিধিও। ওই প্রতিনিধিদের অনেকেই বলছেন, দেশের প্রগতিশীল ইতিহাসচর্চার সংগঠন হিসেবে ইতিহাস কংগ্রেস সুপ্রসিদ্ধ। দেশের প্রথম সারির ইতিহাসবিদেরা এর নেতৃত্ব দেন। নানান উপায়ে মিথ্যা অভিযোগ করে এই সংগঠনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy